পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিন পার্বত্য জেলা নিয়েই পার্বত্য চট্টগ্রাম। এই অঞ্চলে বাস করে ১৪ টা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী যারা নিজেদের একত্রে ‘জুম্ম’, ’পাহাড়ি’ এবং ‘আদিবাসী’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। সুদীর্ঘকাল থেকে তারা এই অঞ্চলে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক ঐতিহ্য নিয়ে বসবাস করে আসছে। ডিয়োগো ডি এস্টোর (১৫৯৩-১৬১২) নামে এক পর্তুগীজ কর্তৃক ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত মানচিত্রে এই অঞ্চলকে “চাকোমাস” নামে অভিহিত করা হয়। ধারণা করা হয়, তখনকার চাকমা রাজ্যকে বোঝাতে পর্তুগীজ মানচিত্রাকার এই শব্দটি ব্যবহার করেন। এটি কর্ণফুলী নদীর উজানে এবং ‘চাটিগাম’ নামের অঞ্চলের উত্তর দিকে অবস্থিত।
ব্রিটিশ আমলেও এই অঞ্চলটি কার্যত স্বায়ত্তশাসিত ছিল। পরে ১৯০০ সালের রেগুলেশন অ্যাক্ট দ্বারা “এক্সক্লুডেড এরিয়া” হিসেবে এই অঞ্চলের স্বতন্ত্রতা রক্ষা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে ফজলুল কাদের চৌধুরী এক আইনের বলে এই সংরক্ষিত এলাকার মর্যাদা তুলে নেন। ১৯৬৩ সালে রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের অনুপস্থিতির সুযোগে মন্ত্রীসভার সভাপতিত্ব করার একদিনের ক্ষমতাবলে তিনি এই কাজ করেন, ঠিক যেভাবে কুমিল্লায় স্থাপিত হতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে স্থাপন করেন ঐ একদিনের ক্ষমতাবলে। পরে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নিজেদের স্বকীয়তা বজায়ের লক্ষ্যে প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলে। সময়ের সাথে সাথে এই দাবি আরো জোরালো হয়।
চিন্তাবিদরা পাহাড়িদের প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন চাওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেন। এগুলো হলো-
১) ষাটের দশকে কাপ্তাইতে কর্ণফুলী নদীর উপরে কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই বাঁধের ফলে পাহাড়ি এলাকার ৪০% আবাদী উর্বর জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রায় ১,০০,০০০ পাহাড়ি উক্ত বাঁধের ফলে বসতি হারিয়ে শরণার্থী হয়ে ভারতে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হয়।
২) কর্ণফুলী পেপার মিল স্থাপনকালে অনেক পাহাড়ি মালিকানাধীন জমি জোরপূর্বক দখল করা হয়। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত পাহড়িদের তেমন কোনো ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়নি।
উক্ত দুটি প্রকল্প এই অঞ্চলের পাহাড়িদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভের সঞ্চার করে।
৩) উপরোক্ত দুটো প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বিভিন্ন পদে পাহাড়িদের নিয়োগের বদলে বাঙালিদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে পুরো পাহাড়িদের মাঝে অসেন্তোষ বাড়তে থাকে।
৪) উপরোক্ত প্রকল্প দুটিতে ব্যাপক হারে বাঙালিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ফলে বাঙালিরা এসব জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। আস্তে আস্তে বাঙালিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এতে পাহাড়িদের ভূমি বাঙালিদের দখলে আসতে থাকে এবং বাঙালিরা পাহাড়ি অঞ্চলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ হতে থাকে। ফলে পাহাড়িরা এ অবস্থাকে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের জন্য বিরাট হুমকিস্বরুপ বলে অভিহিত করে এবং তাদের সাথে বাঙালিদের ছোট-খাট সংগাত শুরু হয়। এ অবস্থা পাহাড়িদের অসহিষ্ণু করে তোলে।
৫) পাকিস্তান আমলে এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে পাহাড়ি জমি ব্যাপক হারে সরকারিভাবে বাঙালিদের বরাদ্দ দেয়া হয়। ফলে পাহাড়িদের মালিকানাধীন অনেক জমি বাঙালিদের দখলে চলে যায়।
৬) স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব রাঙ্গামাটিতে এক ভাষণে পাহাড়িদের ‘বাঙালি’ হয়ে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর পাহাড়িদের মনে অস্তিত্ব হারানোর ভয় আরও প্রকট হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদের বিকাশের কারণ:
বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদ বিকাশের কারণ হিসেবে নিম্নোক্ত কারণগুলোকে চিহ্নিত করেছেন-
১) কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ ও অর্থনৈতিক সংকট
