Home » সুশাসন কি? সুশাসনের উপাদান ও বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ
সুশাসন কি, সুশাসনের উপাদান ও বৈশিষ্ট্য,

সুশাসন কি? সুশাসনের উপাদান ও বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ

by TRI

সুশাসন (Good Governance)

‘সুশাসন’ ধারণাটি বিশ্বব্যাংকের উদ্ভাবিত একটি ধারণা। একটি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বব্যাংক সর্বপ্রথম উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে ‘সুশাসন’ ধারণাটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় সর্বপ্রথম সুশাসন প্রত্যয়টি ব্যবহার করা হয়। এতে উন্নয়নশীল দেশের অনুন্নয়ন চিহ্নিত করা হয় এবং বলা হয় যে, সুশাসনের অভাবেই এরূপ অনুন্নয়ন ঘটেছে।

সুশাসনকে একক কোনো ধারণার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত বা বিশ্লেষণ করা যায় না। কেননা সুশাসনের ধারণাটি হলো বহুমাত্রিক। বিভিন্ন তাত্ত্বিক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা সংস্থা সুশাসন ধারণাটির সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

বিশ্বব্যাংক(World Bank) এর মতে, “সুশাসন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়।” (Good Governance is a manner in which power is exercised in the management of a country’s economic and social resources for development.) 

UNDP এর মতে,“একটি দেশের সার্বিক স্তরের কার্যাবলি পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বের চর্চা বা প্রয়োগের পদ্ধতিই হলো সুশাসন।” (Good Governance is the exercise of economic, political and administrative authority to manage a country’s affairs at all levels.)

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান বলেছেন, “সুশাসন মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে, জনপ্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং সক্ষমতাকে প্রবর্তন করে।”

সুশাসনের উপাদান ও বৈশিষ্ট্য

১) অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া

অংশগ্রহণ বলতে রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার নীতি নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নে জনগণের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনকে বোঝায়। অর্থাৎ, রাজনৈতিক ও শাসন কাজে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ, নীতি প্রণয়নে নাগরিকদের সম্পৃক্ততা, তথ্য, মত ও পরামর্শমূলক কাজে জনগণের অংশীদারিত্ব, রাষ্ট্রীয় নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ণ প্রক্রিয়ায় যৌথ উদ্যোগ, পরিকল্পনা এবং জনগণের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ।

২) নৈতিক মূল্যবোধ

আইন অপেক্ষা নৈতিকতার সীমানা অনেক বেশি প্রসারিত। নৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা শাসন কাজ পরিচালনা করা হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিবর্গের নৈতিক চরিত্রের প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩) স্বচ্ছতা

সরকারি কর্মকান্ডে অর্থাৎ আইন-কানুন, নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছ থাকাই হলো স্বচ্ছতা। নীতি বা সিদ্ধান্ত স্বচ্ছ হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।

৪) বৈধতা

সরকারের বৈধতা, সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতি, প্রণীত আইনের বৈধতা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আবশ্যকীয় উপাদান। এজন্য অনির্বাচিত, অগণতান্ত্রিক, স্বেচ্ছাচারী বা সামরিক শাসনকে কেউ সুশাসন বলে না। কেননা তারা বৈধ শাসক নয়। তাই তাদের দ্বারা গৃহীত নীতি ও আইনের বৈধতা থাকে না।

আরও পড়ুন:  সুশাসনের জন্য গণতন্ত্র কি অত্যাবশ্যকীয়?

৫) আইনের শাসন

সুশাসন তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন আইনের শাসন বিদ্যমান থাকে। আইনের শাসনের মূলকথাই হলো- আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান, সকলেরই আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ থাকা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

৬) জবাবদিহিতা

একটি রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ যেমন তাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত ও কাজের জন্য আইন বিভাগের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে তেমনি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরস্থিত সংগঠন পরিচালনার জন্যও এর পরিচালকদের দায়বদ্ধ থাকতে হয়, জবাবদিহি করতে হয়। এই জবাবদিহিতার দুটো দিক রয়েছে। একটি হল রাজনৈতিক জবাবাদিহিতা, এবং অন্যটি প্রশাসনিক জবাবদিহিতা। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি হ্রাস পায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।

৭) স্বাধীন বিচার বিভাগ

সুশাসনের অন্যতম স্তম্ভ হলো স্বাধীন বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে বিচার বিভাগকে সরকারের অন্য দুই বিভাগ আইন ও শাসন বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখাকে বোঝায়। বিচারকগণ যদি সৎ, দক্ষ, নিরপেক্ষ ও উচ্চ নৈতিক গুণাবলির অধিকারী হন, ভয়ভীতি ও প্রলোভনের উর্ধ্বে থেকে স্বাধীনভাবে রায় দিতে পারেন, তবে বিচার বিভাগরে স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়।

৮) গণ মাধ্যমের স্বাধীনতা

সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণ মাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। স্বাধীন গণ মাধ্যমের মাধ্যমেই সকল অনিয়ম, অপরাধ, দুর্নীতি জনসমক্ষে প্রকাশ পায়। এতে জনগণ সচেতন হয় ও এসব নেতিবাচক দিকগুলোর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে। এছাড়া জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্যও গণ মাধ্যমের স্বাধীনতা প্রয়োজন, যা সুশাসনেরই আরেকটি দিক।

৯) সুশীল সমাজ

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী সুশীল সমাজ বড় ভূমিকা রাখে। সুশীল সমাজ নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা চিহ্নিত ও বিচার করে এবং সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করে। এছাড়া সুশীল সমাজ সুষ্ঠু জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১০) বিকেন্দ্রীকরণ

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিকেন্দ্রীকরণের ফলে ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব প্রশাসনের উচ্চ স্তর থেকে নিম্ন স্তরের দিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে জন অংশগ্রণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। 

 

Related Posts