সামরিক বাহিনী একটি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রত্যকটি রাষ্ট্রকে তার সার্বভৌমত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তুলতে হয় এবং তাদের তত্ত্বাবধান করা হয় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। প্রতিরক্ষা শপথ নিতে হয় রাষ্ট্রীয় যে কোন ধরনের সংকটময় মুহূর্তে জীবন বাজি রাখতে পিছপা হবেনা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশদারিত্ব, গৃহযুদ্ধ সর্বোপরি ভিন্ন মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে রাজনীতিতে সেনাবাহিনী এবং সামরিক অভ্যুত্থানের ভূমিকা বর্তমানে সারাবিশ্বে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রধানত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেই সামরিক অভুত্থান ও সামরিক শাসনের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতা, ব্যর্থতা, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অবনতি ও আন্তর্জাতিক চাপ ইত্যাদির কারনে বেসামরিক প্রশাসনে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের ফলে বেসামরিক – সামরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়। সামরিক বাহিনীর পেশাগত উৎকর্ষ সামরিক ক্যু-এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করা ও প্রশিক্ষনের ফলে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে উঠে। ফলে তাদের এ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা তাদেরকে অন্যান্য পেশাজীবী থেকে যোগ্য করে তোলে। আর এজন্যই মূলত সামরিক পেশাদারিত্ব এবং সামরিক হস্তক্ষেপ প্রত্যয় দুটি ব্যাপক আলোচনার দাবি রাখে। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যদি পেশাদার সেনাবাহিনীর উদ্ভব হয় তাহলে সামরিক বাহিনীর উপর বেসামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই রাজনীতিতে সামরিক পেশাদারিত্ব অপরিহার্য। তাই পেশাদার সেনাবাহিনীর উদ্ভবের জন্য অপরিহার্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
পেশাদারিত্ব কি
প্রত্যেক পেশার কিছু বিশেষ ধরনের পৃথক পেশাগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- দায়িত্ব, দক্ষতা এবং সংঘবদ্ধতা। পেশাদারি লোকগুলো তাদের নির্দিষ্ট পেশা সম্পর্কে বিশেষভাবে দক্ষ। তারা তাদের দায়িত্ব দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করে। সাধারনত পেশাদারিত্ব হচ্ছে অধিক বিশেষত্বশীল বৈশিষ্ট্যের একটি বিশেষ ধরনের ক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। প্রত্যেক পেশার মধ্যেই এ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যনীয়। সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অন্যান্য গোষ্ঠী বা সংগঠন হতে আলাদা সুবিধা ভোগ করে থাকে।
S.E Finer এরূপ তিনটি সুবিধার কথা বলেছেন। যথা–
- A marked superiority in organization.
- A highly emotionalized status.
- Monopoly of arms.
[Professionalism is the opposite of politicization, for once politicized, an army loses its emphasis on skills and merit – based promotions to be comes instead a political body.]
-John W.R. Leping Well (World Politics, P- 539-72)
আরও পড়ুন: পেশাদারিত্ব মূলক সেনাবাহিনীর বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?
সামরিক পেশাদারিত্ব কি
Huntington বলেন, সামরিক বাহিনী এই কারনে পেশাদারি যে, সামরিক বাহিনীর রয়েছে দক্ষতা, বিশেষজ্ঞতা, সামরিক আনুগত্য। তিনি বলেন, যৌক্তিক ব্যাপার হচ্ছে সামরিক কর্মকর্তারা রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেবেন। আধুনিক পেশাদারী সেনাবাহিনী সরকারের একটি আমলাতান্ত্রিক এজেন্ট বিশেষ। সুতরাং, যে সকল দেশের সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করে সরকারের আমলাতান্ত্রিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে তাকে পেশাদারী সেনাবাহিনী বলে।
অন্যকথায়, দায়িত্ব পালনের সময় সামরিক বাহিনীর রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিবেচনা করাই সামরিক পেশাদারিত্ব বলে। বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সামরিক পেশাদারিত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাদের কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল:
[The military is a professional body because they poses expertness, social responsibility and corporateness.]
-S.P. Hutington
[Military professionalism is the loyalties of the army member upon the military law and ideology.]
-Prof. S.E. Finer
[বন্দুক তাদের হাতে বটে কিন্তু গুলি করার আদেশ পান রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিকট থেকে। এই হলো সামরিক বাহিনীর পেশাদারিত্বের স্বরূপ।]
-মাও সে তুং
[অপেশাদার হচ্ছে তারা যারা নিজ অথবা উপদলের প্রতি অনুগত। আর পেশাদার হচ্ছে তারা যারা সামরিক বাহিনীর প্রতি একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাধ্যগত ও অনুগত।]
-তালুকদার মনিরুজ্জামান
সুতরাং বলা যায়, সামরিক বাহিনীর পেশাদারিত্ব হল নিজ নিজ কর্মে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জন।