দ্বীন-ই-ইলাহী
দ্বীন-ই-ইলাহী সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত নতুন ধর্মমতের নাম। তিনি সিংহাসনে আরাহণ করে ভারতবর্ষের শাসনব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন। তার মধ্যে ধর্মীয় সংস্কার অর্থাৎ দ্বীন-ই-ইলাহীর প্রবর্তন ছিল অন্যতম। তবে এ সংস্কারের ফলে ভারত জুড়ে তীব্র সমালোচনা ঝড় উঠে।
সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল ভারতীয়দের একই রাজনৈতিক মঞ্চে একীভূত করতে এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য সব ধর্মের সারবস্তু নিয় আকবর ‘দ্বীন-ই-ইলাহী’ নামক নতুন ধর্মীয় মতবাদের প্রচলন করেন।
দ্বীন-ই-ইলাহী প্রবর্তনের উদ্দেশ্য
মুঘল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও পরধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা দূর করার উদ্দেশ্যে সম্রাট আকবর ১৫৮২ সালে ‘দ্বীন-ই-ইলাহী’ নামে নতুন এক ধর্মমতের প্রচলন করেন। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, “সকল ধর্মের উৎকৃষ্ট নীতিমালার সমন্বয়ে গঠিত এটি একটি সর্বেশ্বরবাদী ধর্ম।”
সম্পর্কিত আর্টিকেল
আকবরনামা গ্রন্থের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লিখ
আকবরের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা কেমন ছিল?
দ্বীন-ই-ইলাহীর নীতিমালা
আকবরের প্রবর্তিত নতুন এই ধর্মমতের নীতিমালা ছিল নিম্নরূপ-
১. সম্রাটের নামে সম্পদ, জীবন ও সম্মান উৎসর্গ করা।
২. কারো সাক্ষাৎ ঘটলে সালামের পরিবর্তে ‘আল্লাহু আকবর’ এবং প্রত্যুত্তরে ‘জাল্লা জালালুহু’ বলা।
৩. মৃত্যুর পূর্বেই পাথেয় সংগ্রহের জন্য ভোজের ব্যবস্থা করা।
৪. সভ্যগণকে নিজ নিজ জন্মবার্ষিকী পালন ও প্রীতিভোজের ব্যবস্থা করা।
৫. ভিক্ষা দেওয়া যাবে কিন্তু গ্রহণ করা যাবে না।
৬. মাংস ভক্ষণ থেকে বিরত থাকা।
৭. অগ্নিকে পবিত্র মনে করা।
৮. সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করা ইত্যাদি।
আকবর তার দীক্ষাগুরু বৈরাম খান ও কিছু অমাত্যবর্গের প্রভাবে ‘দ্বীন-ই-ইলাহী’ প্রবর্তন করলেও ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে তা দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং তা ব্যর্থ হয়। এ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮ জন।