কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতা ও পরিধি কি সে সম্পর্কে যদি আপনার জানা না থাকে তবে এই আর্টিকেল থেকে তা জেনে নিতে পারবেন। চলুন, আর দেরি না করে জেনে নিই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে এবং এর আওতা ও পরিধি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে
কোন একটি দেশের মুদ্রা, অর্থ সরবরা ও সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে যে ব্যাংক, তাকে সেদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলা হয়। এই ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করে থাকে।
একটি দেশের প্রাণকেন্দ্র হলো এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি দেশের অর্থব্যবস্থা ও মুদ্রাবাজার পরিচালিত করে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মুদ্রা প্রচলন, ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক নীতির প্রণয়ন এবং সরকারের আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আরও পড়ুন: ব্যাংক কাকে বলে? ব্যাংক শব্দের উৎপত্তি আলোচনা কর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতা ও পরিধি
প্রত্যেক স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশেই একটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। মুনাফা অর্জন এই ব্যাংকের উদ্দেশ্য নয়। এই ব্যাংকের আওতা ও পরিধি ব্যাপক। নিচে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
নোট ও মুদ্রা প্রচলন
দেশের মধ্যে নোট ইস্যু ও মুদ্রা প্রচলনের একক দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী নোটের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ করে থাকে।
মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণ
মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতাধীন। এই ব্যাংক অর্থের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা সংকোচন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়। এছাড়া মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা রক্ষা ও বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হারও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করে থাকে।
সরকারের ব্যাংকার
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে; যথা-
- সরকারের পক্ষে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দেওয়া;
- প্রয়োজনে সরকারকে সুদমুক্ত ঋণদান;
- সরকারের পক্ষে দেশে-বিদেশে অর্থ লেনদেন;
- আন্তর্জাতিক দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি ও হিসাবরক্ষণ;
- আমদানি-রপ্তানি নীতি প্রণয়ন।
অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার
কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের অন্যান্য তালিকাভুক্ত ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করে। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক তালিকাভুক্ত ব্যাংককে তাদের আমানতের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। ফলে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রয়োজনের ঋণ নেয় এবং বিল বাট্টাকরণ সুবিধা পায়।
ঋণ নিয়ন্ত্রণ
দেশের অর্থবাজারের ঋণের পরিমাণ কাম্য স্তরে রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ সৃষ্টির ক্ষমতা একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রেখে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে এই ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে। এর জন্য ব্যাংক হার নীতি, খোলাবাজার নীতি, জমার হার পরিবর্তন নীতি, ঋণের পরিমাণ বরাদ্দকরণ, নৈতিক প্ররোচনা, প্রত্যক্ষ ব্যবস্থা, বৈষম্যমূলক ঋণনীতি ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে।
ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অর্থসংকটের সময় অন্য উৎস থেকে ঋণ না পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়ে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণদানের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।
নিকাশ ঘর
বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের পারস্পরিক দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির জন্য নিকাশ ঘরের দায়িত্ব পালন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে চেক ও অন্যান্য বিনিময়ের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া দেনা-পাওনা এই ব্যাংকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।
বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ
কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশীয় মুদ্রার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করে। এ ব্যাংক অনুমোদিত আমদানি খাতে ব্যয় করার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বরাদ্দ করে।
মুদ্রার মূল্যায়ন
কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন অনুসারে সরকারি নির্দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বিপক্ষে দেশীয় মুদ্রার মূল্যায়ন করে থাকে।
সরকারের উপদেষ্টা ও প্রতিনিধি
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে। দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে নীতি নির্ধারণে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ নেয়। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এ ব্যাংক সরকারের পক্ষে মূলধন ও ঋণের সুদ, লভ্যাংশ প্রভৃতি আদায় ও পরিশোধ করে থাকে।
আইনগত সত্তা
সরকারের বিশেষ অধ্যাদেশে বা আইন পাস করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাই এর আইনগত সত্তা রয়েছে। ফলে এই ব্যাংক প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।
জনকল্যাণ
কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি অমুনাফাভোগী জনকল্যণমূলক প্রতিষ্ঠান। দেশের অর্থনীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করে বৃহত্তর জনকল্যাণে সহায়তা করাই এর মূল উদ্দেশ্য।