Home » সংবিধানের প্রস্তাবনা কি? বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা কয়টি ও কি কি?
সংবিধানের প্রস্তাবনা

সংবিধানের প্রস্তাবনা কি? বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা কয়টি ও কি কি?

by TRI

সংবিধান একটি রাষ্ট্রের দর্পন স্বরুপ। সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থা, সরকার, নির্বাচন, রাজনৈতিক দল, জনগণের মৌলিক মানবাধিকার, প্রভৃতি সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকে। মূলত এটি হল রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি। সংবিধানের আদলেই একটি রাষ্ট্র তার সর্বাঙ্গীন কার্য পরিচালনা করে। প্রত্যেকটা সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা থাকে। মূলত প্রস্তাবনার মাধ্যমে আইনের উদ্দেশ্য ও নীতি উল্লেখ করা হয়।

সংবিধানের প্রস্তাবনা কি?

সর্বপ্রথম প্রস্তাবনা বিষয়টির ব্যবহার দেখা যায় ১৭৮৭ সালে রচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লিখিত সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা সংযুক্ত করার প্রবণতা অনেকটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রস্তাবনা শুধু সংবিধানে নয়, যে কোন আইনের একটি প্রস্তাবনা থাকে। প্রস্তাবনার কাজ হলো ঐ আইনের সাধারণ উদ্দেশ্য ও নীতির উল্লেখ করা। অর্থাৎ যে আইনটি প্রণীত হয় তার পেছনে আইন সভার বা প্রণেতাগণের উদ্দেশ্য ও ইচ্ছে কি, প্রস্তাবনা সংক্ষেপে তাই ব্যাখ্যা করে। মূলত প্রস্তাবনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণেতাদের ইচ্ছা প্রকাশিত হয়।  এতে ঐ সকল আদর্শ ও নীতির উল্লেখ থাকে যার উপর ভিত্তি করে সংবিধান দাঁড়িয়ে থাকে।

সংবিধানের প্রস্তাবনা নিম্নলিখিত ৩ টি উদ্দেশ্য সাধন করে-

  •  সংবিধানের উৎস তথা নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি সম্পর্কে ইঙ্গিত প্রদান করে।
  •  সংবিধানের উদ্দেশ্য ও নীতিসমূহকে সংক্ষেপে বর্ণনা করে।
  •  সংবিধানের কার্যকরী অংশ না হলেও কার্যকরী অংশের কোন শব্দ বা বাক্যের অর্থ অস্পষ্ট থাকলে প্রস্তাবনার সাহায্যে সংশ্লিষ্ট অংশের অর্থ পরিষ্কার করে নেয়া যায়।

সংবিধানের প্রস্তাবনা ও কার্যকর অংশ

প্রস্তাবনাকে সংবিধানের কার্যকর অংশের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয় না। কারণ-

  • প্রস্তাবনাকে সংবিধান থেকে বাদ দিলেও সংবিধানের কার্যকর অংশের কোন হানি ঘটবে না।
  • প্রত্যেক সংবিধান বা আইনের আবশ্যিকভাবে একটি প্রস্তাবনা থাকবে এমন কথা বলা যায় না। অনেক আইন আছে যাদের কোন প্রস্তাবনা নেই। যেমন- ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের কোন প্রস্তাবনা ছিল না।
  • এটা প্রকৃত ক্ষমতার কোন উৎস নয়। আবার, সংবিধানে যে ক্ষমতার ব্যবহার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিষেধ করেনি সেই ক্ষমতার উপর প্রস্তাবনা কোন সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে পারেনা।

আরও পড়ুন:   সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর

বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা

বাংলাদেশ সংবিধানে ১ টি প্রস্তাবনা, ১১ টি ভাগ, ৪ টি মূলনীতি, ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে-

  • আমরা বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করি (জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের মাধ্যমে) স্বাধীন ও স্বার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।
  • আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।
  • আমরা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করিতেছি যে, আমরা যাহাতে স্বাধীন সত্তায় সমৃদ্ধি লাভ করিতে পারি এবং মানবজাতির প্রগতিশীল আশা-আকাঙ্ক্ষার সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে পূর্ণ ভূমিকা পালন করিতে পারি, সেই জন্য বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তিস্বরূপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুন্ন রাখা এবং ইহার রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য।

নিম্নে বাংলাদেশের সংবিধানে প্রস্তাবনার মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হল-

আইনের শাসন

বাংলাদেশের মূল সংবিধানে যেসব বিধান আনায়ন করা হয়েছিল তাতে আইনের শাসন মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু সংবিধান প্রণয়নের ৯ মাসের মাথায় ২য় সংশোধনী দ্বারা রোধ করা হয়। এরপর ৪র্থ সংশোধনী দ্বারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে একদলীয় শাসন কায়েম করে গণতন্ত্রের পথকে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। অতপর ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার ২৫ বছর পরও আইনের শাসন নিশ্চিত হওয়ার পথ রুদ্ধ ছিল।

নৈতিক ভিত্তি

যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধান বাংলাদেশের জনগণ কর্তৃক রচিত ও গৃহীত হয়েছে এবং এতে জনগণের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটে সুতরাং একে মান্য করা বাংলাদেশী মাত্রের নৈতিক কর্তব্য।

আবার, সর্বোচ্চ আইন হিসেবে সংবিধান হলো দেশের আইন-শৃঙ্খলার ভিত্তি। এটি অমান্য করলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।

Related Posts