মানবাধিকার রক্ষায় করণীয়
মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের যথেষ্ট করণীয় রয়েছে। নিচে সমাজ ও রাষ্ট্রে মানবাধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ বা করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরা হলো:
১. আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আলোকে রাষ্ট্রসমূহের সংবিধানের মধ্যে প্রয়োজনীয় সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে।
২. রাষ্ট্রের সংবিধানের সাথে মানবাধিকারের যেসব ধারা বা আইনের সাদৃশ্য রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
মানবাধিকার কি? মানবাধিকারের পরিধি ও তাৎপর্য আলোচনা কর |
৩. মানবাধিকার বিষয়ক অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইন ও কনভেনশন যেমন-সব ধরনের জাতিগত বৈষম্য বিলোপ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশন ১৯৬৫, জাতিগত বিভেদ দমন ও শাস্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন ১৯৭৩, নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ কনভেনশন ১৯৭৯, মানব পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশন ১৯৪৯, শিশু অধিকার সনদ ১৯৮৯, নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, অমানবিক, অবমাননাকর আচরণ এবং শান্তিবিরোধী কনভেনশন ১৯৮৪ বা কনভেনশন রয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তা গ্রহণ করা। এবং এরকম আরও যেসব আইন বা কনভেনশন রয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তা গ্রহণ করা।
৪. নাগরিকের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করা।
৫. নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যেমন-নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করা, নারী শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা, নারীর সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৬. নারীর উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় বাজেটে পৃথক বরাদ্দ দেওয়া এবং নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার জন্য নারী উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেওয়া। স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা।
৭. শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা। শিশুর শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা।
৮. সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করা। বিশেষ করে ধর্মীয় ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৯. স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা। মানবাধিকার সুরক্ষায় যেকোনো রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মানবাধিকার গুলো কি কি? – বিস্তারিত জেনে নিন |
১০. স্বাধীন ও শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশন গঠন করা।
১১. নারী ও শিশু নির্যাতন দমনে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও সেসব আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ (বাস্তবায়ন) করা।
১২. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ থেকে গণমাধ্যমকে মুক্ত রাখা।
১৩. মানবাধিকার রক্ষায় শিক্ষা যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। তাই শিক্ষার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১৪. দারিদ্র্য দূরীকরণ ও মানবসম্পদ উন্নয়নে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১৫. যেসব আইন মানবাধিকারের প্রতি সংঘাতপূর্ণ সেসব আইনের সংস্কার করা।
১৬. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১৭. মানবাধিকার বিষয়ে সব মহলের সচেতনতা সৃষ্টিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সবশেষে বলা যায়, মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য যে সুপারিশমালা তুলে ধরা হলো তা কার্যত সুশাসনের দিকেই ইঙ্গিত করে। মানবাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সুশাসনের বাস্তবায়ন তাই একান্ত অপরিহার্য।
মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের মধ্যে পার্থক্য কি কি? |