Home » ১৯৩৫ ভারত শাসন আইন ও এ আইনের বৈশিষ্ট্য

১৯৩৫ ভারত শাসন আইন ও এ আইনের বৈশিষ্ট্য

by TRI

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের পটভূমি

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়কে অসন্তুষ্ট করে। হিন্দু-মুসলিমের দাবিদাওয়া বিবেচনা করার লক্ষ্যে ১৯২৭ সালের শেষের দিকে ব্রিটিশ সরকার স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে একটি শাসনতান্ত্রিক কমিশন গঠন করে। এ সাইমন কমিশনে ভারতীয় কোনো সদস্য না থাকায় ভারতীয় জনগণ একে সম্পূর্ণ সাদা কমিশন (All White Commission) বলে সমালোচনা করে।

১৯২৯ সালে নেহেরু রিপোর্ট ও মুসলমানদের দাবিদাওয়াসংবলিত জিন্নাহর চৌদ্দ দফা এ দুই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব প্রকাশ করে। যুগপৎভাবে আইন অমান্য আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে।

ভারতের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা নিরসনে ভারত সরকার পর পর তিনটি গোলটেবিল বৈঠক করে। ব্রিটিশ সরকার গোলটেবিল বৈঠকের ফলাফল হিসেবে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। এ শ্বেতপত্রটি সংশোধন, পরীক্ষা ও পর্যালোচনার জন্য একটি যুক্ত কমিটি গঠন করা হয়।

যুক্ত কমিটি ১৯৩৪ সালের ২২শে নভেম্বর শ্বেতপত্রটির পরিবর্তিত ও সংশোধিত রিপোর্ট পেশ করে। ১৯৩৫ সালে এ রিপোর্টটি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে আলোচনা সাপেক্ষে ভারত শাসন আইনরূপে পাস হয়। ১৯৩৫ সালের ২রা আগস্ট ভারত শাসন আইন রাজকীয় অনুমোদন লাভ করে।

আরও পড়ুন:   বেঙ্গল প্যাক্ট কি? বেঙ্গল প্যাক্টের শর্তাবলি ও গুরত্ব আলোচনা কর

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্য

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় সেগুলো নিম্নরূপ-

১। সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে সর্বপ্রথম ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশসমূহ এবং দেশীয় রাজ্যের সমন্বয়ে সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করা হয়।

২। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন

প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের কেন্দ্রবিন্দুস্বরূপ। প্রাদেশিক বিষয়গুলো যেমন- কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় শাসন প্রভৃতির উপর প্রাদেশিক সরকারের কর্তৃত্ব স্বীকার করা হলেও বাস্তবে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে স্বায়ত্তশাসন ব্যাহত হয়।

৩। কেন্দ্রে দ্বৈতশাসন

এ আইনে কেন্দ্রে দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়গুলো সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত- এ দু’ভাগে বিভক্ত। ‘হস্তান্তরিত’ বিষয়গুলো দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের দ্বারা এবং ‘সংরক্ষিত’ বিষয়গুলো গভর্নর জেনারেলের উপদেষ্টামণ্ডলী দ্বারা পরিচালিত হতো।

৪। ক্ষমতা বণ্টননীতি

এ আইনের শাসন সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-

ক) কেন্দ্রীয় বিষয়, খ) প্রাদেশিক বিষয়, গ) যুগ্ম বিষয়।

৫। যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত

এ আইন দ্বারা সর্বপ্রথম একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ আদালত সংবিধানের ব্যাখ্যাদান, কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যকার বিবাদ মীমাংসা করতে পারত।

৬। গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা বৃদ্ধি

এ আইনে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান গভর্নর ও প্রাদেশিক গভর্নরগণ ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হন। তাদের হাতে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা, বিশেষ ক্ষমতা এবং ব্যক্তিগত বিচার-বুদ্ধিমূলক ক্ষমতা দেওয়া হয়।

৭। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা

এ আইনের দ্বারা কেন্দ্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রবর্তন করা হয়। উচ্চকক্ষের নাম ‘রাষ্ট্রীয়’ সভা এবং নিম্নকক্ষের নাম ‘ব্যবস্থাপক’ সভা।

Related Posts