Home » মানবাধিকার কি? জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ধারা সমূহ
সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র

মানবাধিকার কি? জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ধারা সমূহ

by TRI

মানবাধিকার

মানবাধিকার হল জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ এবং ভাষা-নির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। এটি আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, “Human rights could be generally defined as those rights which are inherent in our nature and without which we cannot live as human beings.” অর্থাৎ, “মানবাধিকার বলতে সেসব অধিকারকে বোঝায় যা মানুষের প্রকৃতির সাথে জড়িত এবং এটা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না।”

১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ “সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র” অনুমোদন করে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত জাতিসংঘ ২০০টিরও বেশি মানবাধিকারসংক্রান্ত চুক্তি, কনভেনশন ও সনদ অনুমোদন করেছে। এভাবে মানবাধিকার ধারণাটি সারা বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র

১৯৪৮ সালের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার আগে মানবাধিকার সংক্রান্ত অনেক ঘোষণাপত্র ও চুক্তি হয়েছে। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো ব্রিটিশ ম্যাগনাকার্টা (১২১৫), মানুষ ও নাগরিক অধিকারসংক্রান্ত ফ্রান্স ঘোষণাপত্র (১৭৮১) এবং আমেরকিার বিল অব রাইটস (১৭৯১) ইত্যাদি।

আরও পড়ুন:   জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর।

অবশেষে ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত ও ঘোষিত হয়। সেই থেকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ১০ই ডিসেম্বর পালিত হয়ে আসছে।

নিচে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ধারা সমূহ উল্লেখ করা হলো-

ধারা-১

সব মানুষই স্বাধীন অবস্থায় এবং সমমর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অতএব সকলের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ আচরণ করতে হবে।

ধারা-২

জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ-নির্বিশেষে সকলেই ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সব অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে।

ধারা-৩

প্রত্যেকেরই জীবনধারণ, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার থাকবে।

ধারা-৪

কাউকে দাস হিসেবে বা দসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা চলবে না। সব প্রকার দাসপ্রথা ও দাস ব্যবসা নিষিদ্ধ।

ধারা-৫

কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর ব্যবহার ও কোনো প্রকার শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করা চলবে না।

ধারা-৬

আইনের চোখে প্রত্যেকেরই সর্বত্র মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি লাভের অধিকার রয়েছে।

ধারা-৭

আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং সকলেই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী।

ধারা-৮

কারও মৌলিক অধিকার খর্ব করা হলে উক্ত বৃক্তি বিচারালয়ের মাধ্যমে যথার্থ বিচার লাভের অধিকারী।

ধারা-৯

কাউকে বিনা কারণে গ্রেফতার, আটক বা নির্বাসন দেওয়া যাবে না।

ধারা-১০

প্রত্যেক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারবে এবং এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ সুবিচার পাওয়ার অধিকারী হবে।

ধারা-১১

অপরাধ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করতে পারবে। কেউ দোষী প্রমাণিত না হলে তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।

ধারা-১২

গৃহের নিরাপত্তা ও যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার সকলের থাকবে। কারও গৃহে বেআইনভাবে হামলা করা যাবে না এবং কারও গোপনীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।

ধারা-১৩

প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজ দেশের সর্বত্র স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও বসবাস করতে পারবে। প্রত্যেকেরই নিজ দেশ বা যেকোনো দেশ ছেড়ে যাওয়ার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার থাকবে।

ধারা-১৪

নির্যাতনের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য অন্য রাষ্ট্রের আশ্রয় গ্রহণের অধিকার রয়েছে।

ধারা-১৫

প্রত্যেকেরই জাতয়িতার অধিকার রয়েছে। কাউকে যথেচ্ছভাবে তার জাতীয়তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

ধারা-১৬

জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরিবার গঠন করতে পারবে। বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদে নারী-পুরুষ উভয়েরেই সমান অধিকার থাকবে।

ধারা-১৭

প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার রয়েছে। কাউকে জোরপূর্বক তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

ধারা-১৮

প্রত্যেকেরই চিন্তু, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। সবাই নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারবে। সকলের ধর্ম ও বিশ্বাস পরিবর্তনের অধিকার রয়েছে।

ধারা-১৯

প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে।

ধারা-২০

প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হওয়ার অধিকার রয়েছে। কাউকে রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা অন্য কোনো পেশাভিত্তিক সংস্থার সদস্য হওয়ার জন্য বাধ্য করা যাবে না।

ধারা-২১

সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সকলের নিজ রাষ্ট্রের সরকার গঠনের অধিকার থাকবে। সকলেই নিজ দেশের সরকারি চাকরি লাভের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাবে।

ধারা-২২

সমাজের সদস্য হিসেবে সকলের সামাজিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে।

ধারা-২৩

প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনভাবে যেকোনো পেশা বা বৃত্তি গ্রহণ করার অধিকার ও উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভের অধিকার রয়েছে। বেকারত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ ও শ্রমিক সংঘ গঠন করার অধিকার থাকবে।

ধারা-২৪

প্রত্যেকেরই কর্মজীবনে বিশ্রাম ও অবকাশ এবং কার্য থেকে অবসর ও বেতনসহ ছুটি ভোগের অধিকার থাকবে।

ধারা-২৫

প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার উপযাগী খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসা লাভের অধিকার থাকবে। এছাড়া বেকারত্ব, অসামর্থ্য, অসুস্থতা, বৈধব্য, বার্ধক্য কিংবা অন্যান্য অপারগতার ক্ষেত্রে পূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার লাভ করবে। মা ও শিশুর বিশেষ যত্ন লাভের অধিকার থাকবে।

ধারা-২৬

সকলের শিক্ষা লাভের অধিকার রয়েছে। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও কাজের যোগ্যতা অর্জনের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের উচ্চশিক্ষা লাভে সকলের অধিকার থাকবে।

ধারা-২৭

প্রত্যেকেই সমাজের সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবে। প্রত্যেক ব্যক্তি শিল্প ও বিজ্ঞানের বিকাশে সুবিধা লাভের পূর্ণ অধিকার সমভাবে ভোগ করবে।

ধারা-২৮

সন্ত্রাস, অশান্ত ও কলহপূর্ণ বিশ্বে জাতিসংঘ ঘোষিত মৌলিক মানবিক অধিকারসমূহ সব সময় উপভোগ করা সম্ভব নয় বলে সকলের জন্য সামাজিক ও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার অধিকার থাকবে।

ধারা-২৯

ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ লাভের জন্য প্রত্যেককে অধিকার ভোগের সাথে সাথে তার সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালন করতে হবে। কিন্তু জাতিসংঘের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী কোনো অধিকার ও স্বাধীনতা কেউ ভোগ করতে পারবে না।

ধারা-৩০

এ ঘোষণায় উল্লেখিত কোনো বিষয়কে এরূপভাবে ব্যাখ্যা করা চলবে না যাতে মনে হয়, এ ঘোষণার অন্তর্ভূক্ত কোনো অধিকার বা স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে কোনো রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তিবিশেষের আত্মনিয়োগের অধিকার রয়েছে।

 

তথ্যসূত্র:

Universal Declaration of Human Rights

Related Posts