Home » সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর

সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর

by TRI

সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক

সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক সুনিবিড়। সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা কল্পনা করা যায় না। নিচে সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক উপস্থাপন করা হলো-

১। সাম্য স্বাধীনতার পূর্বশর্ত

সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা উপভোগ করা অসম্ভব। কেননা, সমাজে মানুষে মানুষে পার্থক্য থাকলে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার পরিলক্ষিত হয়। সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন হয় স্বাধীনতা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রুশো বলেন, “Liberty cannot exist without equality.” অর্থাৎ, সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা থাকতে পারে না।

২। সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর পরিপূরক

সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর সম্পূরক। সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরোধী নয় এবং একে অপরের পথে বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করে না। সাম্য স্বাধীনতাকে কার্যকর করে তোলে। আবার, স্বাধীনতা না থাকলে মানুষে মানুষে ব্যবধান সৃষ্টি হয়। ফরাসি বিপ্লবের সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্যে সাম্য ও স্বাধীনতা পারস্পরিক সম্পূরক – এ বিষয়টি লক্ষ করা যায়।

আরও পড়ুন:   ন্যায়পালের প্রকারভেদ ও ন্যায়পাল পদের ‍প্রয়োজনীয়তা বা যৌক্তিকতা

৩। সাম্য ও স্বাধীনতা গণতন্ত্রের ভিত্তি

গণতন্ত্রের মূল বিষয় হলো সব মতের প্রাধান্য। গণতন্ত্রে জনগণের মতামত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতা প্রয়োজন, তেমনি সাম্য সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ ঘুচায়।

৪। সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা কল্পনাহীন

যে সমাজে স্বাধীনতা থাকে না সেখানে সাম্যের অস্তিত্বও থাকে না। মূলত স্বাধীনতা না থাকলে সমাজে কতিপয় ব্যক্তির সব অধিকার ভোগের সুযোগ সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে সমাজে অধিকাংশ মানুষ বঞ্চিত গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। ধনিক শ্রেণির আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। কাজেই সাম্যের মাধ্যমেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলা যায়।

৫। সাম্য ও স্বাধীনতার লক্ষ্য এক ও অভিন্ন

সাম্য ও স্বাধীনতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন। উভয়ের উদ্দেশ্য ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ করা ও সামাজিক কল্যাণ সাধন করা। সাম্যের দ্বারা সমাজব্যবস্থায় ঐক্য স্থাপিত হয়, অন্যদিকে স্বাধীনতা ব্যক্তির আত্মবিকাশের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে ব্যক্তির কল্যাণ সাধন করে।

৬। সাম্য স্বাধীনতার মূলভিত্তি

রাষ্ট্রব্যবস্থায় সব মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হলে স্বাধীনতা ভোগের নিশ্চয়তা বিধান করা যায়। কাজেই সাম্যই প্রকৃত স্বাধীনতার ভিত্তিস্বরূপ। সাম্যের ধারণা দ্বারা সামাজিক ন্যায়বিচার ও সবার সমান অধিকার কার্যকর করা হয়।

৭। স্বাধীনতাহীন সাম্য অর্থহীন

স্বাধীনতা ছাড়া সাম্যের অস্তিত্বও কল্পনা করা যায় না। সমাজব্যবস্থায় কতিপয় ব্যক্তির কাছে স্বাধীনতা কুক্ষিগত থাকলে সাম্যের ধারণা অবান্তর হয়ে পড়ে। কাজেই স্বাধীনতাহীন সাম্য অর্থহীন।

৮। সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা অর্থহীন

বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থায় সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় না, জনগণের স্বাধীনতাও থাকে না। এ কারণে সমাজে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার নিশ্চিত হলে তাদের স্বাধীনতা ভোগেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।

৯। সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরবিরোধী

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী উদারনৈতিক চিন্তাবিদগণ সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক পরস্পরবিরোধী বলে মত প্রকাশ করেছেন। লর্ড অ্যাক্টন, টকভিল, হার্বার্ট স্পেন্সার সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্কের ধারণাকে পরস্পরবিরোধী হিসেবে সমর্থন করেছেন। তাদের মতে, “সাম্য ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।”

Related Posts