ইসলামি রাজস্ব ব্যবস্থায় গনিমত হল রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত।
গনিমতের পরিচয়
গনিমত আরবি শব্দ। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো booty। আভিধানিক অর্থে গনিমত বলতে ধনদৌলতকে বুঝায়। পারিভাষিক অর্থে, যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত সৈন্যদের নিকট থেকে যে ধনসম্পদ বিজয়ী সৈন্যদের হস্তগত হয়, তাকে গনিমত বলা হয়। ইতিহাসে ব্যবহারিক অর্থে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের নিকট থেকে প্রাপ্ত মালকে গনিমত বলে। মোটকথা, যুদ্ধে পরাজিত শত্রুর নিকট থেকে সংগৃহীত সমুদয় অস্থাবর সম্পদই হলো গনিমত।
গনিমত বণ্টননীতি
শাসনকালের ভিন্নতার জন্য গনিমত বণ্টননীতিতেও কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) সমুদয় গনিমতকে দুই ভাগ করে ১/৫ অংশ তার নিজের তথা রাষ্ট্রের জন্য রেখে অবশিষ্ট ৪/৫ অংশ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈন্যদের মাঝে বণ্টন করেন। এক্ষেত্রে অশ্বারোহী সৈন্য পদাতিক সৈন্যের তিনগুণ লাভ করতো। ১/৫ অংশ যা জমা হতো তা মহানবী (সা.)-এর পরিবার, আত্মীয়, অনাথ ও আল্লাহর পথে ভ্রমণকারী এবং রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য ব্যয় করা হতো।
আরও পড়ুন: যাকাত কি? যাকাত আদায়ের উৎস সমূহ কি কি?
খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলেও রাসূল (সা.)-এর প্রবর্তিত নীতি অনুসরণ করা হয়। তবে খুমুস বা ১/৫ অংশে মহানবী (সা.)-এর আত্মীয়-স্বজনের অংশ কাউকে না দিয়ে সামরিক বাহিনীর সাজ-সরঞ্জাম ও উন্নতিতে ব্যয় করা হয়।
উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলেও খোলাফায়ে রাশেদীনের খলিফাদের নীতি অবলম্বন করলেও খুমুস অংশটি মক্কা ও মদিনায় মহানবী (সা.)-এর আত্মীয়দের মাঝে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়।
গনিমত বণ্টনে আমূল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় সুলতানি আমলে। গণিমত বণ্টনের পূর্বে সুলতান কিংবা প্রধান সেনাপতি কোনো কিছু পছন্দ করলে তা গ্রহণ করতে পারতেন। যা সাকিয়াহ নামে পরিচিত এবং বণ্টনের সময় তা বিবেচনা করা হতো না। গণিমত বণ্টনের চিরাচরিত ৪/৫ অংশ সৈন্যবাহিনীর মাঝে বন্টনের নীতিও এ সময় পরিবর্তন হয়। এক্ষেত্রে ১/৫ অংশ সৈন্যদের মাঝে বণ্টন করে ৪/৫ অংশ রাষ্ট্রীয় তহবিলে জমা করা হয়। তবে ধর্মপ্রাণ সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক উলামাদের পরামর্শক্রমে পূর্ব নীতি পুনঃপ্রবর্তন করেন।
পরিশেষে বলা যায়, গণিমত একটি যুদ্ধলব্ধ সম্পদ যা বীর সৈন্যদের সামরিক বিজয়ের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। তাই এর প্রকৃত হকদার সৈনিকরাই। তবে গনিমতের অভিন্ন নীতি সুলতানি আমলে পরিবর্তন ঘটলেও সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক পুনরায় তা স্থাপন করেন।