যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কি ?
যুক্তরাষ্ট্র বলতে সাধারণত স্বতন্ত্র কয়েকটি রাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতীয় রাষ্ট্র গঠন করাকে বোঝায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Federation’। ‘Federation’ শব্দটি ল্যাটিন ‘Foedus’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘সন্ধি’ বা ‘মিলন’। অর্থাৎ, শব্দগত অর্থে যুক্তরাষ্ট্র বা ‘Federation’ হলো কতিপয় রাষ্ট্রের সন্ধি বা মিলনের ফলে সৃষ্টি হওয়া রাষ্ট্র। অতএব, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলতে কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক গঠিত সরকারকে বোঝায়।
অধ্যাপক ডাইসির (Prof. Dicey) মতে, “A political contrivance intended to reconcile national unity with the maintenance of state right.” অর্থাৎ, “জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে অঙ্গরাজ্যের অধিকারের সামঞ্জস্য বিধানের উদ্দেশ্যে গঠিত রাজনৈতিক সংগঠনকেই যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে।”
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার কি? রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য আলোচনা
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গঠন প্রকৃতি ও শাসনব্যবস্থা বিশ্লেষণ করলে কতকগুলো বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। নিচে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-
১। দুই ধরনের সরকার
যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনে দুই ধরনের সরকার বিদ্যমান থাকে। যথা- ১) কেন্দ্রীয় সরকার ও ২। প্রাদেশিক সরকার। সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া হয়।
২। দ্বৈত নাগরিকত্ব
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রত্যেক নাগরিক একাধারে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের নাগরিক। উভয় সরকারের কাছে নাগরিকদের যেমন অধিকার আছে, তেমনি আবার দুটি সরকারের প্রতিও দায়িত্ব পালন ও আনুগত্য স্বীকার করতে হয়।
৩। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের কেন্দ্রীয় আইনসভা সাধারণত দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হয়ে থাকে। উচ্চকক্ষ সমগ্র জাতির এবং নিম্নকক্ষ স্ব স্ব অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। উদাহরণস্বরূপ ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলা যায়।
৪। যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারগুলোর মধ্যকার বিরোধ মীমাংসার জন্য এ আদালত গঠিত হয়। এছাড়া এ আদালত সংবিধানের অভিভাবক ও রক্ষাকারী হিসেবে সংবিধানের যুগোপযোগী ব্যাখ্যা প্রদান করে। এটি একটি সর্বোচ্চ বিচারালয়।
৫। দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সংবিধান সাধারণত লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় হয়ে থাকে। সাংবিধানিকভাবে বণ্টিত ক্ষমতাকে কোনো সরকার যাতে এককভাবে পরিবর্তন করে নিজ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য সংবিধানের পরিবর্তনপদ্ধতি জটিল হয়ে থাকে।
৬। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রদেশগুলো স্বায়ত্তশাসনের অধিকারী। তবে প্রদেশসমূহ পৃথক আইন প্রণয়ন ও আইনসভা পরিচালনায় ক্ষমতা ভোগ করলেও তাদের হাতে কোনো সার্বভৌম ক্ষমতা থাকে না।
৭। দ্বৈত আইন
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় দুটি পর্যায়ে আইন প্রণীত থাকে। একটি কেন্দ্রীয় আইন এবং অন্যটি রাজ্য আইন। সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা অনুসারে কেন্দ্র ও রাজ্য নিজ নিজ আইন প্রণয়ন করে। উভয় সরকারের প্রণীত আইনই নাগরিকদের মেনে চলতে হয়।