বেঙ্গল প্যাক্ট কি ?
বেঙ্গল প্যাক্ট একটি চুক্তি যা ১৯২৩ সালে সম্পাদিত হয়। একে বাংলা চুক্তিও বলা হয়। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতাদের মধ্যে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এ সমস্যা সমাধানকল্পে এগিয়ে আসেন। তিনি অনুভব করেন যে, বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দাবি অগ্রাহ্য করে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। তাছাড়া মুসলিম সম্প্রদায় চাকরি, আর্থিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। তাই তিনি মুসলমানদের সমর্থন ও হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য স্থাপনরে চেষ্টা করেন।
বাংলার মুসলিম নেতা এ. কে. ফজলুল হক, আব্দুল করিম এবং হোসেন শহীদ সৌহরাওয়ার্দী চিত্তরঞ্জন দাশের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। এবং এ নেতাদের উদ্যোগে বেঙ্গল প্যাক্ট বা বাংলা চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। বাংলা কংগ্রেসের নেতা সুভাষচন্দ্র বসু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি? সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কি বুঝ?
বেঙ্গল প্যাক্টের শর্তাবলি
বাংলায় হিন্দু-মুসলমানদের মিলনের জন্য একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ছিল বাংলা চুক্তি বা বেঙ্গল প্যাক্ট। এ চুক্তির শর্তাবলি নিম্নরূপ-
১। স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলার প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ অধিকার পাবে এবং লোকসংখ্যার অনুপাতে ও স্বতন্ত্র নির্বাচন প্রথায় আইন পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।
২। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে প্রত্যেক জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় শতকরা ৬০টি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শতকরা ৪০ টি আসন লাভ করবে।
৩। মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য সরকারি দপ্তরগুলোতে শতকরা ৫৫ ভাগ চাকরি সংরক্ষিত থাকবে।
৪। যদি কোনো সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে আইন পাস করতে চায়, তাহলে আইনসভায় নির্বাচিত উক্ত সম্প্রদায়ের তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের সম্মতিক্রমে তা করতে হবে।
৫। মসজিদের সামনে গান-বাজনাসহকারে মিছিল করা নিষেধ এবং গরু জবাই করার ব্যাপারে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করা হবে না।
বেঙ্গল প্যাক্ট বা বাংলা চুক্তির গুরুত্ব
বাংলার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলা চুক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ চুক্তি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এ চুক্তির ফলে স্বরাজ দল অবিভক্ত বাংলার আইন পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম আসনে ২১টি এবং হিন্দু এলাকায় ৩৬টি আসন লাভ করে। এছাড়া পরের বছর কলকাতা করপোরেশনের নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে।
নির্বাচনের ফলাফল অনুসারে লর্ড লিটন চিত্তরঞ্জন দাশকে মন্ত্রিসভা গঠন করার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু লিটনের আমন্ত্রণ তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। কেননা তিনি ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের দ্বৈতশাসন ব্যবস্থাকে অচল করতে চেয়েছিলেন। এ চুক্তি বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সচেতন করে। বাংলার মুসলিম সম্প্রদায় এতে লাভবান হয়। এ চুক্তি মুসলিম নেতৃত্বের বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। যার ফলে পরবর্তী সময়ে মুসলমানরা নিজেদের স্বতন্ত্র আবাসভূমির কথা চিন্তা করে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১। বেঙ্গল প্যাক্ট কত সালে সম্পাদিত হয়?
উত্তর: ১৯২৩ সালে।
২। বেঙ্গল প্যাক্ট কত সালে সম্পাদিত হয়?
উত্তর: দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ।
৩। বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পাদিত হয় কত সালে?
উত্তর ১৯২৩ সালে।