ত্রিশক্তি চুক্তি জার্মান চ্যান্সেলর বিসমার্ক কর্তৃক অস্ট্রিয়া ও ইতালির সাথে সম্পাদিত কৌশলগত নিরাপত্তামূলক চুক্তি বা আঁতাত। বিশ্বে জার্মানির অবস্থান সুদৃঢ় করতে বিসমার্ক নানা কূটকৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিলেন। নিজ রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে করেছিলেন আঁতাত। ত্রিশক্তি আঁতাতও সেই কূটকৌশলের একটা অংশ।
ত্রিশক্তি চুক্তি
মধ্য ইউরোপের ইতিহাসে ত্রিশক্তি চুক্তি স্বাক্ষর একটা স্মরণীয় ঘটনা। ১৮৮২ সালে বিসমার্কের উদ্যোগে সম্পাদিত হয় এ চুক্তি। ফ্রান্স-প্রুশিয়া যুদ্ধে জয়লাভ করার পর জার্মানির প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ক জার্মানিকে নিরাপদ করার স্বার্থে অস্ট্রিয়া ও ইতালির সাথে মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তিনি কৌশলে ফ্রান্সকে উত্তর আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপনে উৎসাহিত করেন। ১৮৮১ সালে ফ্রান্স তিউনিস দখল করলে এর প্রতিবাদে ইতালি অস্ট্রো-জার্মান চুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত হয়। অস্ট্রো-জার্মান চুক্তিতে ইতালি অংশগ্রহণ করলে ১৮৮২ সালে এ চুক্তি ত্রিশক্তি চুক্তিতে রূপ লাভ করে যা ১৯১৪ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল।
আরও পড়ুন: জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে মুক্তিদাতা জার বলা হয় কেন?
ত্রিশক্তি চুক্তির গুরুত্ব
১. চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়া আত্মরক্ষার জন্য পরস্পরকে প্রয়োজনে সামরিক সাহায্য দানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
২. ফ্রান্সের আক্রমণের বিরুদ্ধে ইতালি জার্মানিকে সাহায্য দানে এগিয়ে আসে। এতে জার্মান প্রধানমন্ত্রী বিসমার্কের কূটনৈতিক সাফল্য প্রতীয়মান হয়।
৩. ত্রিশক্তি চুক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও তিন-সম্রাট সংঘের মৈত্রী চুক্তি ইউরোপের রাজনীতিতে ফ্রান্সের বিচ্ছিন্নতা সম্পূর্ণ করে এবং ইউরোপে এক প্রবল শক্তিশালী জোটের প্রতিষ্ঠা করে।
ত্রিশক্তি চুক্তির নবায়ন
ত্রিশক্তি আঁতাত প্রথম পাঁচ বছরের জন্য সম্পাদিত হয়। ১৮৮৭ সালে তা পুনঃবিবেচনা করা হয় এবং একটা শর্ত সংযোজনের মাধ্যমে তা নবায়ন করা হয়। শর্তটি হলো অস্ট্রিয়া বা ইতালি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে বলকান এলাকার কোনো অংশ দখল করে নিবে না। ১৮৮০ এর দশকে বলকান এলাকাভূক্ত সার্বিয়া ও রুমানিয়া ত্রিশক্তি জোটের তাবেদার রাজ্যে পরিণত হয়। পরবর্তীতে এ চুক্তি ১৮৯১, ১৯০৩ ও ১৯১২ সালে পুনরায় নবায়ন করা হয়।