নির্বাচন পদ্ধতি
বর্তমান যুগে গণতন্ত্র বলতে পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রকে বুঝায়। এ ধরনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিনিধি নির্বাচনের পদ্ধতিগত বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যাপারে দু’টি নির্বাচন পদ্ধতি আমরা উল্লেখ করতে পারি। এ পদ্ধতি দু’টি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল:
১. প্রত্যক্ষ নির্বাচন
প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় ভোটদাতাগণ নিজেরাই সরাসরি নিজেদের প্রতিনিধিকে নির্বাচন করে। বর্তমানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের আইনসভার নিম্নকক্ষের সদস্যগণ এ পদ্ধতিতেই জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। এ ধরনের নির্বাচন পদ্ধতি খুবই সহজ সরল। এ পদ্ধতিতে নির্বাচকগণ নির্দিষ্ট ভোটদান কেন্দ্রে এসে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে পছন্দমত একজনকে ভোট দেন। গণনায় সর্বাধিক সংখ্যক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থী নির্বাচিত হন। বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে এ নির্বাচন পদ্ধতি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
২. পরোক্ষ নির্বাচন
পরোক্ষ নির্বাচনে ভোটদাতাগণ প্রত্যক্ষভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন না করে একটি মাধ্যমিক সংস্থা গঠন করে। সেই মাধ্যমিক সংস্থার নির্বাচিত সদস্যগণই চূড়ান্তভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করে। এই মাধ্যমিক সংস্থাটিকে সাধারণত “নির্বাচক সংস্থা” বলা হয়। এ ধরনের নির্বাচন পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের চূড়ান্ত ক্ষমতা ভোটারদের হাতে থাকে না; থাকে নির্বাচিত সংস্থার সদস্যগণের হাতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার কি?
গণতন্ত্রে ভোটাধিকার নাগরিকের একটি অতি মূল্যবান রাজনৈতিক অধিকার এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও বটে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। জনগণের এ সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের জন্যই সার্বজনীন ভোটাধিকারের ধারণা জন্মলাভ করেছে। আধুনিক বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই সার্বজনীন ভোটাধিকারের ধারণা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। জনসাধারণ ভোটাধিকারের ভিত্তিতে তাদের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে থাকে। বর্তমানে প্রায় সকল রাষ্ট্রেই সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারকে নির্বাচনের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে যখন দেশের সকল সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন তখন তাকে “সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার” বলে। এ নীতি অনুসারে কেবল অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাড়া অন্য কোন কারণে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় না। তবে উন্মাদ, দেউলিয়া, রাষ্ট্রদোহী, গুরুতর অপরাধে দন্ডিত ব্যক্তি, বিদেশী প্রভৃতি ব্যক্তিদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় না।
উত্তম নির্বাচন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
নির্বাচন যে-কোন রাষ্ট্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ কারণে একটি উত্তম নির্বাচন পদ্ধতি প্রত্যেক রাষ্ট্রের নিকটই গ্রহণযোগ্য। নিম্নে একটি উত্তম নির্বাচন পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল-
ক. সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার
রাষ্ট্রের কাজে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়া উত্তম।
খ. প্রত্যক্ষ নির্বাচন
রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচনের জন্য প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি শ্রেয়।
গ. গোপন ভোট
গোপন ভোট গ্রহণ পদ্ধতি নির্বাচনের পবিত্রতা বজায় রাখে। নির্ভয়ে উপযুক্ত প্রার্থীদের পক্ষে গোপন ব্যালেটের মাধ্যমে ভোট প্রদান উত্তম পদ্ধতি।
ঘ. সহজ ভোট পদ্ধতি
ভোটদান পদ্ধতি যত সহজ হবে নির্বাচন ব্যবস্থা তত উন্নত হবে। জটিল ভোটদান পদ্ধতি স্বাভাবিকভাবেই ভোটারদের নির্বাচন বিমুখ করে তোলে।
ঙ. একক ও ক্ষুদ্র নির্বাচনী এলাকা
একটি নির্বাচনী এলাকা হতে একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়াই উত্তম। এতে ভোটারদের ভোটদান সহজ হয়। তাছাড়া নির্বাচনী এলাকা যত ছোট হয় ততই ভাল। এতে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে সহজে যোগাযোগ ঘটে।
চ. সংখ্যালঘুর প্রতিনিধিত্ব
রাষ্ট্রের সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের জন্যে সংখ্যালঘু শ্রেণীর উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচনের বিধান উত্তম নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য
আরও পড়ুন: ১৯৫৪ সালের নির্বাচন : কারণ, ফলাফল ও গুরুত্ব