Home » লোকপ্রশাসনে বিশ্বায়নের প্রভাব আলোচনা কর

লোকপ্রশাসনে বিশ্বায়নের প্রভাব আলোচনা কর

by TRI

বর্তমানে সারাবিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত এবং একই সাথে সবচেয়ে সমালোচিত প্রত্যয় হচ্ছে বিশ্বায়ন। বিশ্বায়ন বা Globalization নতুন কোন ধারণা নয়। বর্তমান একবিংশ শতকের একটি অন্যতম আলোচিত ঘটনা হল এই বিশ্বায়ন। বিশ্বায়ন সমগ্র পৃথিবীকে একই ছাতার নিচে আনতে সক্ষম না হলেও পৃথিবীর মানুষদের খুব কাছাকাছি আনতে সক্ষম হয়েছে। আর জনপ্রশাসন হিসেবে লোকপ্রশাসনেও বিশ্বায়নের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। 

বিশ্বায়ন (Globalization)

ইংরেজি Globalization শব্দের বাংলা পরিভাষা হল বিশ্বায়ন। Global এবং Localization শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত Globalization শব্দটি। যার অর্থ যথাক্রমে বৈশ্বিক ও যন্ত্রপাতির দেশীয়করণ। বিশ্বায়ন শব্দটি ১৯৮০ সালের মধ্য থেকে এর ব্যবহার শুরু হলেও ১৯৯০ এর দশক থেকে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বিভিন্নভাবে বিশ্বায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তাদের কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হল-

বিশ্ববাদের প্রবক্তা, রক্ষণশীল অর্থনীতিবিদ Thomas Friedman তার দি নোক্সাস এবং অলিভ ট্রি গ্রন্থে বলেছেন, “বিশ্বায়ন কোনো প্রপঞ্ঝ নয়, এটি কেবল একটি সাময়িক প্রবণতা নয়, আজকের দিনে এটি হচ্ছে সর্বব্যপ্তি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, যা বিশ্বের প্রায় সব দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।”

আমারেকিার Sociological Association এর মতে, “বিশ্বায়ন হল ঐতিহ্যগত বা প্রচলিত পদ্ধতিতে একটি নতুন পরিবেশ তৈরি করার প্রক্রিয়া এবং এর জন্য মুক্ত বিনিয়োগ ও মুক্ত বাজার ব্যবস্থা প্রচলনের বা উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”

ক্যামব্রীজ ডিকশনারি অনুসারে, “Globalization means the situation in which available goods and services or social and cultural influences gradually become similar in all parts of the world.”

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, বিশ্বায়ন হল একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংস্থা বিশ্বজুড়ে নিজেদের মধ্যে নানাপ্রকার সম্পর্ক গড়ে তোলে।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশে মন্ত্রী-সচিব সম্পর্কের প্রকৃতি নিরুপন কর। তাদের লোকপ্রশাসন সম্পর্কের ভারসাম্যের জন্য কিছু ব্যবস্থা সুপারিশ কর।

লোকপ্রশাসনে বিশ্বায়নের প্রভাব

লোকপ্রশাসন বলতে সরকারি প্রশাসন ও সরকারি কর্মকান্ডের বাস্তবায়নকে বুঝায়। সরকারি কর্মকান্ড বাস্তবায়নে বিশ্বায়ন কতটা প্রভাব বিস্তার করে নিম্নে তা আলোচনা করা হল-

১) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি:

লোকপ্রশাসনকে আরও সমৃদ্ধ ও কার্যকর করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবদান অনেক। আর এই তথ্য প্রযুক্তি বিশ্বায়নেরই অবদান। তাই বিভিন্ন ব্যক্তি, গ্রুপ এবং প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের মাধ্যমে লোকপ্রশাসনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সম্পর্ক সমূহ নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকপ্রশাসনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বৈপ্লবিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

২) দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা:

বিশ্বায়নের প্রভাবে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে এখন বিশ্বায়নের প্রভাবে তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে চায়। আর দক্ষতা বৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য তাদের বিশ্বায়নের দ্বারস্থ হতে হয়। আরো অধিক উন্নত সেবা সরবরাহ করতে সরকারি আমলারাও অপচয় কমিয়ে আউটপুট বৃদ্ধির চেষ্টা চালায়। সম্পদ অপ্রতুল দেশসমূহে streamlining, downsizing, privatizing, এবং a new of managing ইত্যাদির পরামর্শ প্রদান করাই সরকারি খাতসমূহের সাথে বিশ্বায়নের সংশ্লিষ্টার ফলাফল।

৩) উন্নত কৌশল:

সরকারি প্রশাসনকে আরো উন্নত ও কার্যকর করতে উন্নত কৌশল উদ্ভব করা হয়েছে। প্রথম কৌশল হল রাষ্ট্রের কার্যাবলিকে তার সামর্থে সাথে মিল থাকতে হবে। দ্বিতীয় কৌশলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বশক্তি প্রদানের মাধ্যমে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। ১ম কৌশলটি সফল করার জন্য বিভিন্ন ধরণের যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন- আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়ণ এবং জনগণের চাহিদা পূরণ করা।

৪) এনজিও:

বর্তমানে রাষ্ট্রের কর্মপরিধি অনেক ব্যাপক। এ ব্যাপক কর্মপরিধির কাজ রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষে একা সম্পাদন করা সম্ভব নয়। তাই সরকারের পাশাপাশি ৩য় খাত যেমন-  NGOs (Non-governmental Organization) ও CBO ( Community based organization) – গুলোকে তাদের ভূমিকা পালন করতে হয়। দিন দিন এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যা মূলত বিশ্বায়নেরই ফল। এসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়। তাই সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ঠিক করে দেয় যাতে এবস প্রতিষ্ঠান তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে দরিদ্রতাকে হ্রাস ও এর বৃদ্ধিকে হ্রাস করতে সহায়তা করে।

৫) গুণগত সেবা প্রদান:

গুণগত সেবা বৃদ্ধির জন্য OECD (Organization for Co-operation and Development) ভূক্ত দেশগুলোতে এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। SQI (Service Quality Initiative) উদ্যোগ এর মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীচারিদের দক্ষতা বাড়িয়ে ভাল মানের সেবা প্রদানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৮০ এর দশকে OEGD ভুক্ত দেশ সমূহে এবং অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রে SQI পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। 

৬) ই-গভারন্যান্স:

বর্তমান বিশ্বের একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে e-governance. সরকারি সেবা সমূহ জনগণের কাছে সহজে ও কার্যকরভাবে সরবরাহ করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যবশ্যকীয়। যেমন- বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল অনলাইন এ দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনলাইন ভর্তিসহ সরকারি বিভিন্ন সেবা ও আন্তঃপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজকর্ম ফাইল বা ডকুমেন্ট আকারে নিমিষেই আদান-প্রদান করা সম্ভব।

 

Related Posts