সকল রাষ্ট্র তাদের মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের জন্য নানা প্রকার নীতি গ্রহণ করেন। নীতি হল যে কোন পরিকল্পনা বা কর্মসূচীকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পরিচালিত করার জন্য এবং নিয়ন্ত্রণ করার ভিত্তি। নীতিবিহীন পরিকল্পনা ও কর্মসূচী সমাজে দীর্ঘমেয়াদী কল্যাণ আনতে পারে না। তাই বর্তমান বিশ্বের যে কোন শাসন ব্যবস্থায় নীতি নির্ধারণ সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ। সরকার যে সব আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যাদি সম্পন্ন করে, তা সরকারি নীতির মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
সরকারি নীতি
Dimock এর মতে, ‘সরকারি সিদ্ধান্তকে পরিচালিত করার জন্য স্বীকৃত আচরণের নিয়মকেই নীতি বলে।’
Thomas R. Dye এর মতে, “Public Policy is whatever government chooses to do or not to do.”
মোটকথা, সরকারি নীতি বা জননীতি হল জনগণের জন্য সরকার কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণীত ন্যায় সঙ্গত, সুনিয়ন্ত্রিত ও সুপরিকল্পিত কার্যব্যবস্থা যা সরকার ও জনগণকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এক কথায় বলা যায়, বর্তমানের আলোকে এবং ভবিষ্যতকে সামনে রেখে সরকারিভাবে যে পদ্ধতি প্রণয়ন বা নির্ধারণ করা হয় তাকে সরকারি নীতি বলে।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে সরকারি নীতির নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ পাওয়া যায়। যথা-
- সরকারি নীতি সরকার কর্তৃক প্রণীত হয়।
- এটা উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাঝামাঝি পদক্ষেপ।
- নীতির সাথে বহুরকমের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনার প্রশ্ন জড়িত থাকে।
- নীতি প্রণীত হয় দীর্ঘমেয়াদী ও সুদূর প্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে।
- এটা তথ্য নির্ভর ও এর একটা ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া
৫। নীতি মূল্যায়ন:- এই পর্যায়ে কর্মসূচী বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা হয়।
নীতি প্রণয়নে আমলাদের ভূমিকা
সরকারি নীতি অনেকাংশেই জটিল ও প্রযুক্তি বিদ্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আইনসভার সদস্যরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপেশাদার। সে কারণে ক্রমবর্ধমান হারে বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে থাকে। নিম্নে চিত্রের মাধ্যমে নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া তুলে ধরা হল:-
চিত্র: নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া |
সরকারি নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমলাদের ভূমিকা নিম্নে আলোচনা করা হল-
১) প্রশাসনিক নীতি নির্ধারণে আমলা
২) তথ্য সংগ্রহ ও পরামর্শ প্রদান
৩) সংসদীয় নীতি নির্ধারণে আমলা
- আইনের খসড়া প্রণয়ন: আইনের খসড়া বিল প্রণয়ন একটি জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমলারা প্রস্তাবিত খসড়া প্রস্তাব থেকে শুরু করে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগের সাথে আলাপ-আলোচনা এবং তাদের সাথে ঐক্যমত্যে পৌঁছান, কেবিনেটের অনুমোদন নেওয়া এবং চূড়ান্ত খসড়া বিলে যে সমস্ত বিষয়াদি অন্তর্ভূক্তির প্রয়োজন, তার কারণসসহ বিশদ বিবরণ দিয়ে সংশ্লিষ্ট কাজপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইত্যাদি সকল কাজ আমলাদের করতে হয়।
- আইন প্রণয়নে সংসদীয় পর্যায়: সংসদীয় পর্যায়ে বিলটি উপস্থাপনের দায়িত্ব মন্ত্রীর। সত্যিকার অর্থে যে কোন বিলের বিষয়াবলী নির্ধারণ করেন আমলাবৃন্দ। আমলারা সংসদীয় পর্যায়ে সরাসরি ভূমিকা পালন করতে পারেন না। আমলারা সংষদ অধিবেশন চলাকালে মন্ত্রীদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সরবরাহ করেন, আবার কখনো বা পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দেন যাতে মন্ত্রীদের কোন অসুবিধা না হয়।
- প্রস্তুতিমূলক স্তর: সচিবগণ তাদের স্ব স্ব বিভাগের ও মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় সব ব্যয় নির্ধারণ করে থাকেন ও যাচাই করে থাকেন। তারা স্ব স্ব মন্ত্রীদের সাথে আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ করে বাজেট পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করে থাকেন। প্রয়োজনীয় পর্যালোচনার পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। অর্থমন্ত্রণালয়ের আমলাগণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবিত বাজেটের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন কাজ সম্পাদন করেন। প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধনের পর বাজেটটি কেবিনেটে পাঠানো হয়। কেবিনেটে অনুমোদন লাভের পর বাজেটটি অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থাপন করেন। তাই বলা যায়, বাজেট প্রস্তুত করার পিছনে আমলাদের সর্বাধিক ভূমিকা থাকে।
- সংসদীয় স্তর: এই পর্যায়ে সংসদে উত্থাপিত বাজেটের প্রস্তাবিত আয়-ব্যয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। অর্থমন্ত্রীকে কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে তার মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য অফিসের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। মন্ত্রীদের এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমলাদের উপর নির্ভর করতে হয়। সুতরাং দেখা যায় যে, নীতি বাস্তবায়নে আমলারা কার্যকর ভূমিকা পালন করে।