Home » মানবাধিকার গুলো কি কি? – বিস্তারিত জেনে নিন
মানবাধিকার গুলো কি কি

মানবাধিকার গুলো কি কি? – বিস্তারিত জেনে নিন

by TRI

মানবাধিকার গুলো কি কি – তা অনেকেই জানতে চান। গুগলে সার্চ করে দেখলাম মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র বাদে এ সম্পর্কিত কোনো লেখা নেই। অথচ এগুলো প্রত্যেক ব্যক্তির জানা থাকা খুবই প্রয়োজনীয়। তাই এই লেখাটির মাধ্যমে মানবাধিকার গুলো অনলাইনে দিয়ে রাখলাম। যাতে যে কেউ খুব সহজে এগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। চলুন জেনে নিই এগুলো সম্পর্কে।

মানবাধিকার গুলো কি কি?

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বিশ্বমানবতার জন্য সর্বজনীন মানবাধিকার বিষয়ক এক ঐতিহাসিক দলিল অনুমোদন করে। এর শিরোনাম ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র‘ (Universal Declaration of Human Rights.)। তখন থেকে জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলো প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর দিনটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস (Human Rights Day) হিসেবে উদযাপন করে আসছে। জাতিসংঘের ঐ ঘোষণাপত্রে একটি প্রস্তাবনা এবং ৩০টি ধারা রয়েছে।

মানবাধিকার কি? মানবাধিকারের পরিধি ও তাৎপর্য আলোচনা কর

প্রস্তাবনার শুরুতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও শান্তির ভিত্তি হচ্ছে সব মানুষের সহজাত মর্যাদা ও সব অবিচ্ছেদ্য অধিকারের স্বীকৃতি।’ এ স্বীকৃতি নিশ্চিত করা হচ্ছে জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রটির অন্যতম মূল লক্ষ্য। এর ৩০টি ধারার মধ্যে ১ ও ২ নং ধারার ব্যাখ্যাই হচ্ছে মানবাধিকার। ৩ থেকে ২১ নং ধারায় মানুষের নাগরিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ: ২২ নং থেকে ২৭ নং ধারায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ এবং ২৮ থেকে ৩০ নং ধারায় আন্তর্জাতিকতা এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। নিচে এ ঘোষণার বিভিন্ন অনুচ্ছেদে যেসব অধিকারের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হলো-

ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ

ধারা-১: সকল মানুষই (শৃঙ্খলহীন) স্বাধীন অবস্থায় সমমর্যাদা ও অধিকার নিয়ে সকল মানুষ জন্মগ্রহণ করে। তারা সকলেই বুদ্ধি ও বিবেকের অধিকারী। তাদের একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বমূলক আচরণ করা উচিত।

ধারা-২: যেকোনো ধরনের পার্থক্য যেমন- জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ধর্ম, ভাষা, রাজনৈতিক বা অপর কোনো মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উৎপত্তি, জন্ম বা অন্য কোনো মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সকল অধিকার ও স্বাধিকারের প্রতি যত্নবান।

ধারা-৩: প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজের জীবন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার থাকবে।

ধারা-৪: কাউকে দাসত্বে আবদ্ধ রাখা যাবে না। সকল প্রকার দাসপ্রথা ও দাস ব্যবসায় নিষিদ্ধ থাকবে।

ধারা-৫: কারও প্রতি অমানুষিক নির্যাতন অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করা যাবে না।

ধারা-৬: আইনের চোখে প্রত্যেকেরই সর্বত্র মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি লাভের অধিকার রয়েছে।

ধারা-৭: আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং কোনোরূপ বৈষম্য ছাড়া সকলেরই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার রয়েছে।

ধারা-৮: মৌলিক অধিকার খর্ব করা হলে আদালতে প্রতিকার লাভের ব্যবস্থা থাকবে।

ধারা-৯: বিনা কারণে কাউকে গ্রেফতার, আটক বা নির্বাসিত করা যাবে না।

ধারা-১০: প্রত্যেকই নিরপেক্ষ ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারী।

ধারা-১১: কেউ দন্ডযোগ অপরাধে অভিযুক্ত হলে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের নিশ্চয়তা থাকবে এবং আদালতে কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ বলে দাবি করার অধিকার থাকবে।

ধারা-১২: সকল গৃহের নিরাপত্ত ও যোগাযোগের গোপনীয়তার অধিকার থাকবে।

ধারা-১৩ : প্রত্যেকেই রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বত্র চলাচল, নিজ দেশ ত্যাগ ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার পাবে।

ধারা-১৪: প্রত্যেকেই নির্যাতন থেকে আত্মরক্ষার জন্য অন্য দেশে আশ্রয় নিতে পারবে।

ধারা-১৫: প্রত্যেকেরই জাতীয়তার অধিকার থাকবে।

ধারা-১৬: সকলেরই বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার থাকবে এবং বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমানাধিকার থাকবে।

