Home » পূর্বানুমান কি? পূর্বানুমানের গুরুত্ব আলোচনা কর।

পূর্বানুমান কি? পূর্বানুমানের গুরুত্ব আলোচনা কর।

by TRI

পূর্বানুমান/অনুকল্প/হাইপোথেসিস

সামাজিক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পূর্বানুমান বা অনুকল্প। এর ইংরেজি শব্দ Hypothesis. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণার উত্তর সম্পর্কে প্রথমেই যে অনুমান করা হয়, অর্থাৎ গবেষক যে সমস্যাটির উত্তর নির্ণয় করতে চান, সে সমস্যার সম্ভাব্য উত্তর হচ্ছে পূর্বানুমান। গবেষণা সমস্যা নির্ধারণ করার পর পূর্বানুমান বা অনুকল্প গঠন করা হয়।

সহজভাবে বলতে গেলে, পূর্বানুমান হচ্ছে প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়, যা কোনো গবেষণার ‍দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। কোনো গবেষক তাঁর গবেষণা কাজে কী কী বিষয় খুঁজে পেতে চান তা বলে দেয় পূর্বানুমান। 

Hypothesis শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ Hypo এবং tiotheomi থেকে। Hypo শব্দের অর্থ নিম্নে এবং tiotheomi শব্দের অর্থ স্থান। সুতরাং কোনো পূর্বানুমানকে ব্যবহার করা হয়, কোনো জানা জিনিসের মধ্যে তার উপাদানসমূহের সম্পর্কে জানার জন্য। অর্থাৎ পূর্বানুমান হচ্ছে কোনো সমস্যা বা বিষয়ের সঠিক জ্ঞান লাভের পূর্বে কৃত অনুমান বা আন্দাজ।

Hypothesis সম্পর্কে K. D. Bailey বলেন, “A hypothesis is a proposition that is stated in testable form and predicts a prticular relationship between two or more variables.” অর্থাৎ পূর্বানুমান হচ্ছে একটি প্রস্তাবনা যা পরীক্ষা করার জন্যই বর্ণনা করা হয় এবং দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে নির্দিষ্ট সম্পর্ক স্থাপন করে।

আরও পড়ুন:  তত্ত্ব ও গবেষণার মধ্যে সম্পর্ক

পূর্বানুমানের গুরুত্ব

বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গবেষণা কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে পূর্বানুমান বা অনুকল্প চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে বিধায় প্রতিটি গবেষণায় পূর্বানুমান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সঠিক পূর্বানুমান ব্যতীত গবেষণা দিশাহীন অনুসন্ধানে পরিণত হতে পারে। নিম্নে পূর্বানুমানের আরো কিছু গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-

১। সঠিকভাবে গবেষণা পরিচালনা

পূর্বানুমান/অনুকল্প অনুসন্ধান কাজে নির্দিষ্ট একটি অবস্থান তৈরি করে ও সমগ্র গবেষণা সঠিকভাবে পরিচালিত হতে নির্দেশ দেয়। অনুকল্প ছাড়া গবেষণা লক্ষ্যহীন অবস্থায় থাকে। তাই গবেষককে সঠিক পন্থায় গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটি দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করে।

২। তথ্য চাহিদা নির্ধারণ

Hypothesis তথ্য চাহিদা নির্ধারণ করে। কী কী বিষয় প্রাসঙ্গিক হবে ও কোনটি হবে না, এটি তার নির্দেশ করে। অধিকিন্তু অনুসন্ধান কাজে কী কী বিষয় অনুমোদন গ্রহণ ও বর্জন করতে হবে পূর্বানুমানের উপস্থিতিতে তা নির্ধারণ করা যায়। 

৩। সম্পর্ক নির্ণয়ে

হাইপোথেসিস আসলে কিছু সাময়িক উক্তি বা গবেষণায় ব্যবহৃত প্রত্যয়সমূহের মধ্যে সম্পর্ককে নির্দেশ করে এবং প্রত্যয়সমূহের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করার মাধ্যমে বাস্তবতার বিচারে পরিমাপ করার উপযোগী বিভিন্ন দিক সমূহের আন্তঃসম্পর্ককে ব্যক্ত করে।

৪। গবেষণা সুপারিশে

হাইপোথেসিস তথ্য সূত্র নির্দিষ্ট করে কী প্রেক্ষিতে গবেষণা করতে হবে। অধিকিন্তু কোন ধরনের গবেষণা যথাযথ হবে এটি সে বিষয়ে সুপারিশ করে থাকে।

৫। তত্ত্ব গঠন

পূর্বানুমান তত্ত্ব গঠনে সহায়তা করে। এটি তত্ত্ব ও অনুসন্ধানের মধ্যে সংযোগ ঘটায়। কোনো পূর্বানুমান অনুকল্প তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত হতে পারে। যখন এটি বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে পরীক্ষিত হবে ও দেখা যাবে যে এটি সত্য, তাহলে এটি তত্ত্বের একটি অংশ গঠন করে।

৬। গবেষণার সম্ভ্যব্যতায়

অনুকল্প গবেষকের সত্যতা যাচাইয়ের ইচ্ছাকে ব্যক্ত করে এবং গবেষণার সুপ্ত প্রত্যাশা, সম্ভাব্যতা ও সদিচ্ছাকে মূর্ত করে।

৭। ফলাফল নির্ধারণে

পূর্বানুমান যেহেতু সম্পর্কমূলক উক্তি সেহেতু প্রকৃত প্রস্তাবে প্রস্তাবনা হিসেবে বিবেচনা করা যায় এবং কী কী কারণ কী ধরনের ফলাফল বয়ে আনছে তা সুস্পষ্টভাবে জানার জন্য এটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৮। গবেষণা নকশা প্রণয়নে

গবেষণা কাজে প্রয়োজনীয় অর্থ, সময় ও শ্রমের মিতব্যয়ে পূর্বানুমান সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে সমগ্র গবেষণাকর্মকে এবং গবেষণা রজন্য প্রয়োজনীয় নকশা তৈরি করতে সহায়তা করে।

৯। তথ্যের তাৎপর্যতা

গবেষণার সময় যেসব সমস্যার উত্তর পাওয়ার জন্য যে সকল তথ্য সংগ্রহ করতে হবে তা নির্ধারণ কর ঐ সকল তথ্যের তাৎপর্য অনুধাবনে অনুকল্প গবেষককে সহায়তা করে।

Related Posts