Home » আইন ও নৈতিকতার মধ্যে পার্থক্য কি কি?
আইন ও নৈতিকতার মধ্যে পার্থক্য

আইন ও নৈতিকতার মধ্যে পার্থক্য কি কি?

by TRI

আইন ও নৈতিকতার পার্থক্য

আইন ও নৈতিকতার মধ্যে অনেক সাদৃশ্যমূলক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিচে আইন ও নৈতিকতার মধ্যে পার্থক্য গুলো আলোচনা করা হলো-

১. সংজ্ঞাগত পার্থক্য

সংজ্ঞাগত দিক থেকে আইন ও নৈতিকতার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। আইন হচ্ছে কতিপয় নিয়ম- কানুন যার পেছনে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি ও অনুমোদন থাকে। পক্ষান্তরে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সৎ-অসৎ, উচিত-অনুচিত ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত বিধি-বিধানকে নৈতিকতা বলা হয়।

২. পরিধিগত পার্থক্য

রাজনৈতিক আইনের তুলনায় নৈতিক বিধির পরিধি অনেক ব্যাপক। আইন কেবল মানুষের বহির্জীবন ও বাহ্যিক আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি প্রভৃতি ক্রিয়াকলাপের ওপর এর কোনো এখতিয়ার নেই। পক্ষান্তরে নৈতিক বিধান মানুষের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় প্রকার কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের মন, চিন্তা, অনুভূতি প্রভৃতি নৈতিক বিধির এখতিয়ারভুক্ত। চিত্তশুদ্ধির মাধ্যমে মানুষকে নৈতিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ করাই নীতিশাস্ত্রের উদ্দেশ্য।

আরও দেখুন:

নৈতিকতা কি | নৈতিকতা কাকে বলে | নৈতিকতা বলতে কি বুঝায়

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি কি?

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের করণীয় কি কি?

৩. অনুমোদনের ক্ষেত্রে পার্থক্য

রাষ্ট্রীয় আইনের পেছনে সার্বভৌম শক্তির অনুমোদন থাকে। তাই তা বাধ্যতামূলকভাবে বলবৎ হয়। কিন্তু নৈতিক বিধানের পেছনে এ রকম কোনো শক্তির সমর্থন নেই। তাই নৈতিক বিধান আবশ্যিকভাবে কার্যকর হয় না। নীতিগর্হিত কাজের জন্যে কেবল বিবেকের দংশন, লোক নিন্দা প্রভৃতি ভোগ করতে হয়।

৪. স্থান-কাল পাত্রভেদে পার্থক্য

নীতিগতভাবে যা অন্যায় আইনের চোখে তা নাও হতে পারে। যেমন- মদপান নীতিবিরুদ্ধ, কিন্তু বেআইনি নয়। আবার আইনের চোখে যা দণ্ডনীয় নৈতিক বিচারে তা ত্রুটিপূর্ণ নাও হতে পারে। যেমন- আমাদের দেশে রাস্তার ডানদিক দিয়ে গাড়ি চালানো আইনবিরুদ্ধ কিন্তু নীতিবিরুদ্ধ নয়।

৫. সর্বজনীনতার ক্ষেত্রে পার্থক্য

নৈতিক বিধানগুলো মোটামুটিভাবে সবদেশের এবং সবকালের জন্য। মানুষ ইচ্ছা করলেই এগুলোকে পরিবর্তন করতে পারে না। পক্ষান্তরে, রাষ্ট্রীয় আইন আপেক্ষিক এবং দেশ ও কালভেদে বিভিন্ন। আবার প্রয়োজনবোধে মানুষ তা সংশোধন বা বাতিল করতে পারে।

৬. রাষ্ট্রীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে পার্থক্য

দেশের নিরাপত্তা রাষ্ট্রের কাছে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। তাই রাষ্ট্রের অস্তিত্বের পক্ষে আবশ্যক এমন আইনও সৃষ্টি করতে পারে যা ন্যায়নীতির বিরোধী। তবে যুদ্ধকালীন বা কোনো বিশেষ অবস্থায় সাময়িকভাবে রাষ্ট্র এ রকম নীতিবিরোধী আইন প্রণয়ন করে। স্বাভাবিক অবস্থায় রাষ্ট্রের নীতিগর্হিত আচরণ সমর্থন বা স্বীকার করা যায় না।

৭. মানদণ্ডগত পার্থক্য

প্রকৃতিগত বিচারে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বর্তমান। নীতিশাস্ত্রের সব কাজ বা চিন্তাকে ভিত্তি করে অর্থাৎ ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত ইত্যাদির মানদণ্ডে আইন প্রণীত হয়।

৮. সুস্পষ্টগত পার্থক্য

স্পষ্টতার দিক থেকে আইন ও নৈতিকতার মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের মতে, আইন সুস্পষ্ট ও সুনিশ্চিত। অন্যদিকে, নৈতিকতা অনেকটা অস্পষ্ট বিষয়। তাছাড়া নৈতিকতা সরকার কর্তৃক সমর্থিত ও গৃহীত নয়।

৯. প্রকৃতিগত পার্থক্য

আইন ভঙ্গ করলে শাস্তি পেতে হয়। প্রয়োজনে জেল ও জরিমানাও হয়। কিন্তু নৈতিক বিধি- বিধান অমান্য করলে বাধ্যতামূলক শাস্তি পেতে হয় না। নৈতিকতা বিসর্জন দিলে বিসর্জনকারীকে সামাজিকভাবে ঘৃণিত হতে হয়।

১০. ব্যক্তিকেন্দ্রিক পার্থক্য

আইন হচ্ছে সর্বজনীন যা সমাজের সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। পক্ষান্তরে নৈতিকতা আসল বিচারে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ব্যক্তিভেদে মানুষের নৈতিকতাবোধের তারতম্য হতে পারে।

উপরের আলোচনার শেষে বলা যায়, কিছু বৈসাদৃশ্যমূলক সম্পর্ক থাকলেও প্রকৃতপক্ষে আইন ও নৈতিকতার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। আইন ও নৈতিকতা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে ভূমিকা পালন করে। যখনই আইন নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে তখনই তা নাগরিক কর্তৃক বেশি সমাদৃত হয়। নৈতিকতাবিরোধী আইন কোনো রাষ্ট্রেই জনসমর্থন লাভ করে না এবং তা টিকেও না।

Related Posts