Home » বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর

by TRI

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব

বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ। এদেশের শতকরা ৭০-৮০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অনেক।

বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের শতকরা ২৩ ভাগ আসে কৃষি থেকে। সুতরাং কৃষি বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের মূল উৎস। নিচে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব কেন তা আলোচনা করা হলো :

১। শিল্পের কাঁচামাল যোগান

কৃষি হলো শিল্পের কাঁচামালের প্রধান যোগানদাতা। বাংলাদেশের শিল্পকারখানার অধিকাংশ কাঁচামাল আসে কৃষি হতে। বাংলাদেশে পাট, চা, চিনি, কাগজ, তুলা, সুতা, কাপড় ইত্যাদি শিল্পগুলো সম্পূর্ণরূপে। কৃষিজাত কাঁচামালের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম।

২। কৃষি প্রধান পেশা

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের প্রধান পেশা হলো কৃষি। কারণ বাংলাদেশের শতকরা ৭০- ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জাতীয় আয়ের শতকরা ২০ ভাগ আসে কৃষি থেকে । তাছাড়া বাংলাদেশ শিল্পে অনগ্রসর হাওয়ায় কর্মসংস্থানের সহজ সুযোগ হলো কৃষি।

আরও পড়ুন:   বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য কি কি?

৩। খাদ্যের যোগান

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খাদ্যের একমাত্র যোগানের ভাণ্ডার হলো কৃষি। কারণ কষি আমাদের প্রধান প্রধান খাদ্য বিশেষ করে ধান, গম, ডাল, চিনি ইত্যাদি পেয়ে থাকি। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খাদ্যের যোগানদাতা কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম।

৪। জ্বালানির উৎস

বাংলাদেশ একটি জনবহুল উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বাস করে। কিন্তু বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় মানুষ জ্বালানি হিসেবে কাঠ, খড়, গাছের পাতা, শন, তুষ ইত্যাদি ব্যবহার করে । আর এসব জ্বালানি আসে কৃষি থেকে। তাই জ্বালানির উৎসদাতা হিসেবে কৃষির গুরুত্ব অনেক।

৫। জাতীয় আয়

বাংলাদেশের জাতীয় আয় কৃষি নির্ভর। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জাতীয় আয়ের এক-চতুর্থাংশ আসে কৃষি থেকে। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে কৃষির ভূমিকা ব্যাপক।

৬। শিল্পের স্থানীয়করণ

কৃষি হতে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল পাওয়া যায় । তাই যে অঞ্চলে যে শিল্পের কাঁচামাল বেশি পাওয়া যায় ঐ অঞ্চলে ঐসব কাঁচামাল নির্ভরশীল কারখানা বেশি গড়ে উঠে। তাই শিল্পের কাঁচামাল প্রাপ্তি শিল্পকারখানা গড়ে উঠে বলে শিল্পের স্থানীয়করণ ঘটে থাকে।

৭। অর্থনৈতিক উন্নয়ন

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এ দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন আধুনিকায়ন করতে পারলে একদিকে খাদ্য ঘাটতি দূর হবে অন্যদিকে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালের যোগান পরিপূর্ণ হবে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

৮। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কৃষিখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণে কৃষিজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। যেমন : তৈরি পোশাক, চা, চিংড়ি, পাটজাতদ্রব্য ইত্যাদি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। রপ্তানিকৃত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে শিল্পের আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের প্রযোজনীয় কাঁচামাল আমদানি করা যায়। ফলে অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় ।

৯। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি

বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া বাংলাদেশের কৃষিখাত পূর্বের চেয়ে বর্তমানে অনেক উন্নত ও আধুনিক হওয়ায় এই খাতে কর্মসংস্থান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অনেক শিক্ষিত লোক এখন বাংলাদেশের কৃষিখাতে নিয়োজিত। তাই কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১০। সরকারি আয়ের প্রধান উৎস

সরকারি আয়ের প্রধান উৎস হলো বাংলাদেশের কৃষিখাত। কারণ বাংলাদেশ সরকার কৃষিজাত অনেক পণ্য বিশেষ করে পাটজাতদ্রব্য, চা ইত্যাদি রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। তাছাড়া জমির খাজনা, পরিবহন বাবদ আয় ইত্যাদি থেকেও সারকার আয় করে থাকে। অতএব সরকারি আয় বৃদ্ধিতে কৃষির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

১১। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন

জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের শতকরা ৭০-৮০ ভাগ মানুষ আজও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিল্পকারখানা কৃষির কাঁচামালের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। ফলে বাংলাদেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় বেকারত্ব হ্রাস পেয়ে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছে।

১২। বাসস্থানের উপকরণের যোগান

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং তারা দরিদ্র। ফলে কৃষি হতে প্রাপ্ত বিশেষ করে বাঁশ, বেত, শন, কাঠ ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে দেশের দরিদ্র জনসাধারণ ঘর তৈরিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করে। তাই কৃষি বাংলাদেশের দরিদ্র জনসাধারণের বাসস্থানের উপকরণ যোগান দিয়ে থাকে।

১৩। অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার

দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসারের ক্ষেত্রে কৃষির ভূমিকা ১ অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের অনেক ছোট-বড় ব্যবসায়ী আছে যারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন কৃষিপণ্য সংগ্ৰহ করে দেশের ছোট-বড় শহরগুলোতে বিক্রি করে। ফলে দেশের অভ্যন্তরে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে এবং এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়।

১৪। শিল্পায়নে কৃষি

যে কোন দেশের শিল্প কারখানার কাঁচামালের প্রধান উৎসই হলো কষি। কাজেই যে দেশের কষি ব্যবস্থা উন্নত ঐ সমস্ত দেশে শিল্পকারখানার প্রচুর কাঁচামাল পাওয়া যায়। ফলে মানুষের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা গড়ে উঠে। অতএব যে কোন দেশের শিল্পায়নের পিছনে কৃষির ভূমিকা সর্বাধিক।

Related Posts