Home » কপিরাইট ও কপিরাইট আইন: জানুন নিবন্ধন পদ্ধতি

কপিরাইট ও কপিরাইট আইন: জানুন নিবন্ধন পদ্ধতি

by TRI

কপিরাইট কি?

লেখক বা শিল্পী কর্তৃক তার সৃষ্টকর্মের ওপর একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থায়ী আইনগত অধিকারকে কপিরাইট বলে। এটি আইনগত ধারণা। যার উদ্দেশ্য হলো নকল করা থেকে প্রকৃত লেখক, শিল্পী বা সৃষ্টকর্মের স্বত্বাধিকারীর স্বার্থ সুরক্ষা করা; যা না করা হলে এর স্বত্বাধিকারী বা মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কপিরাইটের ধারণা প্রথমত ছাপা বা মুদ্রণের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও বর্তমানে যে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিকর্মের ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ হয়ে থাকে। বই, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, নাটক, চলচ্চিত্র, নৃত্য, সংগীত কৌশল, অডিও রেকর্ডিং, সাউন্ড রেকর্ডিং, শিল্প সংক্রান্ত নকশা, ফটোগ্রাফ্স, স্থাপত্য শিল্পকর্ম, সফটওয়্যার ইত্যাদি বৃদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ সুরক্ষা কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত।

কপিরাইট আইন

বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিকর্মের ওপর স্বত্বগ্রহীতার মৌলিক অধিকার বা স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কপিরাইট আইন উৎপত্তি লাভ করেছে। ১৬৬২ সালে বৃটেনের রাজা দ্বিতীয় চার্লস বই লেখকদের আইনগত অধিকার সংরক্ষণের জন্য পার্লামেন্টে সর্বপ্রথম The Press Act পাস করেন। এতে নিবন্ধিত বইয়ের তালিকা সংরক্ষণের বিধান ছিল।

১৭১০ সালে লেখকসহ বিভিন্ন শিল্পকর্মের মালিক বা শিল্পীদের উক্ত কর্মের ওপর ব্যক্তিগত অধিকার সংরক্ষণের জন্য The British Statute of Anne 1710 পাস করা হয়। এতে লেখকদের পাশাপাশি বই প্রকাশকদের একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অধিকার সংরক্ষণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ লেখক বা শিল্পকর্মের মালিক তার অধিকার অন্যের নিকট হস্তান্তর করতে বা বিক্রয় করতে পারবে- এই বিধানও এতে সন্নিবেশিত ছিল।

১৭১০ সালে পাস করা এই আইনকে বর্তমানেকালের কপিরাইট আইনের ভিত্তি বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে ২০০০ সালের কপিরাইট আইন (২০০৫ সালের সংশোধনী) ও কপিরাইট বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।

আরও পড়ুন:   ট্রেডমার্ক কি? ট্রেডমার্ক নিবন্ধন পদ্ধতি আলোচনা কর।

কপিরাইট নিবন্ধন

প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করে প্রণেতা বা আবেদনকারীর নামসহ সৃষ্টিকর্মের নাম ও বিবরণাদি কপিরাইট রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করার কাজকেই কপিরাইট নিবন্ধন বলে। কপিরাইট নিবন্ধকের অফিসে আবেদন করে আইনের ধারা অনুযায়ী এরূপ নিবন্ধন কর্ম সম্পাদন করতে হয়। এরূপ নিবন্ধন বিষয়ে ২০০০ ও ২০০৬ সালের আইনের বিধিমালায়ে উল্লেখিত বিধানাবলি নিম্নরূপ-

কে নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন?

কোনো কর্মের প্রণেতা, প্রকাশক বা কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী বা এতে স্বার্থ রয়েছে এমন ব্যক্তি সৃজনশীল কর্মটি নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান পূর্বক নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদন দাখিলের পদ্ধতি

আবেদনকারীকে অত্র বিধিমালার ২য় তফসিলে বর্ণিত ফরম পূরণপূর্বক প্রয়োজনীয় ফি সহ তিন প্রস্থে দাখিল করতে হবে। প্রথম স্বত্বাধিকারীর ক্ষেত্রে এ ফি-এর পরিমাণ ১,০০০ (এক হাজার) টাকা। তবে প্রকাশক বা অন্যদের জন্য লাইসেন্স বা স্বত্বাধিকার নিবন্ধনের বেলায় ফি-এর ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে।

আবেদনপত্রের বিষয়বস্তু

আবেদনপত্রে নিম্নোক্ত বিষয়বস্তু উল্লেখ করতে হবে-

  • আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা ও জাতীয়তা
  • কপিরাইট আবেদনকারীর স্বার্থের ধরন
  • কর্মটির প্রকৃতি ও বিবরণ
  • কর্মের শিরোনাম
  • কর্মের ভাষা
  • লেখকের বা প্রণেতার নাম, ঠিকানা ও জাতীয়তা
  • লেখক বা প্রণেতা মৃত হলে মৃত্যুর তারিখ
  • ইতোমধ্যে কর্মটি প্রকাশিত হয়েছে কি না
  • কর্মটির প্রথম প্রকাশনার বছর, দেশ, প্রকাশকের নাম, ঠিকানা ও জাতীয়তা,
  • পরবর্তী প্রকাশনার ক্ষেত্রে প্রকাশের বছর, দেশ, প্রকাশকের নাম, ঠিকানা ও জাতীয়তা
  • কর্মটি শিল্পকর্ম হয়ে থাকলে তার মূল কর্মটি কোথায় রয়েছে এবং কাদের দখলে রয়েছে তাদের নাম, ঠিকানা ও জাতীয়তা এবং
  • মন্তব্য যদি থাকে।

স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে আবেদনপত্রের কপি প্রেরণ

আবেদনকারীকে এরূপ আবেদনের কপি স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষ যদি থেকে থাকে তবে তাদের নিকট পাঠাতে হবে। যাতে উক্ত পক্ষ বিষয়টি জানতে পারে এবং এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তা নিবন্ধক বরাবর উপস্থাপন করতে পারে। যেমন- একজন গীতিকার গান রচনা করেছেন। সুরকার ও গায়ক অন্য ব্যক্তি হতে পারেন। এক্ষেত্রে গীতিকার কপিরাইটের আবেদন করলে তা অন্য দু’পক্ষকে জানাতে হবে।

আবেদনপত্র মূল্যায়ন ও নিবন্ধন সনদ প্রদান

আবেদন প্রাপ্তির পর নিবন্ধক তার বিবেচনায় উপযু্ক্ত এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা বা খোঁজ-খবর নেবেন। অতঃপর আবেদনপত্র গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হলে কপিরাইট রেজিস্ট্রারে কর্মের নাম, শিরোনাম, গ্রন্থকার, প্রণেতা, প্রকাশক এবং কপিরাইটের স্বত্বাধিকারীগণের নাম, ঠিকানা, জাতীয়তাসহ প্রয়োজনীয় সকল বিষয় লিপিবদ্ধ করবেন এবং আবেদনকারীকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করবেন।

Related Posts