প্রতিবন্ধী কারা?
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী (Handicapped) বলতে কেবল বিকলাঙ্গ, পঙ্গু ও শারীরিকভাবে অক্ষম লোকদের বোঝায়। তবে আধুনিককালে এ ধারণার সম্প্রসারণ ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতিবন্ধী কারা – এ সম্পর্কে এখন ব্যাপক ও বিস্তৃতি ধারণা লাভ করেছে। কেননা বর্তমানে প্রতিবন্ধী বলতে সেসব লোককে বোঝায় যারা শারীরিক, মানসিক কিংবা আর্থসামাজিক অক্ষমতা বা অসুবিধার কারণে স্বাভাবিক, স্বাবলম্বী ও সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারে না।
Conflict Management বা দ্বন্ধ নিরসনের উপায়গুলো কি কি? |
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর ভাষ্যানুযায়ী, “একজন প্রতিবন্ধী হচ্ছেন তিনি, যার স্বীকৃতি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে যথোপযুক্ত কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা কমে যায়।”
জাতিসংঘ (UNO) প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে, “প্রতিবন্ধিতা হলো এমন কোনো বাধা বা সীমাবদ্ধতা (শারীরিক বা মানসিক ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে উদ্ভূত) যা একজন মানুষের ব্যাহত করে।” স্বাভাবিক কার্যক্রমকে পূর্ণভাবে
ইউনিসেফ (UNICEF)-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, “Disability is the difficulty in seeing, speaking. hearing, writing, walking, conceptualizing or in any other function with in the range considered normal for a human being.”
সাধারণভাবে বলা যায়, যারা কোনো ধরনের শারীরিক, মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা কিংবা সামাজিক সীমাবদ্ধতার কারণে সমাজে কোনো ব্যক্তির কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হওয়াই হলো প্রতিবন্ধিতা।
বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী সংক্রান্ত আইন (এনএফওডব্লিউডি ১৯৯৭) অনুযায়ী “অসুখে, দুর্ঘটনায়, চিকিৎসা ত্রুটিজনিত কারণে বা জন্মগতভাবে যদি কোনো ব্যক্তি শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন এরূপ ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে উক্ত ব্যক্তি প্রতিবন্ধী হিসেবে গণ্য হবে।”
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, যারা কোনো কারণে শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে সমাজ প্রত্যাশিত স্বাভাবিক ভূমিকা পালনে অক্ষম তারাই প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধীরা সমাজে অত্যন্ত অবহেলিত। নানা কারণে তারা বঞ্চনা, বৈষম্যের শিকার। কিন্তু তারাও মানুষ। তারা সমাজের বোঝা নয় বরং সমঅধিকারের সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারলে তারাও সম্পদ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
প্রতিবন্ধী কত প্রকার ও কি কি?
বিশেষ চাহিদার জনগোষ্ঠী তথা প্রতিবন্ধীত্বের কারণ ও ধরন অনুসারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রধানত চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা- ১. শারীরিক প্রতিবন্ধী, ২. মানসিক প্রতিবন্ধী, ৩. সামাজিক প্রতিবন্ধী ও ৪. অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধী।
আবার বাংলাদেশ সরকার প্রণীত প্রতিবন্ধীদের সমসুযোগ, অধিকার ও পূর্ণ অংশগ্রহণ সংক্রান্ত আইন ১৯৯৭ অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের সাত শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা- ১. দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, ২. শারীরিক প্রতিবন্ধী, ৩. শ্রবণ প্রতিবন্ধী, ৪. মানসিক প্রতিবন্ধী, ৫. চরম প্রতিবন্ধী, ৬. বাক প্রতিবন্ধী ও ৭. বহুমুখী প্রতিবন্ধী।
নিচে কয়েক ধরনের প্রতিবন্ধীর পরিচয় তুলে ধরা হলো-
শারীরিক প্রতিবন্ধী: যারা কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অংশবিশেষ বা পুরোটাই হারিয়েছে এবং কাজ করার ক্ষমতা নেই তারাই শারীরিক প্রতিবন্ধী। অন্ধ, বধির, বোবা, ল্যাংড়া, অপুষ্টির শিকার, বৃদ্ধ প্রভৃতি শারীরিক প্রতিবন্ধীর অন্তর্ভুক্ত।
মানসিক প্রতিবন্ধী: মানসিক পীড়ায় আক্রান্ত এবং কম বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিরা স্বাভাবিক চিন্তা ও কাজ করতে পারে না বিধায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম। পাগল, হাবাগোবা, অটিজম শিশু এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
মন্ত্রি মিশন পরিকল্পনা কি? মন্ত্রি মিশন পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি? |
সামাজিক প্রতিবন্ধী: বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে অবাঞ্ছিত ও লাঞ্ছিত জীবনযাপন করে।যেমন- কয়েদি, লাঞ্ছিতা, পরিত্যক্ত শিশু, এতিম। সামাজিক অবহেলা ও প্রতিরোধের কারণে এরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না।
অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধী: অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে বাঞ্চিত জীবনযাপনে অপারগ যেমন- নিঃস্ব, ভবঘুরে, ভিক্ষুক। এরা চরম অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করে।
অতএব, আপনারা উপরের আলোচনা থেকে প্রতিবন্ধী কারা এবং প্রতিবন্ধী কত প্রকার ও কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করলেন।