আগ্রহের ত্রিবলয় কি?
সংবাদ প্রতিবেদন রচনায় যেমন ‘ষড়-ক’ ভিত্তি ধরে তা সন্নিবেশ করা হয়, তেমনি ফিচার লেখার ক্ষেত্রে “আগ্রহের ত্রিবলয়” এর কথা মনে রাখতে হয়।
ফিচার লেখা সম্পূর্ণ সার্থক হয় যখন পাঠকের মনোযোগ আকর্ষিত হয় এবং এই ফিচার প্রকাশিত হয়। একজন পাঠককে ফিচারের বিষয়বস্তুর উপর ধরে রেখে ঐ অনুযায়ী কাজ করাতে বাধ্য করতে পারাটাই লেখকের দক্ষতা।
শুধু লেখকের দক্ষতাই নয়। একটি ফিচার গণমাধ্যমে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে লেখকের তিনটি বিষয় মাথায় রাখতে হয়। H. M. Patterson লিখিত ‘Writing and Selling Feature Articles’ বইতে সার্থক ফিচার লেখার তিনটি বিষয়ের (Three Rings of Interest) কথা বলা হয়েছে। এগুলোই একত্রে আগ্রহের ত্রিবলয় নামে পরিচিত।
নিম্নে আগ্রহের ত্রিবলয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ক) সম্পাদকীয় নীতি
ফিচার লেখককে সর্বাগ্রে ‘পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতির’ বিষয়টি মনে রাখতে হয়। কারণ প্রতিটি পত্রিকা, সংবাদ সংস্থা বা ফিচার সংস্থার জন্য আলাদা আলাদা সম্পাদকীয় নীতি থাকে। যাকে পত্রিকার নীতি বলা হয়। পত্রিকার নীতির সাথে সাংঘর্ষিক কোন ফিচার প্রকাশ করা হয় না। তাই লেখককে সম্পাদকীয় নীতি মাথায় রেখে ফিচার লিখতে হয়।
একটি ফিচার সম্পাদকীয় নীতির অনুকূলে ও সম্পাদকের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হয়। নতুবা ফিচারটি অনেক শ্রমের ফসল হলেও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে না। সম্পাদকীয় নীতি পরিপন্থী কোন ফিচার ছাপাও হবে না এবং পাঠকের হাতেও পৌঁছাবে না।
আরও পড়ুন: ফিচার লেখার পিরামিড কাঠামো
খ) পাঠকের সম্ভাব্য আগ্রহ
একটি ফিচার লেখার পূর্বে পাঠকের নিকট ফিচারটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে লেখককে ভাবতে হয়। পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেই ফিচার সফল হয়ে উঠে না। বিষয়টির প্রতি পাঠকের আগ্রহ কিংবা ফিচারটি প্রকাশিত হলে পাঠকের নিকট কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে অথবা ফিচারটি পাঠকের মনে জায়গা করে নিতে পারবে কিনা এসব বিষয়ে লেখকের নিকট একটি অনুমান থাকতে হবে।
একজন ফিচার লেখক স্বাভাবিকভাবেই সময়, সুযোগ ও কম খরচের উপর ভিত্তি করে ফিচারের বিষয়টি নির্বাচন করবেন। যদি লেখক সামনের ২ দিন সরকারি ছুটি কাটানোর সুযোগ দিতে চান পাঠককে, তবে তিনি অবশ্যই আশপাশের কোন দর্শনীয় স্থান নিয়ে লিখবেন। যদি পাঠকের দীর্ঘকালীন ছুটি থাকে এবং তা যদি হয় বছরের শেষ সময়ে, তাহলে সিলেট, কক্সবাজার, সুন্দরবন, খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালি ইত্যাদি দূর জায়গা সম্পর্কে লিখবেন।
গ) পাঠকের প্রকৃত আগ্রহ
এই স্তরে এসে ফিচার লেখক জনগণের মতামত, সাক্ষাৎকার, সমীক্ষা প্রভৃতির মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্যায়ে ফিচার লেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। পাঠকের প্রকৃত আগ্রহ বুঝতে হলে লেখকে সমীক্ষা ও সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদগুলোর প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। চলমান কিংবা ঐতিহাসিক কোন ঘটনার যোগসাজশ থাকলেও ফিচারের বিষয় হতে পারে।
মতামত ও সমীক্ষার মাধ্যমে লেখক মোটামোটি নিশ্চিত হয়ে পড়েন বিষয়টি নির্ধারণের ব্যাপারে। পত্রিকার মোট পাঠকের কত অংশ এই ফিচারটি পড়বেন এবং কতজন নতুন পাঠক আকৃষ্ট হবেন, এই বিষয়ে লেখক এই স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
একজন ফিচার লেখকের জন্য ‘আগ্রহের ত্রিবলয়’ পরস্পর বিচ্ছিন্ন কোন নির্দেশনা হতে পারে না। এই তিনটি বলয়ের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ ও সফল ফিচার রচনা করা যায় যেখানে থাকবে পাঠকের বিনোদন, দিক নির্দেশনা তথ্য ও প্রেষণার উপাদান।