Home » খারাজ কি? সুলতানি আমলে খারাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর

খারাজ কি? সুলতানি আমলে খারাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর

by TRI

খারাজ হল ইসলামিক আইনে ভূমি বা কৃষির উপর আরোপিত রাজস্ব কর ।

১২০৬ থেকে ১৫২৬ সাল পর্যন্ত সুলতানি শাসনামল স্থায়ী ছিল। এ সময় দিল্লী সুলতানগণ তাদের রাজস্ব নীতি বাস্তবায়নে ইসলামি শরিয়ত, আব্বাসীয় খলিফাদের নীতি ও স্থানীয় হিন্দুদের নীতির সমন্বয়ে ভূমি বা কৃষি থেকে রাজস্ব আদায়ের এক সম্মিলিত ‍ও মিশ্র নীতি প্রচলন করেন যা উপমহাদেশের ইতিহাসে খারাজ নামে পরিচিত।

খারাজের পরিচয়

খারাজ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো ভূমি রাজস্ব বা ভূমিকর। সাধারণত অমুসলিম জিম্মি কৃষি প্রজাদের নিকট থেকে তাদের উৎপাদিত ফসলের উপর ধার্যকৃত কর হিসেবে যে অর্থ লাভ করা হয় তাকে খারাজ বলা হয়। হযরত মুহাম্মদ (সা.) খায়বার বিজয়ের পর সর্বপ্রথম কৃষি ভূমির উপর খারাজ ধার্য করেন। মূলত খারাজ হলো উশরের বিপরীত। কোনো মুসলমান যখন তার উৎপাদিত শস্য থেকে কর আদায় করে তা হয় উশর। আর যখন তা একজন অমুসলিম কর্তৃক আদায় করা হয় তখন তা হয় খারাজ।

আরও পড়ুন:  গনিমত কি? গনিমত বণ্টননীতি আলোচনা কর

সুলতানি আমলে খারাজ ব্যবস্থা

সুলতানি আমলে উশরি জমির পরিমাণ কম হওয়ায় প্রায় সমগ্র রাষ্ট্রেই খারাজি জমির অন্তর্ভূক্ত ছিল। খারাজি জমির অমুসলমান মালিক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও তার জমি খারাজি জমি হিসেবে থেকে যেত। এ সময় মুসলমান ও অমুসলমান উভয় শ্রেণীর কৃষকদেরকেই খারাজ প্রদান করতে হতো। সুলতানি যুগে দুই নীতিতে খারাজ্ ধার্য করা হয়।

১. বণ্টন ব্যবস্থা

সাধারণত শস্য কাটার পর জমির ফসল রাষ্ট্রীয় নির্ধারিত হারে রাষ্ট্র ও কৃষকের মাঝে বণ্টন করা হতো।

২. জরিপ ব্যবস্থা

জমি জরিপ করে জমির উর্বরতা শক্তির তারতম্য অনুসারে প্রতি ইউনিট জমিতে উৎপন্ন বিভিন্ন ফসলের উপর নির্দিষ্ট হারে রাজস্ব ধার্য করার রীতি। সুলতান আলাউদ্দিন ও শেরশাহ জমির জরিপ ব্যবস্থার পক্ষপাতী ছিলেন।

খারাজের হার

সুলতানি আমলে ভূমি রাজস্ব সাধারণত উৎপন্ন ফসলর ১/৫ অংশ হারে ধার্য করা হতো। তবে কোনো কোনো সময় এর তারতম্য ঘটে। যেমন সুলতান আলাউদ্দিন মোঙ্গল আক্রমণ মোকাবেলা করার জন্য উৎপাদিত ফসলের ১/২ অংশ রাজস্ব ধার্য করেন। সুলতান মুহম্মদ-বিন-তুঘলক দোয়াব অঞ্চল থেকে ৫ ভাগের জায়গায় ১০ ভাগ রাজস্ব আদায় করেন। শেরশাহের শাসনামলে ১/৩ অংশ ভূমি রাজস্ব ধার্য করা হয়।

ভূমি রাজস্ব বা খারাজ আদায়ের পদ্ধতি

রাষ্ট্র ও কৃষকদের পারস্পরিক স্বার্থে ভূমির রাজস্ব ফসলের মাধ্যমে অথবা নগদ অর্থে অথবা অর্ধেক ফসলের মাধ্যমে ও অর্ধেক নগদ অর্থে পরিশোধের রীতি প্রচলিত ছিল।

Related Posts