প্রাথমিক তথ্য
যে তথ্য প্রাথমিকভাবে এবং সর্বপ্রথম মূল অনুসন্ধান ক্ষেত্র হতে ব্যাপক অনুসন্ধানের মাধ্যমে সরাসরি কোনো সংস্থা কর্তৃক সংগৃহীত হয় তাকে প্রাথমিক তথ্য বলা হয়। প্রাথমিক তথ্য হলো পরিসংখ্যানের প্রাথমিক রূপ। একে পরিসংখ্যানমূলক কাজের জন্মগত ফল বলা যেতে পারে এবং এর উপরই প্রথম পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তাই আমরা এভাবেও বলতে পারি, যে তথ্যের উপর কোনোরূপ পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়নি তাকেই প্রাথমিক তথ্য বলা হয়। প্রাথমিক তথ্যসমূহ মূল উৎসের মধ্যে সম্পৃক্ত হয়ে অবস্থান করে বলে তাকে সংগ্রহ করলেও পরিশোধিত অবস্থায় পাওয়া যায় না। এটি এলোমেলো অবস্থায় পাওয়া যায়। সেজন্য এক কাঁচা তথ্যও বলা হয়।
প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি
সাধারণভাবে তথ্য সংগ্রহ বলতে আমরা বুঝি প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের কথা। কারণ এ তথ্যের উপর নির্ভর করে মাধ্যমিক তথ্য, সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা ইত্যাদি। এসব বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েই প্রাথমিক তথ্য পুরোপুরি সঠিক হওয়া একান্ত জরুরি। এ প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানকারীকে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। নিম্নে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচনা করা হলো-
ক) প্রত্যক্ষ ব্যক্তিগত অনুসন্ধান
এ পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষক একাকী অনুসন্ধান চালান। তিনি অনুসন্ধানের জায়গায় গিয়ে কিছুকাল অবস্থান করেন এবং সে এলাকা সম্পর্কে একটি ধারণা বা সিদ্ধান্তে উপনীত হন এবং ঐ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করেন।
আরও পড়ুন: নমুনা বিচ্যুতি কি?
খ) পরোক্ষ পর্যবেক্ষণ
যে সকল ক্ষেত্রে উত্তরদাতা সঠিক উত্তরদানে ইতস্ততবোধ করেন সে সকল ক্ষেত্রে পরোক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এখানে অনুসন্ধানকারী তৃতীয় ব্যক্তির ভূমিকা রাখে। তিনি আরো কয়েকজনের বিবৃতির মাধ্যমে উত্তরদাতা সম্পর্কিত তথ্য আদায় করেন। যেমন- কোনো এলাকায় মাদক চোরাকারবারির সংখ্যা জানতে হলে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে উক্ত এলাকায় বসবাসরত বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
গ) অনুসন্ধানকারী নিয়োগ করে অনুসন্ধান
এ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনুসন্ধানকারীকে তথ্য সংগ্রহের কাজে লাগানো হয়। তারা অনুসন্ধান ক্ষেত্রে গিয়ে দুটি পদ্ধতিতে তথ্যমালা অনুসন্ধান করেন। প্রথমত অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত প্রশ্নমালা নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। দ্বিতীয়ত তথ্য সংগ্রহকারী সেখানে প্রত্যক্ষ অনুসন্ধানের মাধ্যমে কারো সাহায্য ব্যতীত সরাসরি তথ্যমালা লিপিবদ্ধ করতে পারেন। উল্লিখিত দুটি পদ্ধতির মধ্যে দ্বিতীয়টি বেশি নির্ভরযোগ্য, যদিও এর ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত। অনেক ক্ষেত্রে এটি অসম্ভব।
ঘ) স্থানীয় সংবাদদাতা নিয়োগ পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন থানায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রতিনিধি নিয়োগ করেন। তারা সেখানে সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করেন। এর ফলে সে এলাকা সম্পর্কে তাদের মোটামুটি ধারণার সৃষ্টি হয়। এ ধারণার উপর ভিত্তি করে এবং কখনও কখনও সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তারা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তার প্রতিষ্ঠানের নিকট পাঠিয়ে দেন। শস্যের উৎপাদন, বন্যা পরিস্থিতি, অগ্নি ও ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ ইত্যাদি এই পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব।
ঙ) প্রশ্নপত্র পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে চিঠিপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মাধ্যমে অনুসন্ধানকর্তা একটি প্রশ্নপত্র ডাকযোগে উত্তরদাতার নিকট পাঠান এবং চিঠিতে উত্তরদাতাকে ঐ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে অনুরোধ করেন। উত্তরদাতা তা পূরণ করে পুনরায় ডাকযোগে অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট পাঠিয়ে দেন। পরে এই উত্তরের উপর ভিত্তি করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রশ্নমালা প্রণয়ন করাই এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে কৌশলের কাজ। প্রশ্নমালা প্রণয়নের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ হওয়া প্রয়োজন-
১) প্রশ্ন সহজবোধ্য হতে হবে এবং তার উত্তর যেন হ্যাঁ বা না হয়।
২) অপ্রয়োজনীয় ও বিরক্তিকর প্রশ্ন না দেয়াই ভালো।
৩) প্রশ্নের সাথে প্রশ্নমালা পূরণের নিয়মাবলি লিখে দিতে হবে।
৪) ক্ষেত্রবিশেষে প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর প্রশ্নের সাথে লিখে দিতে হবে।
৫) তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা প্রশ্নে উল্লেখ করা উচিত।
চ) টেলিফোন সাক্ষাৎকার
অনেক সময় জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প সময়ে অধিক তথ্য সংগ্রহের জন্য এ পদ্ধতির আশ্রয় নেয়া হয়। এতে তথ্য সংগ্রহকারী টেলিফোনের মাধ্যমে উত্তরদাতার সাক্ষাৎকার নেন এবং তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রাহকের ব্যবহার মার্জিত ও কণ্ঠস্বর যথেষ্ট সুমধুর হওয়া খুবই দরকার।