Home » স্বাধীনতা কি | স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও
স্বাধীনতা কি, স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও

স্বাধীনতা কি | স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও

by TRI

স্বাধীনতা

স্বাধীনতা হলো মানুষের সাথে একান্তভাবে সম্পর্কযুক্ত এক মৌল রাজনৈতিক ধারণা। স্বাধীনতা সভ্য সমাজের অপরিহার্য উপাদান। স্বাধীনতা ব্যতীত কোনো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র উন্নতি লাভ করতে পারে না।

স্বাধীনতা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Liberty’। ‘Liberty’ শব্দটি ল্যাটিন ‘Liber’ থেকে এসেছে। যার অর্থ Free বা স্বাধীন।

সাধারণ অর্থে স্বাধীনতা বলতে আপন খেয়াল-খুশি অনুযায়ী কোনোকিছু করাকে বোঝায়। কিন্তু এমন স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তরমাত্র। এর ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং সমাজজীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। স্বাধীনতার এরূপ ধারণা পৌরনীতি ও সুশাসনে গ্রহণযোগ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, কাউকে ইচ্ছেমতো সব কিছু করার স্বাধীনতা দিলে সমাজে অন্যদের ক্ষতি হতে পারে এবং অশান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। পৌরনীতি ও সুশাসনে স্বাধীনতা একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়।

পৌরনীতি ও সুশাসনের ভাষায়, অপরের অধিকার বা স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে স্বীয় ইচ্ছেমতো কাজ করার অধিকারকেই বলা হয় স্বাধীনতা। অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ হলো নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা। স্বাধীনতা ধারণার দুটি দিক রয়েছে। যথা- নেতিবাচক ও ইতিবাচক দিক।

আরও দেখুন:   আইন ও নৈতিকতার মধ্যে পার্থক্য কি কি?

নেতিবাচক দিক থেকে স্বাধীনতার অর্থ হলো সর্বপ্রকার নিয়ন্ত্রণের অপসারণ এবং ব্যক্তির স্বাধীন আচরণকে স্বীকৃতি প্রদান। ব্যোম, হার্বাট স্পেন্সার, টমাস হবস, জন লক, অ্যাডাম স্মিথ, জন স্টুয়ার্ট মিল প্রমুখ রাষ্ট্র দার্শনিক স্বাধীনতাকে নেতিবাচক অর্থে গ্রহণ করার পক্ষপাতী ছিলেন। অপরদিকে, জ্যা জ্যাক রুশো, হেগেল, টিএইচ গ্রিন প্রমুখ রাষ্ট্র দার্শনিক স্বাধীনতার ইতিবাচক ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন। স্বাধীনতার ইতিবাচক ধারণায় স্বশাসন ও স্বনিয়ন্ত্রণের ওপর না বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। এই ধারণা অনুসারে ব্যক্তি তার স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে নিজের ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে পারে। তার ইচ্ছা সংকীর্ণ ও স্বার্থপর নয় বরং তা হলো গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা সমাজের অন্যদের ইচ্ছার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

স্বাধীনতার সংজ্ঞা

স্বাধীনতার ধারণা দিতে গিয়ে অধ্যাপক লাস্কি (Prof. Laski) বলেছেন, ‘স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি সেই সামাজিক পরিবেশ যাতে মানুষ নিজেদের পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করার সুযোগ লাভ করে এবং সেই পরিবেশ রক্ষাকল্পে অদম্য আগ্রহ প্রকাশ করে।’

অধ্যাপক গেটেল (Prof. R. G. Gettell) এর মতে- ‘স্বাধীনতা হলো সেসব কাজ করা ও উপভোগ করা যেগুলো করা ও না উপভোগ করার যোগ্য।’ (Liberty is the opposite power of doing and enjoying those things which are worthy of enjoyment and work.)

অধ্যাপক বার্কার বলেন, ‘স্বাধীনতা হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত আইনগত ধারণা, রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাধীনতা বা আইনসঙ্গত স্বাধীনতা কখনই প্রত্যেকের অবাধ স্বাধীনতা হতে পারে না।’

হার্বার্ট স্পেন্সার (Herbert Spencer)-এর মতে, ‘স্বাধীনতা বলতে ইচ্ছেমতো কাজ করাকে বোঝায়, যদি ঐ কাজ অপরের স্বাধীনতা ভোগে বাধা সৃষ্টি না করে।’ (Every man is free to do whatever he wills, provided he infringes not the equal freedom of any other man.)

টি এইচ গ্রিন (T. H. Green) এর মতে, ‘যা উপভোগ করার এবং সম্পন্ন করার যোগ্য তা উপভোগ ও সম্পাদন করার ক্ষমতাকে স্বাধীনতা বলে।’ (Freedom Consists in a positive power or capacity of doing or enjoying something worth doing or worth enjoying.)

অধ্যাপক সিলি (Sheely) বলেন, ‘অতি শাসনের বিপরীতাবস্থাই হলো স্বাধীনতা।’ (Liberty is the opposite of over government.)

স্বাধীনতা যেহেতু আইনগত ধারণা তাই রাষ্ট্রের মধ্যেই স্বাধীনতার উপলব্ধি সম্ভব। রাষ্ট্রই আইন দ্বারা পরিবেশ রচনা করে এবং স্বাধীনতা ভোগকে সম্ভবপর করে তোলে। স্বাধীনতা কখনও অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। কিন্তু অতিরিক্ত ও অবাঞ্ছিত নিয়ন্ত্রণ স্বাধীনতার পরিপন্থি।

অধ্যাপক জি. ডি. এইচ. কোল (G. D. H. Cole) বলেন, ‘স্বাধীনতা হলো ব্যক্তিত্বের ওপর বাহ্যিক কোনো প্রভাব ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা।’ (Liberty is the freedom of the individual to express without external hindrance to personality.)

Related Posts