Home » ফিচার লেখার পিরামিড কাঠামো

ফিচার লেখার পিরামিড কাঠামো

by TRI

সংবাদ সাধারণত তথ্যবহুল ও উল্টো পিরামিড কাঠামোতে লেখা হয়। ফিচার লেখার নির্দিষ্ট কোন কাঠামো না থাকলেও সাধারণের সুবিধার্থে একটি জনপ্রিয় কাঠামো আবিষ্কৃত হয়, পিরামিড কাঠামো। বর্তমানে পিরামিড কাঠামোই সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ফিচার লেখার প্রচলিত কাঠামো।

পিরামিড কাঠামো

ফিচার লেখার এই কাঠামো দেখতে পিরামিডের মতো এবং পিরামিড স্টাইলে লেখা হয় বলে এর নামকরণ পিরামিড কাঠামো করা হয়েছে। এখানে প্রথমে পাঠকের অনুভূতিতে আঘাত করা হয়। পাঠক যখন চমকে উঠে তখন ধীরে ধীরে পাঠককে বিষয়টির প্রতি আকৃষ্ট করা হয়। এবং সবশেষে পাঠককে ফিচারের প্রতি আচরণে বাধ্য করা হয়।

মূলত একটি ফিচারের উদ্দেশ্য হলো পাঠককে প্রভাবিত করে সে অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা। পিরামিডের সর্বনিম্নে যেমন গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ লুকিয়ে রাখা হয়, তেমনি পিরামিড কাঠামো অনুযায়ী পাঠককে সব শেষে এসে প্রভাবিত করা হয়। এবং এর মাধ্যমেই একটি ফিচার সফল ও পূর্ণাঙ্গ হয়ে উঠে।

নিম্নে পিরামিড কাঠামো দেখানো হলো-

ফিচার লেখার পিরামিড কাঠামো

উক্ত পিরামিড কাঠামোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

১) Apex (আগ্রহের সর্বোচ্চ চূড়া)

২) Fiction Lead (অনুমিত সূচনা)

৩) Body (বিষয়বস্তু)

৪) Conclusion (আকর্ষণীয় সমাপ্তি)

আরও পড়ুন:  একটি সার্থক ফিচার লেখার ষড়মাত্রিক নীতি বা কৌশলসমূহ কি কি?

নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১) আগ্রহের সর্বোচ্চ চূড়া (Apex)

ফিচার লেখার শুরুতেই পাঠকের অনুভূতি সর্বোচ্চ চূড়ায় আঘাত করতে হবে। এমনভাবে Apex নির্ণয় করতে হবে যা দেখে পাঠক মনোযোগ নিবন্ধ করতে বাধ্য হয়। সর্বোপরি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম একটি Apex নির্মাণ করতে হবে।

কাঠামোর এই অংশে সাধারণত পাঠক কোন ঘটনা বা প্রসঙ্গের আকর্ষণীয় একটি বিশেষ তথ্যচিত্রের বর্ণনা খুঁজে পান। এই অংশে তথ্য থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। হতে পারে তুলনামূলক কিংবা সাদৃশ্য মূলক। Apex এর সূল কথা হলো- To catch attention, it must be sharp, terse and evident. অর্থাৎ ‘মনোযোগ আকর্ষণের জন্য একটি অবশ্যই তীক্ষ্ণ, সংক্ষিপ্ত, সুস্পষ্ট ও যুক্তিযুক্ত হতে হবে।

Apex ফিচারের প্রথম বাক্য অথবা প্রথম ও দ্বিতীয় বাক্য মিলিয়ে হতে পারে। এই বাক্যে ৪-৬টি শব্দ থাকাটাই আদর্শ।

Apex এ যে বিষয়গুলো থাকা আবশ্যক, তা হলো-

ক) Appeal

খ) Readers Interest

গ) Impression

ঘ) Editorial Policy

ঙ) Aim/Purpose

২) অনুমিত সূচনা (Fiction Lead)

অনুমিত সূচনা অংশে সাধারণত আকর্ষণীয় সংলাপ, উদ্ধৃতি, ঘটনা, তথ্যচিত্র এবং রসাত্মক উপকরণসমূহ থাকতে পারে। Fiction Lead একজন পাঠককে Apex থেকে টেনে পরবর্তী ধাপ Body তে প্রবেশ করায়। Apex ও Body এর মাঝখানে সেতু বন্ধনের কাজ করে Fiction Lead.

Fiction Lead কে Second lead কিংবা Light openingও বলা যায়। এখানে ভাষার চাতুর্য্য ও দৃশ্যকল্প চলমান গল্পটাকে যুক্তির মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠতার প্রমাণ দেয় Fiction Lead. সাধারণত ২/১ বাক্যের মধ্যেই Fiction Lead শেষ হয়।

৩) বিষয়বস্তু (Body)

ফিচারের মূল অংশ Body. এই অংশে বিষয়বস্তুর বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। যে গল্প Apex এর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল, এখানে থাকবে তার তথ্য ও প্রমাণাদি সহকারে মতামত অথবা পর্যবেক্ষণধর্মী ব্যাখ্যা। একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ যা লেখকের উদ্দশ্যকে সফল করে তুলবে। তার উপর ভিত্তি করে গল্প এগিয়ে যাবে। তবে লেখককে মনে রাখতে হবে যে, পাঠক যেন বর্ণনা পথে হোঁচট না খায়।

৪) আকর্ষণীয় সমাপ্তি (Conclusion)

ফিচার Apex এর মাধ্যমে যেভাবে শুরু হয়েছিল, সমাপ্তি হবে ঠিক একইভাবে। এই সমাপ্তিতে Apex এর মূলভাব থাকবে। এই অংশে গল্পের প্রথম অংশের সাথে মিলিয়ে পাঠককে বিষয়টির প্রতি আমন্ত্রণ জানানো হয়। লেখককে এই স্তরে এসে প্রচুর দক্ষতার সাথে পাঠককে কাজ করতে বাধ্য করতে হয়।

একটি ফিচার এর সমাপ্তিকে বলা হয় Base line of the feature. ফিচারের সমাপ্তিটা হলো ‘খাবারের শেষে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার’ মতন। পাঠক Apex এবং Conclusion এর মাঝে একটি চমৎকার সমন্বয় খুঁজে পান। এবং সে অনুযায়ী আচরণ করতে বাধ্য হয়ে পড়েন।

Related Posts