গণতন্ত্র কি ?
গণতন্ত্র হলো জনগণের শাসন। বর্তমান বিশ্বে এটি একটি জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা। যে শাসনব্যবস্থায় জনগণের হাতে ক্ষমতা থাকে তাকেই গণতন্ত্র বলে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এটি প্রাচীন ধারণা হলেও আধুনিক সরকারব্যবস্থায় এটি সর্বজনবিদিত একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা। প্রাচীন গ্রিসে সর্বপ্রথম গণতন্ত্র ধারণার উদ্ভব হয়।
গণতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Democracy’। ‘Demos’ এবং ‘Kratia’ এ দুটি শব্দের সমন্বয়ে ‘Democracy’ শব্দটি গঠিত, যেখানে ‘Demos’ শব্দের অর্থ ‘জনগণ’ এবং ‘Kratia’ শব্দের অর্থ ‘শাসন’। ব্যুৎপত্তিগত অর্থে ‘Democracy’ হলো জনগণের শাসন।
গণতন্ত্রের সংজ্ঞা
প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক হেরোডোটাস প্রায় ২,৫০০ বছর পূর্বে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেন,
“গণতন্ত্র এক প্রকার শাসনব্যবস্থা, যেখানে শাসনক্ষমতা কোনো শ্রেণি বা শ্রেণিসমূহের উপর ন্যস্ত থাকে না; বরং সমাজের সদস্যগণের উপর ন্যস্ত হয় ব্যাপকভাবে।”
এত বছর পূর্বে হেরোডোটাস প্রদত্ত সংজ্ঞার প্রতিফলন আজও পাওয়া যায় আধুনিককালের চিন্তাবিদ ও দার্শনিকদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞায়।
MacIver এর মতে, “গণতন্ত্রের শাসনব্যবস্থায় সরকার জনগণের একজন প্রতিনিধি মাত্র এবং সে অনুযায়ী জনগণ সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “Democracy is a government of the people, by the people, and for the people.” অর্থাৎ, গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগণের জন্য পরিচালিত সরকারব্যবস্থা।”
আরও পড়ুন: নেতৃত্ব কি? নেতৃত্বের গুণাবলী কি কি?
গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণ হলো রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার উৎস। গণতন্ত্রের যেসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
১। প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার
বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলতে প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারকে বোঝায়। প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন গণতন্ত্রের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বর্তমান রাষ্ট্রগুলো বৃহদায়তন এবং জনসংখ্যা ব্যাপক হওয়ার কারণে সরাসরি জনগণের মতামত গ্রহণপূর্বক শাসনকার্য পরিচালনা সম্ভবপর হয় না। ফলে বর্তমানে প্রতিনিধিত্বমূলক বা পরোক্ষ গণতন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে।
২। সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন
গণতন্ত্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। গণতন্ত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সবাই শাসনকার্য পরিচালনা করার সুযোগ পায় না। সাধারণত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দলের মধ্যে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সে দলের নেতৃস্থানীয় সদস্যদের নিয়ে সরকার গঠিত ও দেশ পরিচালিত হয়।
৩। জনমতের প্রাধান্য
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনমতের প্রাধান্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। গণতন্ত্রে জনমতকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। জনমতের উপর নির্ভর করে গণতান্ত্রিক সরকারের স্থায়িত্ব। জনমত হলো গণতন্ত্রের আত্মাস্বরূপ।
৪। দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার তার যাবতীয় কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণের কাছে দায়ী থাকে। বিশেষত সংসদীয় গণতন্ত্রের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সরকার আইনসভার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে। আইনসভার আস্থা হারালে সরকারের পতন ঘটে।
৫। বহুদলীয় ব্যবস্থা
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো বহুদলীয় ব্যবস্থা। পরোক্ষ গণতন্ত্রে বিভিন্ন দল থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সমর্থন লাভের চেষ্টা করে থাকে। নির্বাচনে যে দল জয়লাভ করে সে দল সরকার গঠন করে। যেসব দল সরকার গঠন করতে পারে না তারা সরকারের বাইরে থেকে গঠনমূলক বিরোধিতা করে সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
৬। আইনের শাসন
গণতন্ত্রে আইনের শাসনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এখানে আইনের চোখে সবাই সমান মর্যাদা ভোগ করে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবাইকে আইনের অনুশাসন মেনে চলতে হয়।
৭। নির্বাচনব্যবস্থা
আধুনিক গণতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নির্বাচনব্যবস্থা। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের বাছাই করে থাকে। এ নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকে। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহন।
৮। স্বাধীন প্রচারমাধ্যম
গণতন্ত্রে প্রচারমাধ্যমের স্বাধীনতা স্বীকৃত। প্রচারমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা সুষ্ঠু জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রচারমাধ্যমে সরকারের কর্মকাণ্ড প্রচারের পাশাপাশি এ বিষয়ে জনগণের প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়।
গণতন্ত্র সম্পর্কিত প্রশ্ন
১। সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক কে?
উত্তর: জন লক।
২। আধুনিক গণতন্ত্রের জনক কে?
উত্তর: জন লক।
৩। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস কবে?
উত্তর: ১৫ সেপ্টেম্বর।
৪। গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয় কাকে?
উত্তর: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয়।
৫। গণতন্ত্রের মূল মন্ত্র কি?
উত্তর: গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হলো সাম্য, স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্ব।
৬। গণতন্ত্রের মূল কথা কি?
উত্তর: গণতন্ত্রের মূল কথা হলো সাম্য, স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্ব।