আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক
নিচে আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক গুলো আলোচনা করা হল-
আইন স্বাধীনতার শর্ত ও ভিত্তি
আইন ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব না করে ব্যক্তির জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। কারণ আইনের অবর্তমানে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ফলে সকলেরই স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়। আইনের অনুপস্থিতিতে সবল দুর্বলের উপর অত্যাচার করে। ফলে, দুর্বলের স্বাধীনতা সবল কর্তৃক অপহৃত হয়। যেখানে আইনের কর্তৃত্ব রয়েছে সেখানে সবল-দুর্বল প্রত্যেকেই স্ব স্ব অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। তাই আমরা বলতে পারি, আইন স্বাধীনতার শর্ত ও ভিত্তি। এ প্রসঙ্গে উইলোবী (Willoughby) বলেছেন, “নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই স্বাধীনতার অস্তিত্ব আছে।”
আইন স্বাধীনতাকে রক্ষা করে
আইন ব্যক্তিস্বাধীনতাকে খর্ব না করে একে রক্ষা করে। নাগরিকদের স্বাধীনতা যদি অপর কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক হরণের উপক্রম হয় তখন নাগরিক আইনের আশ্রয় গ্রহণ করে তাদের হারানো স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে পারে। লোভী শাসকদের হাত থেকে আইনই নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করে।
আইন স্বাধীনতার অভিভাবক
আইন স্বাধীনতার অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। পিতামাতা যেমন সন্তানকে সকল প্রকার বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন, তেমনি আইন আপন শক্তির সাহায্যে স্বাধীনতাকে নিরাপদ রাখার সকল ব্যবস্থা করে। যেমন- ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সমাজবিরোধী কার্যকলাপের মাধ্যমে স্বাধীনতা যখন বিঘ্নিত হয় আইনের নিয়ন্ত্রণের হস্ত তখন সুদৃঢ় হয়। এভাবে স্বাধীনতার অভিভাবক হিসেবে আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আইন স্বাধীনতার সহায়ক
আইন প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার সহায়তাকারী। যেখানে আইন অনুপস্থিত সেখানে স্বাধীনতার কথা চিন্তা করা যায় না। দেশে আইনের প্রয়োগ যত বেশি হবে জনগণ স্বাধীনতাও তত বেশি ভোগ করতে পারবে। জনগণ যত বেশি স্বাধীনতা চাইবে, আইনের কর্তৃত্বও তাদের উপর তত বেশি বর্তাবে। এতে বুঝা যায়, আইনই স্বাধীনতার সহায়ক।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলো কি কি?
আইন স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রসারিত করে
আইনের উপস্থিতি স্বাধীনতার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে। আইনের উপস্থিতিতে এমন এক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি হয় যেখানে সুন্দর ও সভ্য জীবনযাপনের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকে। রিচি (Ritchie) এজন্যই বলেছেন, “স্বাধীনতা বলতে যদি আত্মবিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বুঝায় তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই আইনের দ্বারা সৃষ্টি হয়।”
আইন স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করে
আইন স্বেচ্ছাচারী শাসকদের হাত থেকে স্বাধীনতা রক্ষা করে। আইনের অবর্তমানে শাসকগণ স্বেচ্ছাচারী হয়ে গণ স্বাধীনতা আত্মসাৎ করে। আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকলে শাসকগণ শাস্তি ভোগের ভয়ে স্বেচ্ছাচারী হন না। তাই বলা যায়, আইন নাগরিকদের জন্যে শোষণ বন্ধ করে স্বীয় স্বাধীনতা উপভোগের সুযোগ সৃষ্টি করে।
আইন সামাজিক স্বাধীনতা রক্ষা করে
সমাজে দুর্নীতি সৃষ্টি হয় তখনই যখন আইন কার্যকরী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। সামাজিক দুর্নীতির কারণে সমাজের সকলের সামাজিক স্বাধীনতা বিনষ্ট হয়। একমাত্র আইনই সামাজিক দুর্নীতি দূরীভূত করে ব্যক্তির সামাজিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে।
আইন সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করে
সমাজে বিশৃঙখলা সৃষ্টি হলে জনগণের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হয়ে থাকে। সমাজের বিশৃঙ্খলা দূরীভূত করে জনগণের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে আইনের যথার্থ প্রয়োগ আবশ্যক। একমাত্র আইনই পারে সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করে জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করতে।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক বিরোধীমূলক নয়। আইন যদি জনগণের মতানুযায়ী হয় এবং স্বাধীনতা বলতে যদি জনকল্যাণমূলক সুবিধা উপভোগ বুঝায় তাহলে এ দু’টি পরস্পরবিরোধী হতে পারে না বরং একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক। দার্শনিক রুশো (Rousseau) বলেন, “স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্যে আইন প্রয়োজনীয় অধিকার সকলের মধ্যে বন্টন করে দেয়।” তাই বলা হয়, আইন ও স্বাধীনতা যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।