দার্শনিক রাজার উৎস
প্লেটো প্রদর্শিত দার্শনিক রাজার শাসন সক্রেটিসের “সৎগুণই জ্ঞান” এ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হল, যে ব্যক্তি প্রকৃত ও পূর্ণ জ্ঞানের সন্ধান পেয়েছেন তিনি জানেন যথার্থ সত্যতা বা পুণ্য কি?
প্লেটোর মতে, যিনি দার্শনিক কেবলমাত্র তিনি এসব জ্ঞানের অধিকারী। তাছাড়া আদর্শ রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বোত্তম নাগরিক ও সর্বোত্তম মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং, কোন রাষ্ট্রের যথার্থ আদর্শ রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করতে হলে শাসনের ভার দার্শনিক শাসকের হাতে অর্পণ করা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই।
প্লেটোর দার্শনিক রাজার বৈশিষ্ট্য
প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্ট্র পরিকল্পনায় ক্ষমতার শীর্ষমণি হিসেবে যে দার্শনিক রাজার চিন্তা করেছেন তার মধ্যে অবশ্যই নিম্নলিখিত গুণাবলি থাকতে হবে-
১. চরম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী: দার্শনিক রাজা তার প্রজ্ঞা দ্বারা রাষ্ট্র শাসন করার ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ ক্ষমতাশালী হবেন।
২. সর্বোত্তম জ্ঞানের অধিকারী: প্লেটোর মতে, আদর্শ রাষ্ট্রে যতজন নাগরিক থাকবে তাদের মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থা সম্পাদনের শেষে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিটিই হবেন দার্শনিক রাজা।
আরও পড়ুন: প্লেটোর ন্যায়বিচার তত্ত্ব বা ন্যায়তত্ত্ব
৩. সৎ ও সুপূজারী: প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রে যেসব ঘটনা ঘটবে তাদের মধ্যে যেগুলো সত্য, সুন্দর ও বাস্তবসম্মত দার্শনিক রাজা সেগুলোকে গ্রহণ করবেন। আর যেগুলো অসত্য সেগুলো তিনি বর্জন করবেন।
৪. উদার অন্তর ও সংস্কারমুক্ত মন: মানুষ যত বেশি জ্ঞানী হয় তার মন ততবেশি উদার ও সংস্কারমুক্ত থাকে। দার্শনিক রাজা রাষ্ট্রের বাস্তব প্রয়োজন মোতাবেক একজন উদার ও মননশীল সংস্কারমুক্ততার পরিচয় দিবেন সর্বক্ষেত্রে।
৫. বাস্তববাদী হওয়া: রাষ্ট্রকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে,মানুষকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষকে দ্বিধাদ্বন্দ্বের উর্ধ্বে তুলতে হলে অবশ্যই দার্শনিক রাজাকে বাস্তববাদী হতে হবে।
৬. নির্লোভী ও অসাংসারিক: দার্শনিক রাজা অর্থসম্পদের প্রতি নির্লোভী এবং অসাংসারিক হবেন। তার কোন পারিবারিক জীবন থাকবে না। তবে তার জীবনধারণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিতরে তার ব্যবস্থা থাকবে।
৭. নির্মল চরিত্রের অধিকারী: দার্শনিক রাজার মধ্যে কোন কলঙ্কের ছাপ থাকবে না। তার চরিত্রে থাকবে সঙ্গীতের অমিয় মূর্ছনা এবং স্বভাব হবে স্বর্গীয় দীপ্তির ভাস্কর।
৮. সকল আইনের উর্ধ্বে: প্লেটোর মতে, দার্শনিক রাজা সকল আইনের উর্ধ্বে। তিনি ক্ষমতায় বসে আইন মেনে না চললে তাকে বাধ্য করা কারও পক্ষে সম্ভব হবে না। তেমনি তিনি যদি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন রা করেন, তবেও তাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন আইনের প্রয়োজন হবে না।