সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতিসমূহ
বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র বা সংবিধান প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। অধ্যাপক গেটেল সংবিধান প্রণয়নের চারটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন। নিম্নে এ চারটি পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. অনুমোদন
অনুমোদনের মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন করা যায়। রাষ্ট্র উৎপত্তির প্রথমাবস্থায় অধিকাংশ রাষ্ট্রেই স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। শাসনক্ষমতা এককভাবে স্বেচ্ছাচারী রাজার হাতে ন্যস্ত ছিল। গণতান্ত্রিক মূ্ল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক আদর্শ তখনও বিকশিত হয়নি। কালের গতিধারায় অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটতে থাকে এবং তাদের মধ্যে মৌলিক অধিকারের ধারণা জন্মলাভ করে। এমতাবস্থায় জনমতের চাপে বা বিপ্লবের ভয়ে রাজা বা শাসকগোষ্ঠী একটা বিধিবদ্ধ দলিলের মাধ্যমে জনগণের নিকট শাসন ক্ষমতা প্রয়োগ করার অঙ্গীকার করেন। এভাবে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন, রাশিয়ার জার নিকোলাস, অস্ট্রিয়ার রাজা ফ্রান্সিস জোসেফ এবং জাপানের সম্রাট নিজ নিজ দেশের সংবিধান ঘোষণা করেন। আর এটিই হল অনুমোদনের মাধ্যমে সংবিধান প্রতিষ্ঠার প্রকৃত পদ্ধতি।
আরও পড়ুন: সংবিধানের উৎস সমূহ আলোচনা কর
২. গণপরিষদ
ইচ্ছাকৃত রচনার মাধ্যমেও সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। আধুনিক রাষ্ট্রে সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি বিশেষভাবে প্রচলিত। সাধারণত সংবিধান প্রণয়নের জন্য দেশে একটি গণপরিষদ গঠন করা হয়। গণপরিষদের সদস্যগণ খসড়া সংবিধান তৈরি করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে তা অনুমোদিত হলে চূড়ান্তভাবে সংবিধান গৃহীত হয়। কখনও কখনও গণপরিষদে গৃহীত সংবিধানকে অনুমোদনের জন্য গণভোটে পাঠানো হয়। যেমন- বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান।
৩. ক্রমবিবর্তন
কোন রাষ্ট্রের সংবিধান ঐতিহাসিক বিবর্তনের মাধ্যমেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণার প্রসারের ফলে রাষ্ট্রীয় ক্ষতা স্বেচ্ছাচারী শাসকদের কাছ থেকে বাস্তবে ক্রমশ হস্তান্তরিবত হতে পারে। আর জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের ক্ষমতাকেই শেষ পর্যন্ত বৈধ বলে স্বীকৃতি দিতে পারে। এভাবে প্রচলিত রাজনৈতিক রীতিনীতিকে নিয়ে সংবিধানের ক্রমবিকাশ ঘটে। এর প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে ব্রিটিশ সংবিধান।
৪. বিপ্লব
বিপ্লবের মাধ্যমেও অনেক সময় সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হয়। বিপ্লব তখনই ঘটে যখন প্রচলিত সরকার ও সরকারের অত্যাচার উৎপীড়নে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে যখন এ ধরনের সরকারের উৎখাত সম্ভব হয় না, তখনই জনগণ বিপ্লবের পথ ধরে সরকারকে পরাভূত করে। বিপ্লব উত্তরকালে বিপ্লবী পরিষদই নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে। আবার কখনও সংবিধান কমিশনের উপর শাসনতন্ত্র প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করে। এসব ক্ষেত্রে জনগণের অনুমোদনের জন্য গণভোটেরও ব্যবস্থা করা হয়। রাশিয়াতে এবং স্পেনে উক্ত পদ্ধতিতে সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত পদ্ধতিগুলো ছাড়াও পরিষদের মাধ্যমেও সংবিধান প্রণীত হয়ে থাকে। তবে এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রণীত সংবিধান বর্তমান পৃথিবীতে খুবই বিরল। সাবেক পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান এ পদ্ধতিতে রচিত হয়েছিল। অবশ্য পরবর্তীতে এ সংবিধানের পরিবর্তে নতুন এক সংবিধান প্রণীত হয়।