যুগান্তকারী ফরাসি বিপ্লবের পশ্চাতে বহুদিনের পুঞ্জীভূত সামাজিক বৈষম্য, শোষণ ও নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ক্রিয়া করেছিল। ১৭৮৯ সালে সংঘটিত এই বিপ্লব সর্বাত্মক রাজশক্তির স্থলে জনসাধারণের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে।
ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ
ফরাসি বিপ্লবের অনেকগুলো কারণ থাকলেও রাজনৈতিক কারণ তার মধ্যে অন্যতম। নিম্নে ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণসমূহ আলোচনা করা হল-
১। রাজতন্ত্রের সংকট
আঠারো শতকে ফ্রান্স ছিল অকর্মণ্য রাজা পঞ্চদশ লুই, রাজপ্রতিনিধি ডিউক অব অর্লিয়েন্স, মাদাম দ্য পম্পাদ্যুর ও দুর্বলচেতা ষোড়শ লুইয়ের দ্বারা শাসিত এক পতনমুখী রাষ্ট্র।
আরও পড়ুন: ফরাসি বিপ্লব বলতে কি বুঝ? ফরাসি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর
২। ঈশ্বর প্রদত্ত রাজশক্তিতে বিশ্বাসী রাজতন্ত্র
ফরাসি রাজা ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল হয়ে নিজের স্বৈরাচারী শাসনের বৈধতা দিতেন। সেখানে জনমতে কোন স্থান ছিল না।
৩। রাজার স্বেচ্ছাচারিতা
বিপ্লবপূর্ব ফ্রান্সে রাজা ছিলেন একাধারে শাসক, বিচারক, আইন প্রণেতা ও জনগণের ভাগ্য বিধাতা। রাজা চতুর্দশ লুই সদর্পে বলতেন ‘আমিই রাষ্ট্র’। ষোড়শ লুই বলতেন, ‘আমার ইচ্ছাই আইন’।
৪। সামরিক মর্যাদা ও প্রাধান্য হ্রাস
আঠারো শতকের শুরুর দিকে স্পেনীয় উত্তরাধিকার যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজয় হয় এবং ইউটেক্ট সন্ধি দ্বারা সামুদ্রিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপিত হয়। এই সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে ফ্রান্সের সামরিক মর্যাদা ও প্রাধান্য হ্রাস পায়।
৫। দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন
ফরাসি রাজতন্ত্রে স্বার্থবাদী আমলারা প্রশাসনের সকল ক্ষমতা কায়েম করে স্বৈরাচারী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। অকর্মণ্য রাজা পঞ্চদশ লুই এসব স্বার্থবাদী আমলাদের নিবৃত্ত না করে বরং এদের প্ররোচনায় জনহিতৈষী মন্ত্রী ও আমলাদের পদচ্যুত করেন।
৬। দুর্নীতিগ্রস্ত বিচার ব্যবস্থা
তৎকালে ফ্রান্সে বংশানুক্রমে যারা বিচারকের পদ লাভ করতেন তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সর্বদাই ব্যস্ত থাকতেন। ন্যায়-অন্যায়ের তোয়াক্কা না করে অন্যায়ভাবে জরিমানা আরোপ করে নিজেদের আয়ের পথ সুগম করতেন। আইনের চোখে সকল সম্প্রদায়ের লোক সমান মর্যাদা পেত না।
৭। ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ
রাজা ষোড়শ লুই অভিজাত শ্রেণীর ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছিলেন। ফলে রাজসভার যেকোনো সদস্য কর্তৃক ব্যক্তিগত শত্রুকে দমন করার উদ্দেশ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা রাজার দ্বারা সই করিয়ে নিয়ে ব্যক্তিগত হিংসা-বিদ্বেষকে চরিতার্থ করার জন্য যে কাউকে আটকে রাখা, বিনা বিচারে কারারুদ্ধ করা প্রভৃতি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর ফলে বাস্তিল দুর্গ নিরপরাধ ব্যক্তিদের কারাগারে পরিণত হয়েছিল।