শিল্পের প্রকারভেদ
বর্তমানে শিল্পের আওতা এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যে একে সহজে বিন্যস্ত করা কষ্টসাধ্য। তথাপি ধারণা প্রদানের নিমিত্তে নিম্নে বিভিন্ন ধরনের শিল্প তথা শিল্পের প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো-
১. প্রাথমিক শিল্প
প্রকৃতি প্রদত্ত উপকরণ সরাসরি ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহের সকল প্রক্রিয়াকেই প্রাথমিক শিল্প বলে। জমিতে ফসল ফলানো, খনি থেকে সম্পদ উত্তোলন, বন থেকে কাঠ সংগ্রহ, হাঁস-মুরগি পালন সবই এই প্রাথমিক শিল্পের মধ্যে পড়ে। নিম্নোক্ত শিল্পসমূহ এর অন্তর্ভূক্ত:
ক) কৃষি শিল্প
কৃষিকাজের সাথে জড়িত শিল্পকে কৃষি শিল্প বলে। প্রকৃতি প্রদত্ত ভূমি বা উর্বর জমি, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, নদ-নদী ও ভূ-গর্ভস্থ পানি ইত্যাদি কৃষিকাজের মুখ্য অবলম্বন। এই শিল্প যেমনি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান দেয় তেমনি শিল্পীয় কাঁচামালের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই এই শিল্প থেকে আসে।
খ) প্রজনন শিল্প
অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে নির্বাচিত উদ্ভিদ ও প্রাণীর বংশ বিস্তারকরণ প্রচেষ্টাকে প্রজনন শিল্প বলে। নার্সারিতে সৃষ্ট চারা পরবর্তীতে গাছ বা ফলমূল উৎপাদন করে, পোলট্রি ফার্মে ডিম বা বাচ্চা উৎপাদিত হয়, হ্যাচারিতে মাছের পোনা উৎপাদিত হয় ইত্যাদি যার সব কিছুই পরবর্তী উৎপাদনের মাধ্যমে মানুষের প্রয়োজন পূরণ বা ভোগ উপযোগী পণ্যের সৃষ্টি করে থাকে।
আরও পড়ুন: শিল্পের বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি?
গ) নিষ্কাশন শিল্প
যে শিল্প প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ আহরণ বা সংগ্রহ করা হয় তাকে নিষ্কাশন শিল্প বলে। ভূগর্ভ হতে খনিজ সম্পদ সংগ্রহ, সমুদ্র বা নদ-নদী হতে মাছ ও জলজ সম্পদ সংগ্রহ, বন হতে কাঠ সংগ্রহ ইত্যাদি নিষ্কাশন শিল্পের আওতাভুক্ত।
২. উৎপাদন বা প্রস্তুত শিল্প
শ্রম ও যন্ত্রের সাহায্যে কাঁচামাল বা অর্ধপ্রস্তুত জিনিসকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্যে প্রস্তুত করার প্রক্রিয়াকে উৎপাদন বা প্রস্তুত শিল্প বলে। তুলা থেকে কাপড় ও বস্ত্র উৎপাদন, খনি থেকে আকরিক লৌহ ও এরপর ইস্পাত সামগ্রী উৎপাদন সবই এ শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতি অনুযায় এরূপ শিল্পকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক) বিশ্লেষণ শিল্প
একই পদার্থ হতে বিশ্লেষণ বা পৃথককরণের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী তৈরিকে বিশ্লেষণ শিল্প বলে। যেমন- খনিজ তৈল পরিশোধনের মাধ্যমে পেট্রোল, কেরোসিন, ডিজেল; খনিজ কয়লা হতে কোক কয়লা, ন্যাপথলিন, আলকাতরা ইত্যাদি এ শিল্পের মধ্যে পড়ে।
খ) যৌগিক শিল্প
যে শিল্পে পৃথক পৃথক পদার্থের সংমিশ্রণ করে নতুন দ্রব্য তৈরি করা হয় তাকে যৌগিক শিল্প বলে। যেমন- লৌহ আকরিক, কয়লা, ম্যাঙ্গানিজ, চুনাপাথর ইত্যাদি পদার্থ মিশিয়ে ইস্পাত তৈরি করা হয়। এছাড়া সিমেন্ট, সার, সাবান ইত্যাদি শিল্পও এ শিল্পের আওতায় পড়ে।
গ) প্রক্রিয়াভিত্তিক শিল্প
যে শিল্পে কাঁচামাল বিভিন্ন উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিণত পণ্যে রূপান্তরিত হয় তাকে প্রক্রিয়াভিত্তিক বা পর্যায়ভুক্ত শিল্প বলে। তুলা হতে বস্ত্র, আখ হতে চিনি উৎপাদন এ শিল্পের উদাহরণ।
ঘ) সংযোজন শিল্প
অন্য শিল্পে উৎপাদিত উপকরণ বা অংশবিশেষকে একত্রিত করে নতুন সামগ্রী উৎপাদন শিল্পকে সংযোজন শিল্প বলে। যেমন- বিমান, জাহাজ, মোটর গাড়ি ইত্যাদ্
৩. নির্মাণ শিল্প
শিল্পের প্রকারভেদ এর মধ্যে নির্মাণ শিল্প অন্যতম। যে শিল্প প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাস্তাঘাট, সেতু, বাঁধ, দালান-কোঠা ইত্যাদি নির্মাণ করা হয় তাকে নির্মাণ শিল্প বলে। ছোট থেকে বড় বিভিন্ন ধরনের নির্মাণে সাথে দেশী-বিদেশী নির্মাণ কোম্পানিসমূহ কাজ করে। যেমন- বাংলাদেশে পদ্মা সেতু, উড়াল সেতু, মেট্রোরেল ইত্যাদি।
৪. সেবা পরিবেশক শিল্প
যে শিল্প মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করার কাজে নিয়োজিত থাকে তাকে সেবা পরিবেশক শিল্প বলে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন ইত্যাদি সেবা সরবরাহকৃত প্রতিষ্ঠান এরূপ শিল্পের আওতাভুক্ত। সড়ক, নৌ ও বিমানপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবরহনে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসমূহও এ ধরনের শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। পর্যটন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি শিল্পও সেবা পরিবেশক শিল্প।