ধারা-১৭: সকলেরই সম্পত্তির অধিকার থাকবে, কাউকে জোরপূর্বক সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

ধারা-১৮: প্রত্যেকের চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনত থাকবে।

ধারা-১৯: প্রত্যেকের স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার থাকবে।

ধারা-২০: শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হওয়ার এবং সংগঠনের অধিকার সকলের থাকবে।

ধারা-২১: প্রত্যেক প্রত্যক্ষভাবে বা অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশের সরকারের অংশগ্রহণের অধিকার পাবে।

মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের মধ্যে পার্থক্য কি কি?

আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ

ধারা-২২: প্রত্যেকেরই সামাজিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার থাকবে।

ধারা-২৩: কাজ করার অধিকার, যেকোনো পেশা গ্রহণের এবং পারিশ্রমিক লাভ, কাজের ন্যায্য শর্তাদি লাভের অধিকার প্রত্যেকের থাকবে

ধারা-২৪: প্রত্যেক কর্মজীবনে বিশ্রাম, অবসর বিনোদনের অধিকার পাবে। কাজের সময়ে সুনির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বেতন ও ছুটি ভোগের অধিকারও থাকবে।

ধারা-২৫: নিজের ও নিজের পরিবারের স্বাস্থ্য, জীবনমানের উপযোগী খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা লাভের অধিকার পাবে। এছাড়া বেকারত্ব, রোগব্যাধি, অক্ষমতা, বৈধব্য, বার্ধক্য অথবা দৈবদুর্বিপাকে সামাজিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার পাবে। মা ও শিশু বিশেষ যত্নলাভের অধিকার পাবে।

ধারা-২৬: প্রত্যেকেরই শিক্ষা লাভের অধিকার রয়েছে। ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও যেকোনো কর্মে যোগ্যতা অর্জনের জন্য কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের অধিকার রয়েছে।

ধারা-২৭: প্রত্যেকেরই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, শিল্পকলা চর্চা এবং বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির বিকাশে সুযোগ লাভের অধিকার থাকবে।

ধারা-২৮: সকলের জন্যই সামাজিক ও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার অধিকার থাকবে।

ধারা-২৯: কেউ জাতিসংঘের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী কোনো অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে না।

ধারা-৩০: এই ঘোষণায় উল্লিখিত কোনো বিষয়কে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা চলবে না যাতে মনে হয় যে, ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত কোনো অধিকার বা স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্য কোনো রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তি বিশেষের আত্মনিয়োগের প্রমাণ রয়েছে, তাদের প্রতি অধিকারের ঘোষণা আরোপ করা যাবে না।

উল্লিখিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ঘোষণা ছাড়াও বিশ্বসংস্থা জাতিসংঘ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার সম্পর্কিত দলিল প্রণয়ন করেছে। এ দলিলগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণার মতোই গুরুত্ব বহন করে থাকে। নিচে এগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো-

১. ১৯৪৯ সালের গণহত্যা নিরোধ, গণহত্যা অপরাধের শান্তি সংক্রান্ত কনভেনশন আন্তর্জাতিক আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই দলিল দ্বারা আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই আইনে নিম্নলিখিত অপরাধকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে-

ক. কোনো একটি জাতি, গোত্র, বর্ণ বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কোনো সদস্যকে হত্যা করা।

খ. ঐ সব সম্প্রদায়ের কোনো সদস্যকে শারীরিক বা মানসিকভাবে গুরুতরভাবে আঘাত করা।

গ. পরিকল্পিতভাবে ঐ সম্প্রদায়ের ওপর এমন ধরনের জীবনব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া যাতে তাদের সম্পূর্ণ অথবা আংশিক শারীরিক ধ্বংসপ্রাপ্তি ঘটে।

ঘ. এমন অবস্থা গ্রহণ করা যা ঐ সম্প্রদায়ের মধ্যে জন্মের হার ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ঙ. ঐ সম্প্রদায় থেকে অন্য সম্প্রদায়ে জোরপূর্বক সন্তানাদি হস্তান্তর করা।

২. সব ধরনের বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন ১৯৬৫। এ কনভেনশন দ্বারা বর্ণবৈষম্যকে নিষিদ ঘোষণা করা হয়েছে।

৩. জাতি বিদ্বেষমূলক অপরাধ দমন এবং শাস্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন ১৯৭৩। ৪. নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ কনভেনশন ১৯৭৯।

আশাকরি, মানবাধিকার ‍গুলো কি কি – এ সম্পর্কে আপনারা পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। এরপর থেকে যেকোন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আপনারা সোচ্চার থাকতে পারবেন।

Related Posts