Home » ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য

ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য

by TRI

ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্র ও আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তাঁর `Essays in Sociology‘ এবং ‘The Theory of Social and Economic Organization‘ গ্রন্থে আলোচনা করেছেন। তিনি কার্ল মার্কস দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমলাতন্ত্রকে বর্তমানকালের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত করে ব্যাখ্যা দান করেছেন। তিনি আমলাতন্ত্রের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা বিশ্বের Ideal type of Bureaucracy নামে সুপরিচিত।

Max Weber এর মতে, “Bureaucracy means a system of Govt. where department officially at upper levels have their voice heard and given due consideration.”

Max Weber তাঁর সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ `Essays in Sociology‘-তে আমলাতন্ত্রের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা বলেছেন।

১। নিয়মকানুন

সকল দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে যা সাধারণভাবে আইন ও প্রশাসনিক বিধিবিধান দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।

২। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনটি এক সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি বেষ্টিত। এ সংগঠনের প্রতি সদস্যকে তাঁর নিজ নিজ ক্ষেত্রে কার্য সম্পাদন করতে হয়। তাদের কর্ম পরিধি আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।

৩। কর্মবিভাগ ও কর্ম বিশেষীকরণ

কর্মবিভাগ ও কর্মবিশেষীকরণের উপর আমলাতান্ত্রিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত। কোন কাজের একটি বিশেষ অংশ সম্পাদনের জন্য কর্মচারীদের মেধা ও  যোগ্যতার ভিত্তিতে বাছাই করা হয়।

। পদক্রমনীতি

পদক্রমনীতি অনুসরণ করে চলে আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে উর্ধ্বতন ও অধস্তনদের মধ্যে সম্পর্ক বজায় থাকে। অধস্তন অফিসটি উর্ধ্বতন অফিসের অধীন থেকে কর্মসম্পাদন করে থাকে।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকরণের কারণ ও প্রভাব

৫। নিয়োগ নীতি

আমলাতান্ত্রিক সংগঠন নিয়োগ নীতির দ্বারা পরিচালিত। এতে কর্মচারীদের নির্বাচনের পরিবর্তে নিয়োগ করা হয়।

৬। বৃত্তিগত ব্যবস্থাপনা

কর্মচারীদের টেকনিক্যাল জ্ঞানের ভিত্তিতে আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কর্মচারীদের নিয়োগ করা হয় লিখিত পরীক্ষা বা টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেটের মাধ্যমে। কর্মচারীদের এ জ্ঞান পরীক্ষা করা হয়। ওয়েবার এভাবে আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের ক্ষেত্রে বৃত্তিগত ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

৭। বিধিবিধান

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কার্য পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান থাকা অপরিহার্য। এতে সংগঠনের নীতিমালাসমূহ লিপিবদ্ধ থাকবে এবং সংগঠনে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন।

৮। বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কর্মচারীবৃন্দ তাদের বেতন ভাতাদি বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। চাকরি থেকে অবসরকালে পেনশন ভোগ করেন। কর্মচারীদের পদক্রমে বেতন স্কেলের শ্রেণিবিন্যাস করা হয় এবং উক্ত পদের দায়িত্ব এবং কর্মচারীদের সামাজিক পদমর্যাদার উপর তাদের বেতন ও ভাতা নির্ভর করে।

৯। লিখিত বিধান

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের প্রশাসনিক কার্যসমূহ সিদ্ধান্ত এবং বিধিবিধান লিখিতভাবে রেকর্ড ও উপস্থাপিত হয়ে থাকে। এমনকি সে ক্ষেত্রে মৌখিক আলোচনা যুক্তিযুক্ত এবং একান্তভাবে কাম্য।

১০। প্রধান জীবিকা

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে অফিসকে কর্মচারীদের প্রধান জীবিকা বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ, নিজ অফিসকে জীবিকা হিসেবে সংগঠনের কর্মচারীরা গ্রহণ করে।

১১। স্বাধীনচেতা

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে প্রতিটি অফিস বা পদ একটি পারস্পরিক স্বাধীন চুক্তির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এ স্বাধীন চুক্তির কারণে স্বাধীন নিয়োগ সম্ভব হয়। তবে কর্মচারীরা ব্যাক্তিগতভাবে স্বাধীন হলেও কর্মের জন্য তারা কর্তৃপক্ষের নিকট দায়ী থাকেন।

১২। পদমর্যাদা ভোগ ও ব্যবহার

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে কর্মচারীদের টেকনিক্যাল জ্ঞানের ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। লিখিত পরীক্ষা কিংবা টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেটের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়।

১৪। পদোন্নতি

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে কর্মচারীদের দক্ষতা, যোগ্য ও জ্যেষ্ঠত্ব নীতির উপর ভিত্তি করে পদোন্নতি প্রদান করা হয়।

১৫। সাংগঠনিক ক্রিয়াকলাপ

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে কর্মচারীদের পরিপূর্ণভাবে সংগঠনের উৎপাদন বা প্রশাসনিক হাতিয়ারের মালিকানা হতে পৃথক থাকতে হয়। সংগঠনের সম্পত্তি এবং কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মধ্যে পার্থক্য থাকবে।

১৬। অরাজনৈতিক ও নির্দলীয়

আমলাতন্ত্র অরাজনৈতিক ও নির্দলীয় সংগঠন হিসেবে কাজ করবে। রাজনৈতিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত না থেকে নিরপেক্ষভাবে নিয়ম মাফিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।

ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্রকে একটি সর্বজনীন ধারণা এবং সঠিক হিসেবে তুলে ধরেছেন। আন্তর্জাতিক সংগঠন ব্যবসায় বাণিজ্যিক সংগঠন, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা ধর্মীয় সংগঠন সকল ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র বিদ্যমান থাকে।

Related Posts