রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি ?
রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রবক্তা হলেন গ্যাব্রিয়েল অ্যালমন্ড। তিনি তাঁর “Comparative Political System” শীর্ষক রচনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক সংস্কৃতি কথাটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন লেখক রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিষয়টিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা শুধু কাঠামোর দিক থেকেই অন্য রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে আলাদা তা নয়; বরং এর আলাদা হওয়ার অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ দিকটিই হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ গত শতকের পঞ্চাশের দশকে রাজনৈতিক মতাদর্শ, জাতীয় নীতি, জাতীয় রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব ও মূল্যবোধ প্রভৃতি বিশ্লেষণের জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যাপক প্রয়োগ শুরু করেন। রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে ব্রিটেনে সংসদীয় গণতন্ত্র অত্যন্ত সফলভাবে এগিয়ে গেছে, তবে চর্চার অভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এটি তেমন সফল হতে পারেনি।
সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কি বুঝ ?
যেখানে জনগণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা বা সরকার সম্পর্কে, সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে, তার নিয়মনীতি সম্পর্কে অসচেতন সেখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি সংকীর্ণ। অর্থাৎ সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট্য হলো, জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও জীবন সম্পর্কে জনগণ সচেতন নয়।
সনাতন সমাজব্যবস্থা এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে এ ধরনের সংস্কৃতি রয়েছে। এরূপ সংস্কৃতিতে জনগণ রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপকরণ ও উপপাদ সম্পর্কে নিস্পৃহ ও উদাসীন থাকে। জনগণের ধ্যানধারণা ও জ্ঞান সীমিত থাকে।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র কি? গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য কি?
রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূল উপাদান কয়টি ?
রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূল উপাদান হচ্ছে ৬টি। সেগুলো হলো-
রাজনৈতিক মূল্যবোধ (political values)
প্রত্যেকটি দেশের মানুষের কিছু রাজনৈতিক মূল্যবোধ রয়েছে। যেমন- স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন ইত্যাদি।
রাজনৈতিক বিশ্বাস (political beliefs)
রাজনৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তি হল রাজনৈতিক বিশ্বাস তথা রাজনৈতিক নৈতিকতা। এটি ছাড়া রাজনৈতিক সংস্কৃতির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
মানসিক মনোভাব (emotional attitudes)
মানসিক মনোভাবের উদাহরণ হল রাজনৈতিক মতাদর্শ, অতীত সরকারের নীতি, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইত্যাদি।
জ্ঞানীয় অভিযোজন (cognitive orientation)
জ্ঞানীয় অভিযোজন বলতে রাজনৈতিক সমস্যা, ঘটনা ও রাজনৈতিক কার্যকলাপ এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের কাছে থাকা তথ্যের পরিমাণ ও তথ্যের প্রকারকে বোঝায়।
কার্যকর অভিযোজন (effective orientation)
কার্যকর অভিযোজনের উদাহরণ হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও আগ্রহের পরিমাণ, রাজনৈতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গণতন্ত্রের সাথে সংযুক্তি ইত্যাদি।
মূল্যায়নমূলক অভিযোজন (evaluative orientation)
প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার কিছু না কিছু উদ্দেশ্য থাকে এবং এটি কিছু কার্য সম্পাদন করে। আর এই রাজনৈতিক ব্যবস্থার অর্জন ও ব্যর্থতাকে মানুষ মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে।