অনুপ্রাস কী?
অনুপ্রাস শব্দের অর্থ রসাদির অনুগত প্রাস। অর্থাৎ প্রকৃষ্টরূপে বর্ণপ্রয়োগ বা ন্যাস।
আবার, ‘অনু’ মানে পশ্চাৎ, আর ‘প্রাস’ অর্থ নিক্ষেপ বা প্রয়োগ। সুতরাং, একটি বর্ণের পশ্চাৎ আর ঐ বর্ণের পুনরায় প্রয়োগই হলো ‘অনুপ্রাস’।
এটাকে আরও সহজভাবে বলা যায়, একই বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ যদি পৃথক কিংবা যুক্তভাবে কাব্যে পুনঃপুনঃ ধ্বনিত হয়, তাকেই বলা হয় অনুপ্রাস। অর্থাৎ, এখানে থাকবে বর্ণসাম্য বা বর্ণ সাদৃশ্য। এজন্যই বলা হয়েছে, সদৃশ বর্ণবিন্যাস বা বর্ণের সমতািই হলো অনুপ্রাস।
তবে এটাও ঠিক যে, একটি স্বরের বারবার উচ্চারণ ঘটলে কিংবা পুনরাবৃত্তি হলে তাতে যদি কোনরূপ ধ্বনিগত বৈচিত্র্য না থাকে তাহলে সেটি অনুপ্রাস হয় না। এজন্যই অনুপ্রাসে দু’টি শব্দের বর্ণ সাম্য বা বর্ণ সাদৃশ্য রক্ষা করা উচিত।
আরও পড়ুন: বংস সাহিত্য বলতে কি বুঝ? বংস সাহিত্যের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলোচনা কর
অনুপ্রাসের প্রকারভেদ
অনুপ্রাস দুই প্রকার। যথা-
১। ছেকানুপ্রাস
২। বৃত্ত্যনুপ্রাস
এই দু’টি অলঙ্কারের নাম উল্লেখ করেন আলঙ্কারিক উদ্ভট। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১। ছেকানুপ্রাস
দুই কিংবা তার ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি যদি যুক্ত বা অযুক্তভাবে ক্রমানুসারে দু’বার মাত্র পুনঃপুনঃ ধ্বনিত হয়, তাকে বলা হয় ছেকানুপ্রাস। এটাকে একানুপ্রাসও বলা হয়। কবি কৃষ্ণ শর্মা ছেকানুপ্রাসের দুটি লক্ষণের কথা বলেছেন।
২। বৃত্ত্যনুপ্রাস
বৃত্তিঘটিত যেই অনুপ্রাস তাকে বলা হয় বৃত্ত্যনুপ্রাস। এখানে বৃত্তি শব্দের অর্থ ‘রসব্যঞ্জক বর্ণরচনা’। বৃত্ত্যনুপ্রাসের বৃত্তি তিন প্রকার। যথা- পরুষা, উপনাগরিতা ও গ্রাম্যা। পরুষানুপ্রাস আচার্যদন্ডী ও ভামহ কর্তৃক উল্লেখিত না হলেও আলঙ্কারিক উদ্ভট তা সংযোজন করেছেন। ইংরেজিতে এটাকে Crud-rude বলা হয়। অন্যদিকে উপনাগরিকানুপ্রাস নামে বৃত্ত্যনুপ্রাসে যে অনুপ্রাসের নাম উচ্চারিত হয়েছে তাও সকল আলঙ্কারিক ও কবিগণ উল্লেখ করেননি। প্রাসঙ্গিকক্রমে বলা যায় যে, ভামহ উপনাগরিকানুপ্রাস নামে কোন অনুপ্রাসের নাম উল্লেখ করেননি। তবে তিনি যে ‘ন্ত’ এর উদাহরণ দিয়েছেন তার সঙ্গে উদ্ভট এর ‘ন্দ’ এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।