২) কর্ণফুলী পেপার মিল স্থাপন ও জমি দখল
৩) ক্ষতিপূরণ প্রদানে দূর্নীতি
৪) বিভিন্ন প্রকল্পে অপাহাড়ি বাঙালি নিয়োগ দান
৫) পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালিদের স্থায়ী বসবাস
৬) পাহাড়ি জমির মালিকানা সরকারিভাবে বাঙালিদের প্রদান
৭) রিজার্ভ ফরেস্ট ও জুম চাষ নিষিদ্ধ
৮) ব্যবসা-বাণিজ্যে বাঙালি আধিপত্য
৯) নৃতাত্ত্বিক পরিচয় মুছে বাঙালি হওয়ার আহ্বান
১০) পাহাড়িদের শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ
ফলাফল:
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত উপরোক্ত কারণসমূহ পাহাড়িদের মনে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে ১৫ই ফেব্রুয়ারি একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন এবং ৪ দফা দাবি পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের বাঙালি হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান এবং রাঙ্গামাটি গিয়েও এক বক্তৃতায় একই ঘোষণা দেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৭২ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ গঠন করা হয়। ১৯৭৩ সালে জনসংহতি এই সিদ্ধান্তে আসে যে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে তারা নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দাবি আদায় করতে পারবে না। এ অবস্থায় পাহাড়ি অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে ৭ই জানুয়ারি পাহড়ি যুবক-তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত হয় জনসংহতি সমিতির গোপন স্বশস্ত্র সংগঠন- ‘শান্তিবাহিনী’। তারপরও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় স্বশস্ত্র কার্যক্রম স্থগিত রাখে শান্তিবাহিনী। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই আশা গুড়াবালি হয়। শান্তিবাহিনী সামরিক সরকারকে চাপ দেয়ার জন্য তাদের স্বশস্ত্র কার্যক্রম শুরু করে। এবং বাঙালি সেনাবাহিনীর সাথে শুরু হয় নৃতাত্ত্বিক সংঘর্ষ।
আরও পড়ুন: সুশাসনের জন্য গণতন্ত্র কি অত্যাবশ্যকীয়?
সমস্যা সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপ:
১) জিয়াউর রহমান সরকার (১৯৭৫-১৯৮১):
১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন শুরু হওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি ক্যান্টনমেন্টকে বড় করা হয়, থানার সংখ্যা ১২ থেকে ২২ টিতে উন্নীত করা হয়। এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা সমাধানকল্পে ১৯৭৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছে আরেকবার দাবিনামা পেশ করা হয়। কিন্তু সে দাবি কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলে ১৯৭৭ সালে শান্তিবাহিনী মিলিটারি কনভয় এর উপর হামলা চালায়। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হয় অঘোষিত যুদ্ধ। জিয়া সরকার সেনাবাহিনী নামিয়ে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উক্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালায়। উপরন্তু দেশের নদী-ভাঙা, চরাঞ্চল থেকে উদ্ভাস্তু ৪ লক্ষ বাঙালিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়। তাদের পাহাড়ি জমিগুলোতে জোরপূর্বক বসতি স্থাপন করা হয়। এসব নিরীহ অসহায় বাঙালিদের মূলত সেনাবাহিনীর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জিয়া সরকার। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃতাত্ত্বিক সংকট আরো জটিল আকার ধারণ করে। সেনাবাহিনী ও শান্তিবাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণ হারায় অনেক নিরীহ পাহাড়ি-বাঙালি।
২) এরশাদ সরকার (১৯৮১-১৯৯০):
এরশাদ সরকারের আমলে অনেক প্রশাসনিক ও বিধানিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ১৯৮৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাকে ভেঙে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ও বান্দরবান এই তিন জেলা গঠনের প্রস্তাব সংসদে পাশ করা হয়। এই প্রস্তাবে বলা হয়, তিনটি প্রশাসনিক পরিষদ পরিচালিত হবে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা। সে অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের ১৫ ই জুন তিনটি জেলায় District Council এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে সেনাবাহিনী ক্ষমতা প্রয়োগে নিজেদের পছন্দসই প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে। শান্তিবাহিনী উক্ত নির্বাচন তথা জেলা পরিষদ গঠনকেই প্রত্যাখ্যান করে। এবং আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে শান্তিবাহিনী।
