মধ্যযুগে যে সকল স্বনামধন্য পর্যটক ভারতীয় উপমহাদেশ পরিভ্রমণ করেন তাদের মধ্যে ইবনে বতুতা অন্যতম। তিনি ভারতবর্ষের আর্থ-সামজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ আলোকপাত করেছেন। নিম্নে ইবনে বতুতার পরিচয় ও অন্যান্য বিষয় সংক্ষেপে তুলো ধরা হলো-
ইবনে বতুতার পরিচয়
ইবনে বতুতা উত্তর আফ্রিকার মরক্কো দেশের তাঞ্জিয়ার শহরে ১৩০৪ সনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম আবু আব্দুল্লাহ মুহম্মদ।
বিশ্ব পরিভ্রমণে ইবনে বতুতা
ইবনে বতুতার দেশভ্রমণের বাসনা আবাল্যের। তাই তিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে বিশ্বভ্রমণের অদম্য উৎসাহ নিয়ে সর্বপ্রথম ১৩২৫ সনে মক্কায় তীর্থযাত্রা করেন।
আরও পড়ুন: আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে লিখ
ইবনে বতুতার ভারত আগমন
ইবনে বতুতা তাঁর দীর্ঘ যাত্রাপথে ১৩৩৩ সনে ভারতবর্ষের দিল্লীর সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলকের দরবারে আগমন করেন। সুলতান তাঁর মধ্যে যোগ্যতার সন্ধান পেয়ে তাঁকে কাজির পদ দান করেন। ৮ বছর তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।
ইবনে বতুতার বঙ্গে আগমন
১৩৪৬ সনে ইবনে বতুতা মালদ্বীপ হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আগমন করেন।
ইবনে বতুতার রেহলা
ইবনে বতুতা ভারত ও বাংলাদেশ পরিভ্রমণ করে এতদসংক্রান্ত যে গ্রন্থ রচনা করেন তা ‘রেহলা’ নামে প্রসিদ্ধ। এ ভ্রমণবৃত্তান্ত গ্রন্থের বিবরণ অনুসারে তৎকালীন বাংলার আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থার বিবরণ জানা যায়।
ইবনে বতুতার বর্ণনা মতে বাংলার অর্থনীতি ছিল গ্রাম্য কৃষি নির্ভর। ধান ও পাট ছিল প্রধান অর্থকরী শস্য। তাঁর মতে, জমিতে উৎপন্ন শস্যের ১/২ অংশ রাজস্ব হিসেবে দিতে হত। বাংলার ব্যবসায় বাণিজ্য সাধারণত নদীপথেই চলত বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর বর্ণনা মতে তৎকালে বাংলায় ৭ টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত। ইবনে বতুতার মতে, দ্রব্য মূল্যের দাম অধিক হওয়ায় বাংলার জনসাধারণের অধিকাংশই দারিদ্রসীমার নিচে বাস করত।
ইবনে বতুতার বর্ণায় বাংলার সামাজিক অবস্থা
ইবনে বতুতার মতে, বাংলার সমাজ ব্যবস্থায় হিন্দুদের প্রাধান্য ছিল সুস্পষ্ট। অথচ শাসকগোষ্ঠী মুসলমানরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। হিন্দুদের মধ্যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এ চার শ্রেণীর লোক বাস করত। মুসলমানদের মধ্যে আমির, উমরাহ, দোকানদার, কৃষক, দাস-দাসী প্রভৃতি শ্রেণী বিদ্যমান ছিল। তার মতে, সুফী, দরবেশ, ফকির ও আলেমগণ সমাজে বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। সমাজে নারীরা সম্মানের সাথে বসবাস করত। মুসলিম নারীরা পর্দা প্রথা মেনে চলত। হিন্দু সমাজে বাল্য বিবাহ, সতীদাহ প্রথা ও জহর ব্রত প্রচলিত ছিল।