প্রকল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আগ্রগতির জন্য প্রকল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রতিটি দেশ এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে উন্নয়ন পরিকল্পনার সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে এবং সেই প্রকল্পসমূহে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পদ বিনিয়োগ করা হয় যাতে জাতীয় উন্নয়ন অব্যাহত থাকে।
নিম্নে প্রকল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১) কর্মসংস্থান : সাধারণত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের চেষ্টা চালানো হয়। অর্থাৎ প্রকল্পের মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। মূলত প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকবলের দরকার পড়ে। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
২) সম্পদের সদ্ব্যবহার : প্রকল্পসমূহ দেশের সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে সহযোগিতা করে থাকে। কোনো দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করে সম্পদের সদ্ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমনি- ব্রান ওয়েল তৈরির জন্য ধানের তুষ ব্যবহার করা হয়। আবার আমাদের দেশের গ্যাস ব্যবহার করে পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিনের উপর চাপ কমানো যায় এবং আমদানি হ্রাস করা যায়।
আরও পড়ুন: প্রকল্প কি? প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি?
৩) জাতীয় আয় বৃদ্ধি : কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিগত ও Corporate পর্যায়ে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী প্রকল্প গ্রহণ করলে আমদানি হ্রাস ও রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। ফলে বিদ্যমান দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।
৪) জাতীয় গর্ব : কোনো কোনো প্রকল্প দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনে এবং দেশের ঐহিত্যকে সংরক্ষণ ও উপস্থাপন করে। যেমন- প্রশ্নতাত্ত্বিক প্রকল্পসমূহ।
৫) জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন : জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও প্রকল্পের গুরুত্ব অনেক। কোনো কোনো দেশে নতুন নতুন ব্যবসায়িক ও সেবামূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হলে উক্ত দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটে। অর্থাৎ তারা উন্নতমানের নতুন নতুন পণ্য ও সেবা ভোগ করতে পারে।
৬) আত্ম নির্ভরশীলতা : কোনো দেশে বিশেষ কোনো খাতকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারিভাবে এবং বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে উক্ত দেশে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন হয়। যেমন- বিদ্যুৎ উৎপাদনে কুইক রেন্টাল প্রকল্প, বিদ্যুতের সমস্যা মেটাতে অনেকটা সাহায্য করেছে, ঔষধ শিল্প, ক্লিনিক ইত্যাদি।
৭) অবকাঠামোগত উন্নয়ন : অনেক সময় কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে সামাজিক লাভকে লক্ষ্য রেখে। আর এজন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয় যা পরোক্ষভাবে ব্যবসা বাণিজ্যকে সহায়তা করে। যেমন- পদ্মা সেতু, ফ্লাই ওভার, মেট্রোরেল ইত্যাদি।
৮) সামাজিক সেবা : প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্ব হলো সামাজিক সেবা প্রদান। কোনো দেশের জনগণের মধ্যে সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যেমন- হাসপাতাল, স্কুল স্থাপন, তথ্যকেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি।
৯) সচেতনতা বৃদ্ধি : বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হয়। যেমন- যৌতুক নিরসন, এ্যাসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি।
১০) সমাজকল্যাণ : সমাজে বসবাসকৃত লোকজনের কল্যাণের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং এনজিও গুলো বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে। যেমন- মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্র, বয়স্ক ভাতা, বয়স্ক শিক্ষা ইত্যাদি।
১১) শিশু উন্নয়ন : শিশুরাই বর্তমান প্রজন্মের উত্তরসূরি। তাদের উন্নয়নের উপরই দেশ ও সমাজের উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের উন্নয়ন সাধনের চেষ্টা করা হয়ে থাকে। যেমন- টিকাদান কর্মসূচি, শিক্ষার জন্য প্রকল্প ইত্যাদি।
১২) নারী উন্নয়ন : বাংলাদেশের প্রায় ৫০% নারী। তাই নারীদের উন্নয়ন ছাড়া দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই নারীদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যেমন- বিধবা ভাতা প্রকল্প, মেয়েদের উপবৃত্তি প্রকল্প, বয়সক ভাতা প্রকল্প ইত্যাদি।
প্রকল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করে বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও সমাজে প্রকল্পের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, সামাজিক কল্যাণের জন্যও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে যাতে সমাজে আর্থসামাজিক উন্নয়ন স্থিতিশীল ও ত্বরান্বিত হয়।