বাংলাদেশের ন্যায়পাল সম্পর্কে জানতে লেখাটি পড়ুন:
ভারতের লোকপাল
ভারত ন্যায়পালের ধারনাটিকে লোকপাল হিসেবে গ্রহণ করেছে।এ পর্যন্ত ভারতের ১১টি রাজ্যে এ ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। কেন্দ্রে এই লোকপাল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিল উত্থাপিত হলেও তা আইনে পরিণত হয়নি এখনো। ”শ্রী মোরারজী দেশাই” ষাটের দশকে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন করার পর এ বিষয়টির (লোকপালের) ধারণা সূচীত হয়। এই কমিশনের রিপোর্টে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং সরকারের বিরুদ্ধে আনীত দূর্নীতির অভিযোগ দূর করার জন্য Ombudsman সৃষ্টির কথা সুপারিশ করে। এ বিলটি পাশ হয়নি।এরপর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে Ombudsman –র ধারনাটি বাস্তবায়িত হলেও কেন্দ্রে ২ বার এ বিষয়ে আনীত বিল পাশ হয়নি। ৩য় বিলটি প্রক্রিয়াধীন।
ভারতের লোকপাল ও বাংলাদেশের ন্যায়পালের মধ্যে পার্থক্য/তুলনা:
ভারত এবং বাংলাদেশ ২ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। এই ২ রাষ্ট্রে Ombudsman –র ধারনাটি গ্রহণ কিংবা গ্রহণের প্রক্রিয়াধীন। নিম্নে ভারতের লোকপাল ও বাংলাদেশের ন্যায়পাল ধারনাটির একটি তুলনা দেখানো হল-
সাদৃশ্য:
১. প্রকৃতগত কারণ: বাংলাদেশ এবং ভারতে Ombudsman –র ধারনাটিকে এর প্রকৃতিগত কারণে গুরত্ব প্রদান করা হয়েছে।
২. স্বচ্ছতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা রোধ: উভয় দেশেই সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ, সরকারি প্রশাসন ও কর্মচারীদের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বাহন হিসেবে লোকপাল এবং ন্যায়পালের ধারনা গৃহীত হয়েছে।
৩. নাগরিক অধিকার: ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশেই নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে লোকপাল ও ন্যায়পালের ধারনা গৃহীত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ন্যায়পাল কি? ন্যায়পাল কিভাবে উৎপত্তি লাভ করে?
বৈসাদৃশ্য:
১. সাংবিধানিক স্বীকৃতির দিক থেকে: বাংলাদেশের ন্যায়পাল ও ভারতের লোকপালের মাঝে সাংবিধানিক স্বীকৃতিগত পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানেই ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার বিধান ছিল। সংবিধানের ৭৭নং অনুচ্ছেদে এ প্রসঙ্গে বিধান রয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের লোকপাল/লোকযুক্তব্যবস্থার কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। বিভিন্ন রাজ্যে এ সম্পর্কে বিধান এবং এ পদ সৃষ্টি হলেও কেন্দ্রে এখনো এ ব্যবস্থা গৃহীত ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়নি।
২. আইন ও বিল: বাংলাদেশে ন্যায়পাল আইন রয়েছে। ১৯৮০ সালের The Ombudsman Act অনুযায়ী ন্যায়পালের ধারনাটি আইনগত স্বীকৃতি লাভ করে।
ভারতের ১১ টি রাজ্যে লোকপাল/লোকযুক্তব্যবস্থা প্রচলিত থাকলেও কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো এ ধারনা স্বীকৃতি লাভ করে নি। এ বিষয়টিকে আইনে রূপান্তরিত করার জন্য বিল আনা হয়েছে সংসদে/আইনসভায়।
৩. কার্যকারিতার দিক থেকে: কার্যকারিতার দিক থেকে বাংলাদেশের ন্যায়পাল এবং ভারতের লোকপাল ব্যবস্থার পার্থক্য সামান্যই। বাংলাদেশে ধারনাটি আইনে রূপান্তরিত হলেও গেজেট আকারে প্রকাশিত না হওয়ায় কার্যকর হয়নি আজ পর্যন্ত।
ভারতে কেন্দ্রীয়ভাবে লোকপাল ব্যবস্থাটি কার্যকর নয়। কারণ এটি এখনো বিল পর্যায়ে রয়েছে। আইন হয়নি। তবে ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলোর ১১টি তে এ ব্যবস্থা কার্যকর।
৪. নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান: বাংলাদেশের ১৯৮০ সালের The Ombudsman Act –এ আইনসভার অনুমোদন সাপেক্ষে ন্যায়পাল নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। একজন নিরপেক্ষ ও প্রবীন ব্যক্তিকে ন্যায়পাল নিয়োগের কথাও বলা হয়।
ভারতে আনীত লোকপাল বিলে একজন সভাপতি ও ২ জন সদস্য সমন্বয়ে লোকপাল গঠনের কথা বলা হয়। এখানে সদস্যগণকে সুপ্রীম কোর্টের বর্তমান কিংবা পূর্বতন বিচার পতিদের মধ্য থেকে নিয়োগদানের কথা বলা হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই একটি স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত সরকার ব্যবস্থা গড়ার মানসে Ombudsman –র ধারনাটি গৃহীত হয়েছে।