কবুলিয়ত ও পাট্টা শব্দ দুটির বাংলা প্রতিশব্দ যথাক্রমে ‘অঙ্গীকারনামা’ ও ‘স্বীকৃতিপত্র’। শেরশাহ এ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। তিনি ভূমির উপর জনগণের তথা কৃষকদের স্বত্বকে স্বীকার করে নেন। যার নিদর্শন হিসেব কবুলিয়ত ও পাট্টা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।
কবুলিয়ত হলো কৃষকগণ জমির উপর তাদের অধিকার ও দায়িত্ব বর্ণনা করে সরকারকে যে অঙ্গীকারনামা প্রদান করতো তাকে বুঝায়। আর পাট্টা বলতে সরকার জমির উপর কৃষকদের স্বত্ব স্বীকার করে তাদের যে স্বীকৃতিপত্র প্রদান করতো তাকে বুঝায়।
কবুলিয়ত ও পাট্টা ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে অল্প সময়ের মধ্যে সরকারি আয়ের পরিমাণ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। রাজ্যের কৃষকরাও এর ফলে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভ করে। উভয় দলিলেই প্রজাদের বরাদ্দকৃত ভূমির দাগ ও পরিমাণ উল্লেখ করে দেওয়া হতো।
সম্পর্কিত বিষয়
শেরশাহের রাজস্ব সংস্কার সম্পর্কে আলোচনা কর
শের শাহ কে ছিলেন? তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান কী?
আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে লিখ
সমগ্র সাম্রাজ্যের ভূমি জরিপ করে ভূমির উর্বরা শক্তি অনুসারে গড়ে উৎপন্ন দ্রব্যের এক-তৃতীয়াংশ ভূমি রাজস্ব হিসেবে ধার্য করার নীতি গ্রহণ করা হয়। রাজস্বের পরিমাণ ভূমি থেকে উৎপাদিত ফসলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হতো বিধায় কৃষকদের তা প্রদানে কোনো অসুবিধা হতো না। প্রজারা ফসল বা নগদ অর্থে রাজস্ব পরিশোধ করতে পারত।
সম্রাট আকবরও শেরশাহের ভূমি সংষ্কার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। আকবরের রাজত্বকালের প্রথম বিশ বছর শেরশাহের রাজস্বনীতি অনুসৃত হয় এবং এর উপর নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশোধন ও সংযোজন করা হয়।
শেরশাহ সর্বপ্রথম জমির সঠিক পরিমাণ নির্ধারণের জন্য জমি জরিপের ব্যবস্থা করেন। আকবরও এ নীতি গ্রহণ করেন। তবে শেরশাহ রশির সাহায্যে জমির জরিপ করলেও আকবর সেখানে শক্ত বাশেঁর দণ্ডের ব্যবস্থা করেন। শেরশাহ উৎপাদিত ফসলের এক-তৃতীয়াংশ রাজস্ব নির্ধারণ করেছেন। আকবরের আমলে প্রথম দিকে এ নীতি গ্রহণ করা হলেও পরে জমির তারতম্য অনুসারে বিভিন্ন প্রকার জমির জন্য বিভিন্ন হার নির্ধারণ করেন।
সবশেষে বলা যায়, শেরশাহের প্রবর্তিত কবুলিয়ত ও পাট্টা রাজস্বনীতি মধ্যযুগের এক অনন্যকীর্তি; যা তাকে মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ শাসকের মর্যাদা এনে দিয়েছে। পাঁচ বছরেরও কম সময় ক্ষমতায় থেকে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের শাসনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধনে সক্ষম হয়েছিলেন।