নেতৃত্ব কত প্রকার ও কি কি, সম্মোহনী নেতৃত্ব কি, ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব কি, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব ও স্বৈরাচারী নেতৃত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে জানবো।
নেতৃত্ব কত প্রকার ও কি কি ?
নেতৃত্ব কত প্রকার তা নির্দিষ্ট নয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নেতাদের প্রকৃতি ও চরিত্রভেদে নেতৃত্ব বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। তন্মধ্যে নিম্নলিখিত প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো-
১। প্রশাসনিক নেতৃত্ব
প্রশাসনিক নেতৃত্বকে ব্যবস্থাপকের নেতৃত্বও বলা হয়। ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তার বিশেষ দক্ষতাকে প্রশাসনিক নেতৃত্ব বলে। প্রশাসনে জড়িত কোনো প্রশাসকের সাফল্য বা দক্ষতার উৎকর্ষের উপর প্রশাসনিক নেতৃত্ব নির্ভর করে। এরকম নেতৃত্বের উদাহরণ- আমলাতন্ত্র, কলকারখানা প্রভৃতি।
২। রাজনৈতিক নেতৃত্ব
রাজনৈতিক নেতৃত্ব রাজনৈতিক মতাদর্শের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। কোনো ব্যক্তিকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে উঠতে হলে তাকে রাজনৈতিক মতাদর্শভিত্তিক কোনো গোষ্ঠীকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার গুণাবলি অর্জন করতে হবে।
আরও পড়ুন: নেতৃত্ব কি? নেতৃত্বের গুণাবলী কি কি?
৩। সম্মোহনী নেতৃত্ব বা ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব
সম্মোহনী নেতৃত্বের ধারণা দেন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার। ইংরেজিতে একে Charismatic Leadership বলা হয়। যখন কোনো বিশেষ নেতা তার বক্তব্য ও কাজ দ্বারা জনগণকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট, অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়, তখন সেই নেতৃত্বকে সম্মোহনী নেতৃত্ব বা ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব বলা হয়। এরকম নেতৃত্বের উদাহরণ বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
৪। গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব বা অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্ব
সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে যে নেতৃত্ব গড়ে ওঠে, সে নেতৃত্বকে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব বা অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্ব বলা হয়। গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ রয়েছে। এতে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী সংগঠনের একজন মূল্যবান সদস্য হিসেবে গণ্য হয়। এ ধরনের নেতৃত্বে কর্মীর সন্তুষ্ট থাকে ও কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হয়।
৫। অবাধ বা লাগামহীন নেতৃত্ব
এ ধরনের নেতৃত্বে নেতা বা ব্যবস্থাপক অধস্তন কর্মীদের স্ব-স্ব কাজে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন। একে মুক্ত নেতৃত্বও বলা হয়। কর্মীদল নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধানের মাধ্যমে সংগঠনে ভূমিকা রাখেন। এ ধরনের নেতৃত্বের সাফল্য কর্মীদলের যোগ্যতার উপর নির্ভর করে। সুষ্ঠু সমন্বয় না ঘটলে যথেষ্ট বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে এ ধরনের নেতৃত্বে।
৬। একনায়কতান্ত্রিক বা স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব
এ ধরনের নেতৃত্বে সকল ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে একজন ব্যক্তি। তিনি এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। একনায়কতান্ত্রিক নেতা স্বেচ্ছাচারমূলক আচরণ করে থাকেন বলে একে স্বেচ্ছাচারী নেতৃত্ব বা স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্বও বলা হয়। জার্মানির হিটলার, ইতালির মুসোলিনি ও স্পেনের ফ্রাংকো এ ধরনের নেতৃত্বের উদাহরণ।