মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার মধ্যমণি হল রাষ্ট্রপতি। শাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রের শাসন সংক্রান্ত সকল কর্তৃত্ব তাঁর হাতে ন্যস্ত। এছাড়াও তিনি আইন প্রণয়ন ও বিচার সংক্রান্ত কাজেও প্রভাব বিস্তার করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি অসাধারণ সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী। তিনি একাধারে নৃপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মান ও আসনের অধিকারী। ক্লিনটন রসিটার বলেছেন, “The president is the central figure in the American system.”
মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বিভিন্ন উৎস রয়েছে। যথা-
১. মার্কিন সংবিধান,
২. কংগ্রেস প্রণীত আইন,
৩. সংবিধান সম্পর্কে সুপ্রীম কোর্টের ব্যাখ্যা,
৪. প্রথা ও রীতিনীতি,
৫. বিভিন্ন রাষ্ট্রপতিদের ভূমিকা।
মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. শাসন বিভাগীয় ক্ষমতা,
২. আইন বিভাগীয় ক্ষমতা,
৩. বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা।
নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হল-
১. শাসন বিভাগীয় ক্ষমতা
মার্কিন সংবিধানের ২নং ধারায় বলা হয়েছে, “All executive powers shall be vested in a president.” শাসন বিভাগীয় ক্ষমতাগুলো নিম্নরূপ-
ক. আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত
সংবিধানের নির্দেশ অনুযায়ী সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করা রাষ্ট্রপতির প্রধান কর্তব্য। এ গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য তিনি শাসন বিভাগের কর্মচারী এবং বিভিন্ন এজেন্সিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সাহায্য নিয়ে থাকেন। তিনি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে “National Laws” প্রয়োগ করতে পারেন।
সম্পর্কিত বিষয়
খ. নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা
মার্কিন রাষ্ট্রপতি সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী নিয়োগ ও পদচ্যুত করতে পারেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের বিচারক, কূটনিতক দূত, কেবিনেটের সদস্য, বাণিজ্যিক প্রতিনিধি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের নিয়োগ করতে পারেন।
গ. সামরিক ক্ষমতা
দেশের সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে রাষ্ট্রপতি দেশরক্ষা, সৈন্যবাহিনী গঠন, বিদেশে সৈন্য প্রেরণ, অন্যদেশ আক্রমণ ইত্যাদি সামরিক দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধাবসানের ব্যাপারেও রাষ্ট্রপতির একক ক্ষমতা রয়েছে।
ঘ. যুদ্ধকালীন বিশেষ ক্ষমতা
যুদ্ধকালীন অবস্থায় রাষ্ট্রপতি নিয়মতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। তিনি সৈন্য প্রেরণ, যুদ্ধ প্রণালী, অস্ত্রশস্ত্র প্রয়োগ প্রভৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে একক ক্ষমতার অধিকারী।
ঙ. বৈদেশিক ক্ষমতা
সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি “Executive Agreement” এর মাধ্যমে রাষ্ট্রদূত ও বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদের নিয়োগ, অন্যদেশের রাষ্ট্রদূতদের গ্রহণ, বৈদেশিক চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি পররাষ্ট্র বিষয়ক কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকেন।
চ. জরুরি অবস্থাকালীন সময়
দেশের সংকটকালীন পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির এক্তিয়ার ও নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়।
২. আইন বিষয়ক ক্ষমতা
সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়ন ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে ন্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি বিভিন্নভাবে কংগ্রেসের আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজকে প্রভাবিত করেন। নিম্নে রাষ্ট্রপতির আইন বিষয়ক ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করা হল-
ক. কংগ্রেসের বাণী প্রেরণের ক্ষমতা
সংবিধানের ২নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি দেশের সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষিতে লিখিত বাণী প্রেরণ বা মৌখিকভাবে তথ্য পাঠিয়ে কংগ্রেসকে আইন প্রণয়নে সাহায্য করতে পারেন।
খ. বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের ক্ষমতা
জরুরি কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন।
গ. ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা
কংগ্রেসের পাসকৃত বিল রাষ্ট্রপতির কাছে এলে ১) রাষ্ট্রপতি বিলে স্বাক্ষর দিতে পারেন, ২) ভেটো দিতে পারেন এবং ৩) আটকে রাখতে পারেন “পকেট ভেটো” এর মাধ্যমে।
ঘ. অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতা
“Budget Bureau” এর সহায়তায় বাজেট ও হিসাব রক্ষা আইন অনুসারে রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন বিভাগের আনুমানিক ব্যয় বরাদ্দ হ্রাস, বৃদ্ধি বা সংশোধন করতে পারেন।
ঙ. শাসন বিভাগীয় আদেশ জারির ক্ষমতা
রাষ্ট্রপতি কংগ্রেস প্রণীত আইনের ফাঁকগুলো পূরণ করার জন্য ‘Executive order’ বা ‘Ordinance’ জারি করতে পারেন।
চ. কমিশন গঠন
রাষ্ট্রপতি ক্ষেত্রবিশেষে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাদির সমাধানকল্পে কমিশন গঠন করতে পারেন।
৩. বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা
রাষ্ট্রপ্রধান ও শাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছায় বিচার বিষয়ক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। তিনিই সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের নিযুক্ত করেন, কিন্তু তাদেরকে পদচ্যুত করতে পারেন না। তিনি অপরাধীদের দণ্ডাদেশ স্থগিত করতে পারেন এবং এ ব্যাপারে অন্য কারও সম্মতির প্রয়োজন হয় না। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিচার বিভাগীয় ক্ষমতায় নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারেন
ক. তিনি দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে পারেন।
খ. তিনি দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ড হ্রাস করতে পারেন।
গ. তিনি দণ্ডিত ব্যক্তিকে ক্ষমাও করতে পারেন।
ঘ. তিনি ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত অপরাধীকেও ক্ষমা প্রদর্শন করতে পারেন।