আজকের আর্টিকেলে ব্যবস্থাপনা কাকে বলে বা ব্যবস্থাপনা কি এবং ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হবে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন।
ব্যবস্থাপনা কাকে বলে ?
প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানবসম্পদ এবং বিভিন্ন উপায়-উপকরণ (যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, অর্থ, বাজার, পদ্ধতি, তথ্য) সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতিকে ব্যবস্থাপনা বলে। সহজ কথায়, মানুষকে কৌশলে পরিচালনা করাই হলো ব্যবস্থাপনা।
ব্যবস্থাপনা শব্দের উৎপত্তি
ব্যবস্থাপনা এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Management’ ইতালীয় ‘Maneggiare’ শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর অর্থ ‘To train up the horse’ অর্থাৎ, অশ্বকে প্রশিক্ষিত করে তোলা।
আবার অনেকে মনে করেন, ‘Management’ শব্দটি ফরাসি ‘Menager’ ও ‘Menage’ শব্দ দুটো থেকে এসেছে। ‘Menager’ শব্দের অর্থ পরিবার পরিচালনা করা এবং ‘Menage’ শব্দের অর্থ পথ প্রদর্শন করা।
ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা
আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেয়ল (Henri Fayol) ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছেন,
“To manage is to forecast and plan, to organize, to command, to coordinate and to control.” অর্থাৎ, ‘ব্যবস্থাপনা হলো পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা, সংগঠিতকরণ, নির্দেশ দান, সমন্বয় সাধন এবং নিয়ন্ত্রণ।’
আরও পড়ুন: প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? প্রকল্প ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আলোচনা কর।
ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
ব্যবস্থাপনা ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র তথা সব ক্ষেত্রেই অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থাপনা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই সফলতা লাভ করতে পারে না। বিশ্বায়নের এ যুগে প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন দিন প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় দক্ষ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। নিচে ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হলো-
১। সহজে লক্ষ্য অর্জন
প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাঙ্ক্ষিত ফলকে লক্ষ্য বলা হয়। এই লক্ষ্য অর্জনের পথে ছোট ছোট ধাপ বা মাইলফলককে উদ্দেশ্য বলা হয়। ব্যবস্থাপনার মাধ্যম সহজে পরিকল্পনা তৈরি, সংগঠিতকরণ, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয়সাধন এবং নিয়ন্ত্রণের কাজ করা যায়। তাই একে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের একটি কার্যকর কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২। উপকরণাদির সুষ্ঠু ব্যবহার
কোনো কাজ করতে যেসব উপাদান বা বস্তু ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে উপকরণ বলা হয়। উৎপাদনের প্রধান উপকরণগুলো হলো- ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন। এগুলোর সঠিক ব্যবহা ব্যবস্থাপনার সর্বজনীন উদ্দেশ্য। কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ভূমি, শ্রম, মূলধন থাকার পরও ব্যবস্থাপনা না থাকলে এগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে।
৩। উত্তম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা
একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পক্ষ থাকে। যেমন- মালিক, ব্যবস্থাপক, কর্মী, ক্রেতা, ভোক্তা ও সরবরাহকারী প্রভৃতি। এসব পক্ষের মধ্যে কোনো মতবিরোধ হলে তা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কমিয়ে আনা যায়। ব্যবস্থাপনার কাজ সম্পাদনে বিভিন্ন ব্যক্তি বা পক্ষের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করতে হয়। ফলে তাদের সাথে উত্তম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা যায়।
৪। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ করা যায়। এছাড়া নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা যায়। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়, যা দেশের বেকার সমস্যা কমাতে ভূমিকা রাখে।
৫। গবেষণা ও উন্নয়ন
নতুন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বা কোনো বিষয়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য পদ্ধতিগত অনুসন্ধানকে গবেষণা বলা হয়। প্রতিযোগিতা মোকাবিলা, ক্রেতা-ভোক্তাদের পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণ ও নতুন পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রতিনিয়ত গবেষণা ও উন্নয়নের প্রয়োজন হয়। কার্যকর ব্যবস্থাপনা এসব কাজে সহায়তা করে থাকে।
৬। দক্ষতা বৃদ্ধি
সময়, অর্থ ও প্রচেষ্টার অপচয় না করে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জনের সামর্থ্যকে দক্ষতা বলা হয়। কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো যায় এবং কাজ সম্পদনের ভুল-ত্রুটি কমানো যায়। ফলে নির্ধারিত বাজেট অনুযায়ী কাজ করা সহজ হয়। দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবসায়ের সম্পদ ও উপকরণাদির সুষ্ঠু ব্যবহার করা সম্ভব হয়। এতে ব্যয় ও অপচয় কমানো যায় এবং কর্মপ্রচেষ্টার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
৭। সামাজিক উন্নয়ন
ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক দায়িত্ব পালন করে সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। ন্যায্য মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা দেওয়া, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রভৃতির মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাই সমাজের সব পক্ষই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উপকৃত হয়।
ব্যবস্থাপনার জনক সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
১। ব্যবস্থাপনার জনক কে?
উত্তর: হেনরি ফেয়ল।
২। আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক কে?
উত্তর: হেনরি ফেয়ল।
৩। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক কে?
উত্তর: ফ্রেডরিক উইন্সলো টেইলর বা এফ. ডব্লিউ. টেইলর।
৪। আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক কে?
উত্তর: ফ্রেডরিক উইন্সলো টেইলর বা এফ. ডব্লিউ. টেইলর।
৫। কর্মী ব্যবস্থাপনার জনক কে?
উত্তর: রবার্ট ওয়েন।
৬। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জনক কে?
উত্তর: জর্জ এলটন ম্যায়ো।