শ্রমিক সংঘের উদ্দেশ্য
শ্রমিক সংঘের উদ্দেশ্য হলো শ্রমিক ও শ্রম ব্যবস্থাপনা উভয়পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করা। শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী এ প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবিরত ব্যবস্থাপনার সাথে যৌথ দরকষাকষি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখে। আবার এ সংঘ শ্রমিকদেরকে ব্যবস্থাপনার প্রতি অযৌক্তি দাবি, চাপ প্রয়োগ ও যে কোন প্রকার অপতৎপরতা থেকে বিরত রাখে। তাছাড়া এ সংস্থা শ্রমিকদেরকে তাদের কর্মময় জীবনের নিরাপত্তা, অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এনে দেয়।
নিম্নে শ্রমিক সংঘের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. উপযুক্ত মজুরি আদায়
শ্রমিক সংঘের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শ্রমিকদের জন্য ব্যবস্থাপনার নিকট থেকে উপযুক্ত মজুরি আদায় করা। এক্ষেত্রে শ্রমিক সংঘ বাজারে প্রচলিত দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে উপযুক্ত মজুরির ব্যবস্থা করে। এতে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
২. ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের যেসব আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধাদি প্রদান করে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাস্তবতা বিবর্জিত। শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে শ্রমিক সংঘ ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দাওয়া আদায়ের পথকে সুগম করে। এভাবে শ্রমিকদের ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়।
আরও পড়ুন: শ্রমিক সংঘের কার্যাবলী বর্ণনা কর
৩. কাজের স্বীকৃতি
প্রত্যেক শ্রমিক উত্তম কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদোন্নতি, আর্থিক অনার্থিক সুবিধাদি ব্যবস্থাপনার নিকট থেকে আদায় করতে চায়। কিন্তু কোন একজন শ্রমিক কর্তৃক এসব দাবি আদায়ের প্রতি ব্যবস্থাপনার কর্তৃপক্ষ তেমন গুরুত্ব দেয় না। এক্ষেত্রে শ্রমিক সংঘ শ্রমিকদের পক্ষ হয়ে যৌথ দরকষাকষির মাধ্যমে এসব বিষয় ব্যবস্থাপনার নিকট উত্থাপন করে এবং তা আদায় করে। এভাবে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি মেলে।
৪. নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
সাধারণ শ্রমিকগণ কলকারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। কর্মীদের জীবনধারণের একমাত্র উপায় হলো চাকরি থেকে প্রাপ্ত অর্থ। ফলে চাকরিচ্যুতির ভীতিও তাদের মধ্যে কাজ করে। শক্তিশালী শ্রমিক সংঘ থাকলে এসব নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা বিধান করা সম্ভব হয়।
৫. স্বজনপ্রীতি রোধ
প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক নিয়োগ ও তাদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা তাদের নিজ নিজ আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এতে সাধারণ শ্রমিকগণ বঞ্চিত হয়। এক্ষেত্রে শ্রমিক সংঘ কর্মী নিয়োগ ও তাদের প্রদত্ত সুবিধাদির বৈধতা নিয়ে ব্যবস্থাপনার সাথে যৌথ দরকষাকষির মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা করে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যা কোন একজন শ্রমিকের পক্ষে একা কখনোই সম্ভব নয়।
৬. অনুকূল আইন প্রণয়ন
শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলার একমাত্র সংগঠন হলো শ্রমিক সংঘ। সরকার যখন জাতীয় শ্রমনীতি ও শিল্পনীতি প্রণয়ন করেন তখন শ্রমিকগণ শ্রমিক সংঘকে সংসদে পাঠাতে পারে। এতে শ্রমিক সংঘ সাধারণ শ্রমিকদের স্বার্থের অনুকূলে যাবে এরূপ আইন প্রণয়নে সরকারের নীতিনির্ধারকগণকে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে কিছুটা হলেও শ্রম স্বার্থের অনুকূলে আইন প্রণীত হয়, যা শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।
৭. যৌথ দরকষাকষি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ
শ্রম ব্যবস্থাপনার মধ্যকার সৃষ্ট বিরোধ ও ভবিষ্যতে শিল্প শান্তি বজায় রাখতে যৌথ দরকষাকষি প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে একমাত্র শ্রমিক সংঘই শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবস্থাপনার সাথে যৌথ দরকষাকষি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এতে শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ অনেকাংশে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
৮. শ্রম কল্যাণ নিশ্চিতকরণ
প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিকগণকে সন্তুষ্ট রাখতে হলে মজুরির পাশাপাশি তাদের যাতায়াত সুবিধা, চিকিৎসা সুবিধা, উৎসব ভাতা প্রভৃতি প্রদান করতে হয়। এতে শ্রমিকগণ প্রতিষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্ট ও কাজে অধিক মনোযোগী হয়। এক্ষেত্রে শ্রমিক সংঘই ব্যবস্থাপনার সাথে যৌথ দরকষাকষি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের জন্য কল্যাণমূলক নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে এবং শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
৯. উত্তম শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা
প্রতিষ্ঠানের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি অর্জনে উত্তম শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক সম্পর্কের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরি, কার্য শর্ত, কার্য পরিবেশ, নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে প্রায়ই ব্যবস্থাপনার সাথে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এতে শিল্প শান্তি বিঘ্নিত হয়। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠানে শাক্তিশালী শ্রমিক সংঘ বিদ্যমান থাকলে শ্রম-ব্যবস্থাপনার মাঝে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে উত্তম শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়, যা শিল্প উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।