পদোন্নতি কী?
প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে এক পদ থেকে উচ্চতর ও অধিক পদমর্যাদসম্পন্ন এবং দায়িত্বশীল পদে উন্নীত করাকে পদোন্নতি বলে। বর্তমান নিম্নস্তর থেকে অধিক দায়িত্বপূর্ণ উচ্চতর স্তরে উন্নীত করার নাম পদোন্নতি। পদোন্নতির ফলে কর্মীর সম্মান ও মর্যাদা, দায়িত্ব, কর্তব্য, বেতন, ভাতাদি এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পদোন্নতি কর্মীদের কার্যসন্তুষ্টি বৃদ্ধি করে, প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা ও আনুগত্য বৃদ্ধি করে এবং কার্যে নব উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। বেতন ও সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধি না করে উচ্চতর পদমর্যাদায় অধিক দায়িত্বশীল পদে আসীন করা হলে তাকে শুল্ক পদোন্নতি বলে।
পদোন্নতির সংজ্ঞা
বিশেষজ্ঞরা পদোন্নতিকে নিম্নোক্ত বিভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যথা-
Pigors ও Myers এর মতে, “Promotion is the advancement of an employee to a better job; better in terms of greater responsibilities more prestige or status, greater skill and specially, increased rate of pay or salary.” অর্থাৎ, পদোন্নতি হচ্ছে একজন কর্মীর একটি উন্নততর চাকরিতে অগ্রগতি; উন্নততর এই অর্থে যে, এর ফলে অধিকতর দায়িত্ব, অধিক সম্মান বা মর্যাদা, অধিকতর দক্ষতা এবং বিশেষভাবে বর্ধিত হারে বেতন বা ভাতা পায়।
Chruden ও Sherman এর মতে, “A promotion involves a change of assignment from a job of a lower level to one of a higher level within the organization.” অর্থাৎ, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কোন ব্যক্তিকে নিম্নস্তরের পদ থেকে উচ্চস্তরের পদে দায়িত্বের পরিবর্তনের সাথে পদোন্নতি জড়িত।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, কর্মীর বর্তমান পদ থেকে মর্যাদা, ক্ষমতা, দায়িত্ব এবং বেতন ও সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধি করে উচ্চতর পদে সমাসীন করার প্রক্রিয়াকে পদোন্নতি বলে। সংক্ষেপে পদোন্নতিকে 3R যথাঃ- Rank, Responsibility ও Remuneration এর উন্নতি বুঝায়।
আরও পড়ুন: উন্নয়ন প্রশাসন কি? উন্নয়ন প্রশাসনের সাম্প্রতিক প্রবণতা সমূহ কি কি?
পদোন্নতির প্রকারভেদ
সাধারণত পদোন্নতি দু’প্রকারের হয়ে থাকে। যথা- ১) উল্লম্ব বা খাড়াখাড়ি পদোন্নতি এবং ২) সমান্তরাল পদোন্নতি।
উল্লম্ব বা খাড়াখাড়ি পদোন্নতি (Vertical Promotion)
প্রতিষ্ঠানের কোন বিভাগে কর্মরত কর্মীকে একই বিভাগের পরবর্তী উচ্চপদে অধিষ্ঠিত করা হলে তাকে উল্লম্ব বা খাড়াখাড়ি পদোন্নতি বলে। এই পদ্ধতি বেশ সহজ ও সুনির্দিষ্ট বিধায় কর্মীদের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত হয়। এ পদ্ধতির বেশকিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন-
ক) কর্মীরা উচ্চতর পদ সম্পর্কে অবহিত থাকে এবং উক্ত পদের জন্য দক্ষতা অর্জনে সচেষ্ট থাকে।
খ) এ পদ্ধতিতে দায়িত্ব পালনে কর্মীদের কোন অসুবিধা হয় না, কারণ কর্মীগণ পূর্ব থেকে এরূপ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে।
গ) এরূপ পদোন্নতির ফলে অধস্তন বা উর্ধ্বতনদের সাথে কাজের সমন্বয়সাধন সহজতর হয়।
উল্লম্ব পদোন্নতির কিছু কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন-
ক) এরূপ পদোন্নতিতে উচ্চতর পদ খালি না হওয়া পর্যন্ত নিম্নস্তরের কর্মীর পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হয় না। ফলে এ পদ্ধতিতে পদোন্নতির সুযোগ কম।
খ) এ পদ্ধতিতে পদোন্নতির বিলম্ব ঘটায়। ফলে কর্মীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
গ) একই প্রকৃতির কাজের উপর কর্মীরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
পড়ুন: পদোন্নতির উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
সমান্তরাল পদোন্নতি (Horizontal Promotion)
প্রতিষ্ঠানের কোন বিভাগে কর্মরত কর্মীকে এক বিভাগ থেকে অন্য কোন বিভাগে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল সমপদে বা একধাপ উচ্চপদে বদলি করা হলে তাকে সমান্তরাল পদোন্নতি বলে। এ পদ্ধতিতে কর্মী অধিক মর্যাদা ও দায়িত্বের অধিকারী হন। ছোট কোন বিভাগ থেকে বড় কোন বিভাগে সমমর্যাদার কোন পদে বা উচ্চতর পদোন্নত হতে পারে। এ পদ্ধতির বেশকিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন- এরূপ বদলি কর্মীর ব্যাপক ও বিচিত্রমুখী অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে। সমান্তরাল পদোন্নতি কর্মীর একই প্রকার কার্যের উপর একক নির্ভরতা হ্রাস করে। এ পদ্ধতিতে কর্মীর ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে অনেকগুলো বিভাগ থাকে সেসব প্রতিষ্ঠানে এরূপ পদোন্নতির ব্যবস্থা করা যায়।