Home » প্রকল্প কি? প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি? (আপডেটেড ২০২৩)

প্রকল্প কি? প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি? (আপডেটেড ২০২৩)

by TRI

বর্তমান বিশ্বে উন্নত, উন্নয়নশীল সব দেশেই ‘প্রকল্প’ সম্পর্কিত অধ্যয়নের পরিধি দিন দিন বেড়ে চলেছে। কেননা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার তাগিদে এবং উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছার লক্ষ্যে সঠিক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সমাজ উন্নয়নমূলক নানামুখী গবেষণা-প্রকল্প উন্নয়ন কর্মকান্ডের পূর্বশর্ত হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। মূলতঃ শিল্প বিপ্লবোত্তর সময়ে উৎপাদন ব্যবস্থা ও সমাজ ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে প্রকল্প নকশা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। বিভিন্ন প্রকল্পবিদ, গবেষক ও শিক্ষাবিদদের কাছে তাই এই ধারণাটির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়।

প্রকল্প কি?

প্রকল্প (Project) শব্দটি ল্যাটিন ‘Projicere’ থেকে উদ্ভূত, যার ইংরেজী অর্থ ‘To throw forth’ (অগ্রে নিক্ষেপ করা)। বর্তমান সময়ে প্রকল্প বলতে মূলত বিনিয়োগ কর্মকান্ডের ক্ষুদ্রতম একককে বুঝায়, তবে বাস্তব প্রয়োজনে এই শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কখনো কখনো প্রকল্পকে শুধু ধারণা, স্কিম বা পরিকল্পিত এন্টারপ্রাইজ হিসাবে মনে করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে প্রকল্পের সকল অর্থই সঠিক হলেও প্রকল্পকে সাধারণভাবে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলা যায়- একটি নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সীমাবদ্ধ সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে কতগুলো অর্থপূর্ণ কার্যাবলির সমষ্টি হচ্ছে প্রকল্প।

নবি জীবনের গল্প: আরিফ আজাদ - Nobi Jiboner Golpo: Arif Azad

TK. 290 TK. 203 You Save TK. 87 (30%)

ব্যাপক অর্থে প্রকল্প হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করার প্রয়াস যার সময়কাল সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘ হতে পারে, আকারও ছোট বা বৃহৎ হতে পারে, যার পরিমাপযোগ্যতা আছে এবং যা কোন বিচ্ছিন্ন কাজ না হয়ে ইউনিট কাজ হবে।

The Encyclopedia of Management অনুযায়ী, প্রকল্প হল একটি সংগঠিত ইউনিট যা পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচীর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্দিষ্ট বাজেট ও সঠিক সময়ের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে উন্নয়ন কর্মসূচী সম্পাদনে মনোনিবেশ করে।

আরও পড়ুন:  প্রকল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

প্রকল্পের বৈশিষ্ট্যসমূহ

উদ্দেশ্য, কার্যধারা, আভ্যন্তরীণ পরিবেশ প্রভৃতি দিক থেকে প্রকল্পের কতকগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে প্রকল্পের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হল-

১) সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য : এক বা একাধিক সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য এককালীন যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়, তা হলো প্রকল্প। উদ্দেশ্য অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের পরিসমাপ্তি ঘটে। কোনো পৌনঃপুনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয় না।

২) সময় সীমা : প্রতিটি প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। অর্থাৎ প্রকল্প শুরু ও শেষ করার সুনির্দিষ্ট সময় থাকে।

৩) বাজেট বরাদ্ধ : প্রতিটি প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে এবং সেই মোতাবেক বাজেট বরাদ্দ করা হয়। কোন খাতে কত ব্যয় হবে তা নির্ধারণ করে অর্থের বরাদ্দ করা হয়।

৪) জটিল পারস্পরিক নির্ভরশীলতা : একটি প্রকল্প অন্য প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল হতে পারে। তবে প্রতিটি প্রকল্পই তার মূল প্রতিষ্ঠান বা বিভাগের উপর নির্ভরশীল। এটা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণভাবে নির্ভরশীল। এছাড়া একটা প্রকল্পে বিভিন্ন পরিবেশ এবং পেশা থেকে আসা মানুষ একত্রিত হয়। বিভিন্ন পরিবেশের প্রভাব এবং বিচিত্র পেশার মানসিকতার লোকজন প্রকল্পের স্বার্থে পারস্পরিক নির্ভরশীল হয়ে কাজ করে। অতএব স্বাভাবিকভাবেই প্রকল্পে জটিল পারস্পরিক নির্ভরশীলতার লক্ষ্য করা যায়।

৫) সীমাবদ্ধ সম্পদ : প্রতিটি প্রকল্পের জন্য সীমিত সম্পদ বরাদ্দ থাকে যার দ্বারা শ্রম, যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হয়। এই সীমাবদ্ধ সম্পদ দিয়েই প্রকল্পের কাজ সম্পাদন করতে হয়।

৬) অদ্বিতীয়তা : প্রতিটি প্রকল্প একে অপরের থেকে আলাদা। প্রকল্পের পরিচালনা বা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনেকটা একরূপ হলেও প্রতিটি প্রকল্প একে অপরের থেকে আলাদা, যেমন- গবেষণা প্রকল্পের ক্ষেত্রে এটি লক্ষণীয়। এছাড়া নির্মাণ প্রকল্পগুলো সাধারণত একই রকম মনে হলেও এক প্রকল্পের পরিবেশ ও অভিজ্ঞতা অন্য প্রকল্পের অনুরূপ নয়, যার ফলে প্রকল্পের কার্যক্রম রূটিন কাজের ন্যায় নয়।

৭) ঝুঁকি : প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যে ঝুঁকি অন্তর্ভূক্ত থাকে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে প্রকল্পকে বাস্তবায়ন করা হয়।

৮) বিরোধপূর্ণ পরিবেশ : যেকোনো প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন পরিবেশ থেকে বিভিন্ন শ্রেণির যথার্থ সংশ্লিষ্ট মানুষের সমাগম ঘটে। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন, নেতৃত্ব এবং জবাবদিহিতা নিয়ে বিরোধপূর্ণ পরিবেশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

৯) ভৌগলিক সীমারেখা : প্রতিটি প্রকল্পের একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা থাকবে। তবে নির্দিষ্ট উদ্দশ্যকে সামনে রেখে সেই সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

১০) সুবিধাভোগী শ্রেণি : সাধারণত সুবিধাভোগী শ্রেণিকে লক্ষ্য করে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যেমন- বয়স্ক ভাতার প্রকল্প নিলে বয়স্কদের সুবিধার কথা বিবেচনা করা হয়।

১১) প্রয়োজনীয় পরিবর্তন : প্রকল্পের উদ্দশ্যকে অর্জনের জন্য অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনয়ন করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে বাস্তবতার ভিত্তিক প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনয়ন করা হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণত যে কোনো প্রকল্পের মধ্যে লক্ষণীয় বা রূটিন কার্যক্রম হতে স্বতন্ত্র।

Related Posts