সংবিধানের উৎস সমূহ
সংবিধান হল রাষ্ট্র পরিচালনার মূল চাবিকাঠি। সংবিধানের ভিত্তিতেই একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, সরকার গঠিত হয়, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টিত হয়, সরকারি কাজকর্ম পরিচালিত হয় এবং ব্যক্তি ও সরকারের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপিত হয়। সংবিধান কোন একটি নির্দিষ্ট উৎস থেকে সৃষ্টি হয় নি। বিভিন্ন উৎস থেকে সংবিধানের সৃষ্টি হয়েছে। নিম্নে সংবিধানের উৎস সমূহ আলোচনা করা হলো-
১. ঐতিহাসিক মহাসনদ
ঐতিহাসিক মহাসনদ বা ‘ম্যাগনাকার্টা’ কে সংবিধানের সর্বপ্রথম উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১২১৫ সালে প্রবর্তিত “The Megnacarta” থেকে মূলত পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন গণতান্ত্রিক সংবিধান ‘ব্রিটিশ সংবিধান’ রচিত হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সংবিধান ব্রিটিশ সংবিধানের অনুকরণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।
২. সন্ধি ও চুক্তি
সন্ধি ও চুক্তিসমূহ সংবিধান রচনায় বিশেষ অবদান রাখে। যেমন- ব্রিটিশ সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে ১৬২৮ সালে প্রবর্তিত “The Petition of Rights”, ১৬৮৯ সালের “The Bill of Rights”, এবং ১৭০০ সালের “The Act of Settlement” গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও সংবিধান রচনায় বিভিন্ন চুক্তি বা সন্ধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সন্ধি ও চুক্তিসমূহকে সংবিধানের উৎস হিসাবে গণ্য করা হয়।
৩. প্রথাগত আইন
সংবিধানের একটি অন্যমতম উৎস হচ্ছে প্রথাগত আইন বা রীতিনীতি। বহুকাল থেকে সমাজে বা রাষ্ট্রে প্রচলিত রীতিনীতি বা আচার আচরণসমূহ প্রথাগত আইন হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব আইন সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আরও পড়ুন:মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী
৪. শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি
শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি বলতে শাসনতন্ত্র বিষয়ক আইনকানুনকে বুঝায়। শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি আইনের সূক্ষ্ম কাঠামোকে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলে। এজন্য সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিসমূহ অনুসরণ করা হয়। ব্রিটিশ সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি। তাই শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিকে সংবিধানের উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়।
৫. বিধিবদ্ধ আইন
আইনসভা তার সার্বভৌম ক্ষমতাবলে কতকগুলো আইন প্রণয়ন করে থাকে। এসব আইন শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও নিবন্ধন সংক্রান্ত আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এসব আইনকে বিধিবদ্ধ আইন হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে বিধিবদ্ধ আইন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
৬. বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত
প্রখ্যাত বিচারকগণ অনেক সময় ন্যায়বিচারের স্বার্থে কতকগুলো আইন প্রবর্তন করে থাকেন। এসব আইনকে বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত বলা হয়ে থাকে। সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে এসব আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তকে সংবিধানের উৎস বলা হয়ে থাকে।
৭. আইনসভা
আইনসভা সংবিধান রচনার একটি অন্যতম উৎস। প্রতিটি দেশের আইনসভা গঠিত হয় নির্দিষ্ট এলাকা থেকে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে। এসব জনপ্রতিনিধি সাধারণত জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকে। তাই জনগণের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং জনকল্যাণের জন্য জনপ্রতিনিধিগণ আইনসভায় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে থাকে। এসব আইন সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. শাসনতন্ত্র বিষয়ক রচনা বা গ্রন্থসমূহ
বিশ্বের বিভিন্ন আইনবিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের রচিত গ্রন্থসমূহ সংবিধান প্রণয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবিধান রচনায় ওয়াল্টার বেইজটের “The English Constitution“, অধ্যাপক ডাইসির “Law of the Constitution” বিশেষ অবদান রাখে। এজন্য শাসনতন্ত্র বিষয়ক রচনাকে সংবিধান রচনার অন্যতম উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়।