সুষ্ঠু পরিকল্পনার উপর কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভরশীল। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। সাধারণতঃ কতগুলো ধাপ অতিক্রম করে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গঠিত হয়ে থাকে। নিম্নে পরিকল্পনা গঠনের পদ্ধতি বা স্তরগুলো আলোচনা করা হলো-
১। পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ গঠন
উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কর্তৃপক্ষের হাতে পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব ন্যাস্ত করা হয় বলে প্রথমে একটি পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। যেমন- বাংলাদেশের পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব পরিকল্পনা কমিশনের উপর ন্যাস্ত করা হয়েছে।
২। তথ্য সংগ্রহ
বিভিন্ন প্রকার উপকরণ, অধিবাসীদের জীবনযাপন প্রণালী, মূলধনজাতীয় দ্রব্য, মানব সম্পদ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষের হাতে না থাকলে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না। তাই পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ গঠনের পর এ পর্যায়ে দেশের বর্তমান ও সম্ভাব্য সমস্ত উপকরণ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে হয়।
৩। উদ্দেশ্য নির্ধারণ
উদ্দেশ্য বিহীন কোন পরিকল্পনা হতে পারে না। কিন্তু পরিকল্পনার উদ্দেশ্য দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল। তাই আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে এ পর্যায়ে পরিকল্পনার কতগুলো উদ্দেশ্য স্থির করতে হয়।
আরও পড়ুন: ধনতান্ত্রিক পরিকল্পনা ও সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনার মধ্যে পার্থক্য
৪। লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ
পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অত্যধিক হলে তা অর্জন করা সম্ভবপর হবে না। আবার লক্ষ্যমাত্রা কম ধার্য করা হলে দেশের উৎপাদন শক্তির পূর্ণতম ব্যবহার করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই এ স্তরে সাধারণ উদ্দেশ্যবলীর আলোকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে।
৫। অগ্রাধিকার প্রকল্প নির্ণয়
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে খাত বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম সে খাতকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা অপরিহার্য। তাই বিভিন্ন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের পর পরই পরিকল্পনার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ প্রধান প্রধান খাতগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিকল্পনা কমিশনকে কোন খাত বা পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে তা এ পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হয়।
৬। পরিকল্পনার আয়তন নির্ধারণ
প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান ছাড়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়। তাই পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থের কথা বিবেচনা করে পরিকল্পনার আয়তন নির্ধারণ করতে হবে। তাছাড়া পরিকল্পনার আয়তন নির্ধারণের সময় চাহিদা ও সম্পদের পরিমাণও যথেষ্ট সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা বাঞ্চনীয়।
৭। অর্থসংস্থান
আভ্যন্তরীণ সম্পদের উপর ভিত্তি করে পরিকল্পনার অর্থসংস্থান করা অপরিহার্য। তবে আভ্যন্তরীণ উৎস পরিকল্পনার ব্যয় নির্বাহের জন্য অপর্যাপ্ত হলে বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের উপর নির্ভর করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। তাই আভ্যন্তরীণ উৎস এবং বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ হতে কি পরিাণ অর্থ পাওয়া যাবে তার উপর ভিত্তি করে পরিকল্পনার অর্থসংস্থান করা হয়ে থাকে।
৮। বিস্তারিত কর্মসূচী প্রণয়ন
পরিকল্পনা প্রণয়নের সর্বশেষ পর্যায় হলো বিস্তারিত কর্মসূচী প্রণয়ন। এ পর্যায়ে পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে সকল প্রকল্প ও কর্মসূচী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়। অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি খাতে কোন কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়, সম্পদ ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিত উল্লেখ পূর্বক এ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়।
৯। প্রকল্প মূল্যায়ন
প্রতিটি প্রকল্পের সঠিক ও বস্তুনিষ্ট মূল্যায়ন ছাড়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অসম্ভব। তাই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কালে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সেটার অগ্রগতি পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরোল্লিখিত পদক্ষেপগুলো পর্যায়ক্রমে সম্পাদনের মাধ্যমে পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষকে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। নচেৎ গৃহীত পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভবপর হবে না।