ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদন, বন্টন ও এর সহায়ক যাবতীয় কাজের সমষ্টিকে ব্যবসায় বলে। এই উৎপাদন সংক্রান্ত কাজ শিল্পের মাধ্যমে এবং বন্টন সংক্রান্ত কাজ বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। ব্যবসায়কে শিল্প এবং বাণিজ্যের সমষ্টি গণ্য করা হলেও সমাজে প্রত্যক্ষ সেবা ক্রয়-বিক্রয় বর্তমানকালে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি অর্থনৈতিক কার্য হিসেবে বিবেচিত। ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি ব্যাপক। নিম্নে ব্যবসায়ের আওতা ও পরিধি আলোচনা করা হলো-
১. শিল্প
যে কার্যপ্রচেষ্টা বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং এতে উপযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্য প্রস্তুত করা হয় তাকে শিল্প বলে। শিল্প উৎপাদনের বাহন। উৎপাদনের প্রক্রিয়া ও কর্মপ্রচেষ্টার ভিন্নতার কারণে শিল্পকে প্রধানত নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা হয়-
ক) কৃষি শিল্প
কৃষিকাজের সাথে জড়িত শিল্পকে কৃষি শিল্প বলে। প্রকৃতি প্রদত্ত ভূমি বা উর্বর জমি, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, নদ-নদী ও ভূ-গর্ভস্থ পানি ইত্যাদি কৃষিকাজের মুখ্য অবলম্বন। বাংলাদেশে কৃষিখাতের মধ্যে ফসল, মৎস, প্রাণী সম্পদ এবং বন – চারটি উপখাত অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন: মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা গুলো কি কি?
খ) প্রজনন শিল্প
অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে নির্বাচিত উদ্ভিদ ও প্রাণীর বংশ বিস্তারকরণ প্রচেষ্টাকে প্রজনন শিল্প বলে। যেমন, নার্সারি, হ্যাচারি, হাঁস-মুরগির খামার ইত্যাদি।
গ) নিষ্কাশন শিল্প
যে শিল্প প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভূগর্ভ, পানি বা বায়ু হতে সম্পদ উত্তোলন বা আহরণ করা হয় তাকে নিষ্কাশন শিল্প বলে। খনিজ পদার্থ উত্তোলন, মৎস শিকার এরূপ শিল্পের উদাহরণ।
ঘ) নির্মাণ শিল্প
যে শিল্প প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাস্তাঘাট, সেতু, বাঁধ, দালানকোঠা ইত্যাদি নির্মাণ করা হয় তাকে নির্মাণ শিল্প বলে।
ঙ) প্রস্তুত শিল্প
শ্রম ও যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাঁচামাল বা অর্ধপ্রস্তুত জিনিসকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্যে প্রস্তুত করার প্রচেষ্টাকে প্রস্তুত শিল্প বলে। যেমন- বয়নশিল্প, ইস্পাতশিল্প ইত্যাদি। এরূপ শিল্পকে বিশ্লেষণ, যৌগিক, প্রক্রিয়াভিত্তিক, সংযোজন ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা যায়।
চ) সেবা পরিবেশক শিল্প
যে শিল্প মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করার কাজে নিয়োজিত থাকে তাকে সেবা পরিবেশক শিল্প বলে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, পর্যটন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার এরূপ শিল্পের আওতাভুক্ত।
২. বাণিজ্য
শিল্পে উৎপাদিত পণ্য প্রকৃত ভোগকারী বা ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যে সকল প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে তা দূরীকরণের জন্য গৃহীত যাবতীয় কাজের সমষ্টিকে বাণিজ্য বলে। সুতরাং বাণিজ্য ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বন্টন কাজের সাথে সম্পৃক্ত। বাণিজ্যের আওতাভুক্ত বিষয়সমূহ নিম্নরূপ-
ক) ট্রেড বা পণ্য বিনিময়
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় কার্যকে ট্রেড বা পণ্য বিনিময় বলে। এরূপ বিনিময় বা ক্রয়-বিক্রয়, বন্টনের ক্ষেত্রে মালিকানা হস্তান্তর কার্য সম্পন্ন করে ব্যক্তিগত বাধা দূর করে। পণ্য বিনিময়কে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়-
- অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য: একটি দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে যে ক্রয়-বিক্রয় কার্য অনুষ্ঠিত হয় তাকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই একই দেশের অধিবাসী হয়। প্রকৃতি অনুযায় একে পাইকারি ও খুচরা এই দু’ভাগে ভাগ করা হয়।
- বৈদেশিক বাণিজ্য: দুই দেশের মধ্যে বা দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে ক্রয়-বিক্রয় কার্য সম্পাদিত হয় তাকে বৈদেশিক বাণিজ্য বলে। এরূপ বাণিজ্য তিন ধরনের। যথা- আমদানি, রপ্তানি ও পুনঃরপ্তানি।
খ) পণ্য বিনিময় সহায়ক কার্যাবলি
পণ্য বন্টনের ক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় কার্য সুষ্ঠুভাবে সমাধার বেলায় অর্থগত, ঝুঁকিগত, স্থানগত, কালগত ও জ্ঞানগত বাধা দেখা দেয়। এ সকল বাধা দূরীকরণের জন্য যথাক্রমে ব্যাংক, বিমা, পরিবহণ, গুদামজাতকরণ, বাজারজাতকরণ প্রসার ইত্যাদি কার্যের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে এ সকল কার্য সম্পাদনের জন্য সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানও স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ের আওতাধীন।
৩. প্রত্যক্ষ সেবা
অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত ডাক্তার, উকিল, প্রকৌশলী প্রভৃতি পেশাজীবীগণ প্রত্যক্ষভাবে সেবাকর্ম বিক্রয় করেন। এদের কাজকে সাধারণভাবে ব্যবসায়ের আওতাধীন মনে করা হলেও প্রকৃত অর্থে তা পেশা বা বৃত্তি হিসেবে গণ্য হয়। তবে কয়েকজন ডাক্তার মিলে ক্লিনিক ব্যবসায় বা কয়েকজন উকিল মিলে এটর্নি ফার্ম বা প্রকৌশলীরা মিলে ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম গঠন করতে পারেন; যা প্রত্যক্ষ সেবা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সঙ্গত কারণেই ব্যবসায়ের আওতায় আসে।