৩) বিএনপি সরকার (১৯৯১-১৯৯৬):
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর যোগাযোগ মন্ত্রী অলি আহমেদের নেতৃত্বে একটি পার্লামেন্টারি কমিটি পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসমূহের সমস্যা স্বীকার করে নেয়। এবং তার সমাধান কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। তারই অংশ হিসেবে পাহাড়ি জনগণ ও ভারতের ত্রিপুরায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণকারী পাহাড়িদের সাথে মুক্ত আলোচনা চালায়। এই ধারাবাহিকতায় শরণার্থীদের প্রত্যাগমনের জন্য এক চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং ১৯৯৪ সাল থেকে শরণার্থীরা ফিরে আসতে শুরু করে। পাশাপাশি সমম্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে জনসংহতি সমিতিরি চেয়ারম্যান সন্তু লারমার সাথে আলোচনা চালায় সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।
৪) আওয়ামী লীগ সরকার (১৯৯৬-২০০১):
আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিভিন্ন ইস্যুতে শান্তিবাহিনীর সাথে আলোচনা জোরদার করে। ফলশ্রুতিতে শান্তিবাহিনী এবং বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর এক চুক্তিতে উপনীত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী শান্তিবাহিনীর গেরিলারা অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। এবং সরকারের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৬টি মূল ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া অপর সকল সামরিক ক্যাম্প সরিয়ে একটি বেসামরিক প্রশাসনের গড়ে তোলার শর্ত দেয়া হয়।
পার্বত্য চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়-
১) শান্তি বাহিনী অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা এবং সরকার তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
২) পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সৃষ্টি এবং সন্তু লারমাকে তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা।
৩) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন এবং একজন পাহাড়ি নেতাকে দায়িত্বভার অর্পণ।তিনি পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করবেন।
৪) পার্বত্য চট্টগ্রামে সিভিল প্রশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছয়টি সেনানিবাস ব্যতীত অন্যান্য অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার।
পার্বত্য চুক্তি পরবর্তী অবস্থা:
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে তখনকার সময়ে ‘শান্তি চুক্তি’ নামে অভিহিত করা হলেও কার্যত শান্তি এই অঞ্চলে ফেরেনি। চুক্তির পর ২৩ বছর পার হলেও, চুক্তি সম্পাদনকারি আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেও পূর্ণ চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। সরকার চুক্তির ৭২ টি ধারার মধ্যে ৪৮ টি ধারা বাস্তবায়নের দাবি করলেও চুক্তি সম্পাদনকারি অন্য পক্ষ জেএসএস এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয় চুক্তির মূল ধারাগুলোই বাস্তাবায়ন করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বেসামরিক প্রশাসনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ছয়টি ক্যান্টনমেন্ট রেখে বাকি ক্যাম্পগুলো সরকার প্রত্যাহার করেনি। উপরন্তু নতুন নতুন ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়েছে। মূলত চুক্তির দুর্বল দিকটি কাজে লাগিয়েই সরকার এটা করতে পারছে বলে আরেকটি দল ‘ইউপিডিএফ’ এর দাবি। দলটি শান্তিবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে সংগাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে গঠিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী চুক্তি সম্পাদনের ৪৫ দিনের মধ্যে শান্তিবাহিনীর অস্ত্র জমাদানের কথা উল্লেখ থাকলেও সরকার কবে নাগাদ সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করবেন তা উল্লেখ না থাকায় সরকার এমনটা করতে পারছে বলে ইউপিডিএফ এর অভিযোগ। ফলে যে লক্ষ্য নিয়ে চুক্তি সম্পাদন তার পূর্ণ লক্ষ্য অর্জন হয়নি বলে অনেকের অভিমত। যদিও এই চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান নৃতাত্ত্বিক সংঘাতের কিছুটা রাশ টানা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সংঘাত নিরসনের জন্য এখনও অনেক পথ বাকি।